নিম্নচাপের দু’মুখী সক্রিয়তা: বঙ্গোপসাগর আবার অস্থির
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুনির্দিষ্ট নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে শক্তিশালী রূপ নিতে পারে—এমন সতর্কতা দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় তৈরি হওয়া এই নিম্নচাপ এখনো একই স্থানে অবস্থান করছে। আবহাওয়াবিদদের ভাষায়, নিম্নচাপটির গতি ধীর হলেও এর ‘সংগঠন ক্ষমতা’ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পথ তৈরি করতে পারে।
এর পাশাপাশি দক্ষিণ–পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং শ্রীলঙ্কা উপকূলসংলগ্ন এলাকাতেও আরেকটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। দুটি নিম্নচাপের অবস্থান ও গঠনগত পরিবর্তন মনে করিয়ে দিচ্ছে—বঙ্গোপসাগরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের স্বাভাবিক ঝড়প্রবণতার সময়কাল এখনো শেষ হয়নি।
উপমহাদেশীয় উচ্চচাপের প্রসার: আবহাওয়ায় শুষ্কতার প্রবণতা
বিএমডি জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপের বলয় পশ্চিমবঙ্গ ও তার বিস্তৃত অঞ্চলের দিকে ছড়িয়ে রয়েছে। সাধারণত এই উচ্চচাপ বলয় শুষ্ক আবহাওয়া, রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং সকালবেলার হালকা কুয়াশা তৈরি করে। ফলে বাংলাদেশের আকাশে সাময়িকভাবে আংশিক মেঘ থাকলেও সার্বিক আবহাওয়া আপাতত শুষ্ক থাকবে।
দেশজুড়ে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। নভেম্বরের শেষভাগে আসন্ন শীতের প্রভাব সাধারণত স্পষ্ট হতে থাকে। উচ্চচাপ বলয়ের জোর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

কেন ধারাবাহিক নিম্নচাপ হচ্ছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা এখনো স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি, যা নিম্নচাপ সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বেশি থাকলে নিম্নচাপ সহজে শক্তি পায় এবং ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
এ ছাড়া—
- মৌসুমি বায়ু পুরোপুরি বিদায় নিলেও সমুদ্রের তাপমাত্রা এখনো শীতল হয়নি
- দক্ষিণ আন্দামান সাগরে জলীয়বাষ্পের আধিক্য
- শ্রীলঙ্কা–তামিলনাড়ু সংলগ্ন অঞ্চলে বাতাসের ঘূর্ণনধারা সক্রিয়
—এসব কারণ মিলেই একই সময়ে দুটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে।
নৌযান সতর্কতার প্রয়োজন হতে পারে
যদিও এখনো ঘূর্ণিঝড় বা গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা হয়নি, তবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন—যদি নিম্নচাপ দু’টির যেকোনো একটি শক্তি সঞ্চয় করে পশ্চিম-উত্তর–পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়, তবে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সাগর অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
এতে
- মাছ ধরার ট্রলার
- ছোট নৌযান
- উপকূলীয় বন্দরসমূহ
প্রাথমিক সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারে।
সময় ও গতিপথই বলে দেবে চূড়ান্ত রূপ
বিএমডি জানিয়েছে, এখনো নিম্নচাপগুলোর গতিপথ স্থির হয়নি। আগামী ৪৮ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নচাপটি যদি স্থায়ীভাবে সংগঠিত হতে থাকে, তবে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে সময় লাগবে না। আর যদি সমুদ্রে শুষ্ক বায়ুর প্রবাহ ঢুকে পড়ে, তবে নিম্নচাপ দুর্বলও হয়ে যেতে পারে।
সদা-সতর্ক বঙ্গোপসাগর
বাংলাদেশ দক্ষিণের সাগরভাগ বরাবরই অস্থির। শীতের আগমুহূর্তেও নিম্নচাপের সক্রিয়তা দেখাচ্ছে—যা মৌসুমি পরিবর্তনের জটিলতা এবং সমুদ্র-উষ্ণতার প্রভাবকে নতুনভাবে সামনে আনছে।
উপকূলীয় জনপদ ও নৌপথে সচেতনতার পাশাপাশি আবহাওয়া আপডেট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















