বাড়িঘর, গাড়ি আর ফসলের ওপর বরফের হানা
অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক এক বসন্তকালীন ঝড়ে আকাশ থেকে নেমে এসেছে অস্বাভাবিক বড় শিলাবৃষ্টি, যা অল্প সময়েই বহু বাড়ির ছাদ, গাড়ি ও গাছপালা ধ্বংস করে দিয়েছে। আবহাওয়াবিদেরা জানাচ্ছেন, অত্যন্ত উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাসের ওপর দ্রুত তৈরি হওয়া সুপারসেল টাইপের মেঘ থেকে নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ডের কিছু এলাকায় গলফ বলের চেয়েও বড় শিলা পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মহাসড়কে আটকে থাকা গাড়ির উইন্ডশিল্ড মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে, বাড়ির স্কাইলাইট ও জানালার কাচ ছিটকে পড়ছে ঘরের ভেতর। জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো শতাধিক কল পেলেও বড় ধরনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি, তবে ভাঙা কাচ ও উড়ন্ত ধ্বংসাবশেষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে কৃষকদের ওপর; শিলাবৃষ্টির পথে থাকা অনেক ফলের বাগান ও সবজিখেত প্রায় ফসল তোলার মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক এলাকায় প্লাস্টিক মোড়ানো গ্রীনহাউজ ছিঁড়ে গেছে, গাছের ডাল ভেঙে ফল ঝরে পড়েছে এবং নরম ডালপালা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। আগে থেকেই খরা ও বন্যার ধাক্কা সামলাতে থাকা চাষীরা আশঙ্কা করছেন, নতুন করে সরবরাহ সংকট তৈরি হলে স্থানীয় বাজারে দাম আরও অস্থির হতে পারে। বীমা বিশ্লেষকেরা বলছেন, ঘন ঘন বন্যা, দাবানল ও শিলাবৃষ্টির মতো catastrophe-এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর প্রিমিয়াম দ্রুত বাড়ছে; কিছু জায়গায় আবার বীমা কোম্পানিগুলো নতুন করে পলিসি দিতে অনাগ্রহী।
উষ্ণায়নের যুগে ‘অস্বাভাবিক’ আবহাওয়া কতটা স্বাভাবিক হয়ে উঠছে
বিজ্ঞানীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, একক কোনো ঝড়কে সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের ফল বলা বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক নয়। তবে গত এক দশকে অস্ট্রেলিয়ায় যে ধারাবাহিকভাবে বেশি শক্তিশালী, বেশি বিচিত্র আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে—দীর্ঘ দাবানল মৌসুম, হঠাৎ প্লাবন, আর এখন এই ভয়ংকর শিলাবৃষ্টি—তা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠ ও উচ্চ তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত শক্তি ও আর্দ্রতা যোগ করে, ফলে অনুকূল পরিবেশ পেলে ঝড় হয়ে ওঠে আরও সহিংস। দেশটির জলবায়ু দপ্তর বহুদিন ধরে সতর্ক করছে, অস্ট্রেলিয়া কার্যত জলবায়ু সংকটের ফ্রন্টলাইনে রয়েছে; গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহ ও প্রবাল বিবর্ণতা তার আরেকটি দৃষ্টান্ত।
নীতিনির্ধারকদের মতে, এই ধরনের ঝড় দুইটি জরুরি বাস্তবতা সামনে নিয়ে আসে। একদিকে দ্রুত কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে ভবিষ্যতের উষ্ণায়ন সীমিত রাখতে হবে; অন্যদিকে ইতোমধ্যে যে মাত্রার পরিবর্তন নিশ্চিত হয়ে গেছে, তার সাথে মানিয়ে নিতে বড় ধরনের অভিযোজন বিনিয়োগ প্রয়োজন। নতুন বিল্ডিং কোডে ছাদ ও জানালার সুরক্ষা বাড়ানো, দুর্যোগ তহবিল জোরদার করা এবং কৃষকদের সহনশীল ফসল ও চাষাবাদ পদ্ধতিতে সহায়তা দেওয়া এসবেরই অংশ হতে পারে। নগর পরিকল্পনার আলোচনায়ও এখন উঠে আসছে—কীভাবে শহরগুলো এমনভাবে গড়ে তোলা যায় যাতে অতিবৃষ্টির পানি দ্রুত ও নিরাপদে বের হয়ে যায়, আবার একই সঙ্গে তাপপ্রবাহেও কিছুটা সুরক্ষা মেলে। কিন্তু যেসব পরিবার আজ নিজেদের গাড়ি আর ঘরের কাচ ভাঙা অবস্থায় দেখছে, তাদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি নিয়ে এই সব নীতি আলোচনা অনেক কম তাত্ত্বিক; এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের ক্ষতি হয়ে ফিরে এসেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















