আর্মি সচিব ড্যান ড্রিসকল মঙ্গলবার আবুধাবিতে রাশিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকটি দুই দেশের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে একটি বিরল আলোচনা, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বা অন্য কোন মার্কিন আলোচক উপস্থিত থাকবেন না।
রবিবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচিত শান্তি কাঠামোটি ড্রিসকল রাশিয়ানদের কাছে উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন এক সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা।
এটি ট্রাম্প প্রশাসনের যুদ্ধ বন্ধে সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সপ্তাহব্যাপী সফরের সবচেয়ে কঠিন পর্যায় হবে এই বৈঠক—যে সফরে তিনি কিয়েভ ও জেনেভা সফর করেছেন—কারণ তাকে এমন একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করতে হবে, যা বড় কূটনৈতিক ও সামরিক দল ছাড়াই তাকে সামনে এগিয়ে নিতে হচ্ছে।
দুইজন আলোচনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির মতে, ড্রিসকল যে পরিকল্পনাটি নিয়ে যাচ্ছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক ২৮ দফা প্রস্তাব থেকে কমিয়ে প্রায় ১৯-এ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে বাধ্য করার শর্তসহ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বসংক্রান্ত কয়েকটি সংবেদনশীল দাবি বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব চূড়ান্ত প্রশ্ন ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে জানায়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পুরো দল—সচিব রুবিও, বিশেষ দূত উইটকফসহ আরও অনেকে—গত ১০ মাস ধরে এই অর্থহীন ও বিধ্বংসী যুদ্ধের অবসানে একসঙ্গে কাজ করছে।”
পেন্টাগন প্রশ্নগুলো হোয়াইট হাউসের কাছে পাঠিয়ে দেয়। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি বলেন, ট্রাম্প “রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহে ড্রিসকলের প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন করেন, যাতে একটি স্থায়ী ও বাস্তবায়নযোগ্য শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত করা যায়।”
ড্রিসকল—যাকে ট্রাম্প তার সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন কর্মসূচির জন্য “ড্রোন গাই” হিসেবে উল্লেখ করেন—সোমবার সন্ধ্যায় আবুধাবিতে পৌঁছান। এর আগে তিনি কিয়েভে জেলেনস্কি ও বহু রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পরে রুবিও ও অন্যদের সঙ্গে জেনেভায় ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
রুবিও ও ট্রাম্পের প্রধান ইউক্রেন আলোচক স্টিভ উইটকফ ওয়াশিংটনে ফিরে গেছেন। ট্রাম্পের জামাতা ও আলোচক জ্যারেড কুশনারও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে ন্যাটোর সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডার অ্যালেক্সাস গ্রিনকেভিচ ব্রাসেলসে ন্যাটো মিত্রদের ব্রিফ করতে গেছেন।

রাশিয়ান কর্মকর্তারা তাদের দাবিগুলো স্পষ্ট করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ২৮ দফা পরিকল্পনার কয়েকটি অংশ সেই চাহিদার সঙ্গে মিল ছিল—যেমন ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার সীমিত রাখা, দেশটিকে ন্যাটোতে যোগ দিতে না দেওয়া এবং গত চার বছরের আক্রমণে রাশিয়া যে অঞ্চল দখল করতে পারেনি, সেই এলাকাও রাশিয়াকে হস্তান্তর করা। কিয়েভ ও ন্যাটো এসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
সপ্তাহান্তে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং অন্যান্য ইইউ প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনায় অংশ নেয়।
এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, “এখনও নিশ্চিত নয় আলোচনা কোথায় গড়ায়, যদিও জেনেভায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। পথ এখনো দীর্ঘ, আর রাশিয়ানরা অবশ্যই চাপ দেবে।”
মঙ্গলবার “কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং”—প্রায় ৫০টি ইউক্রেনসমর্থক দেশের জোট—ভার্চুয়াল বৈঠকে বসবে। শান্তি আলোচনা ও নতুন সামরিক সহায়তা সমন্বয় নিয়েই এই বৈঠক।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটাই—ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা।”
একজন সূত্র জানায়, ড্রিসকল যখন প্রথম কিয়েভে পৌঁছান, তখন তিনি জেলেনস্কিকে স্পষ্টভাবে বলেন—থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের মধ্যে ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা প্রত্যাহার করতে পারে।
জেলেনস্কি সোমবার এক বিবৃতিতে জানান, “এই কাঠামোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে,” যদিও তিনি স্বীকার করেন যে এখনও অনেক বিষয় অমীমাংসিত। তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের অধিকাংশ দেশ আমাদের সহায়তায় প্রস্তুত এবং যুক্তরাষ্ট্র গঠনমূলকভাবে এগোচ্ছে—এটি আমরা মূল্যায়ন করি।”
#Russia #AbuDhabi #Ukraine #USPolicy #PeaceTalks
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















