ব্রিটিশ সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে মামলার বিচার চলছে, তা ‘মনগড়া ও অন্যায্য’ বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাজ্যের নামি আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, ন্যায্য বিচারের মৌলিক শর্তগুলো এখানে মানা হয়নি।
বিচারকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ আইনজীবীদের উদ্বেগ
একদল শীর্ষ ব্রিটিশ আইনজীবী বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার নিয়ে ‘গুরুতর’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এই বিচারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নয় এবং ন্যায়বিচারের মূল নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ডিসেম্বরের ১ তারিখে এ মামলার রায় ও অনুপস্থিতিতে সাজা ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগপক্ষ সর্বোচ্চ শাস্তি—আজীবন কারাদণ্ড—চেয়ে আবেদন করেছে।
আইনজীবীদের চিঠি: অভিযোগ জানানো হয়নি, আইনজীবীকে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে
ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, রবার্ট বাকল্যান্ড, ডমিনিক গ্রিভ, চেরি ব্লেয়ার, ফিলিপ স্যান্ডস ও জিওফ্রি রবার্টসনসহ খ্যাতনামা ব্রিটিশ আইনজীবীরা লন্ডনে বাংলাদেশি হাইকমিশনার আবিদা ইসলামের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেন—
• টিউলিপকে অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হয়নি
• তাকে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়নি
• বাংলাদেশে তার মনোনীত আইনজীবীকে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে
• আইনজীবীর মেয়েকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে
টিউলিপ সিদ্দিক: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ
টিউলিপ লেবার পার্টির সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। শেখ হাসিনা সম্প্রতি গত বছরের জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন।
টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি নাকি তার খালা শেখ হাসিনার মাধ্যমে মায়ের (শেখ রেহানা) জন্য ঢাকায় একটি জমি নেওয়ার প্রভাব খাটিয়েছেন।
টিউলিপ এসব অভিযোগ ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে জানিয়েছেন।
বৃহত্তর তদন্তের অংশ হিসেবে মামলা
এই মামলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি বড় তদন্তের অংশ। এতে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং আরও ১৭ জনের বিরুদ্ধে পুর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়—
• টিউলিপকে কোনো অভিযোগপত্র দেখানো হয়নি
• কোনো প্রমাণও তার কাছে উপস্থাপন করা হয়নি
ন্যায্য বিচারের নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ
চিঠিতে আইনজীবীরা বলেন—
ন্যায়বিচারের মৌলিক শর্ত হলো,
• অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ ও প্রমাণ জানবে
• দক্ষ আইনজীবী পাওয়ার সুযোগ থাকবে
• ভয় বা বাধা ছাড়াই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকবে
• রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বাধীন ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে
টিউলিপের ক্ষেত্রে এসব কিছুই মানা হয়নি বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
অনুপস্থিতিতে বিচার: যুক্তরাজ্যের ঠিকানায় যোগাযোগ না করা
আইনজীবীদের অভিযোগ—
বাংলাদেশে এমন কিছু ঠিকানায় নথি পাঠানো হয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে টিউলিপ কিছুই জানেন না। এগুলো তার বিরুদ্ধে অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
তারা বলেন—
• এটি কৃত্রিম ও মনগড়া প্রক্রিয়া
• টিউলিপ যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও সেখানেই বসবাস করেন, তাই তাকে পলাতক বলা যায় না
• তাকে সংসদ ভবনের ঠিকানায় সহজেই যোগাযোগ করা যায়
• প্রয়োজন হলে যুক্তরাজ্য থেকেই তাকে প্রত্যর্পণ করা সম্ভব
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান
চিঠিতে বলা হয়—
• প্রথমে অভিযোগগুলো টিউলিপ ও তার আইনজীবীর কাছে স্পষ্টভাবে জানানো হোক
• প্রমাণ উপস্থাপন করা হোক
• এরপর প্রকৃত মামলা থাকলে যথাযথ ও ন্যায়সঙ্গত উপায়ে বিচার এগিয়ে যাক
যুক্তরাজ্যে তদন্ত: টিউলিপ অভিযোগমুক্ত
‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানায়—
বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর ব্রিটেনে তদন্ত হয়। তাতে স্যার লরি ম্যাগনাস জানান যে টিউলিপ কোনো অনিয়ম করেননি।
তবে তিনি মন্তব্য করেন—পারিবারিক সম্পর্ক ও তার দায়িত্বের কারণে যে সুনামহানি হতে পারে, সে বিষয়ে টিউলিপ আরও সচেতন হলে ভালো হতো।
এই পরিস্থিতিতে টিউলিপ জানুয়ারি মাসে ট্রেজারি সংক্রান্ত তার সরকারি পদ ছাড়েন, কারণ বাংলাদেশের অভিযোগগুলো সরকার পরিচালনায় বাধা তৈরি করছিল।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















