মুম্বাই: অভিনেতা ধর্মেন্দ্র প্রায়ই বলতেন, “মানুষের ভালোবাসার জন্য আমি ক্ষুধার্ত… কখনোই তা পূরণ হয় না।” সোমবার, নব্বই বছরের জন্মদিনের কয়েক দিন আগে মুম্বাইয়ে তাঁর মৃত্যুর পর এই কথাগুলো যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খ্যাতি বা অর্থের চেয়ে তিনি বরাবরই খুঁজেছেন মানুষের আন্তরিক সংযোগ।
নতুন প্রজন্মের কাছে আবারও জনপ্রিয় হয়ে ওঠা
২.৬ মিলিয়ন ইনস্টাগ্রাম অনুসারীসহ ধর্মেন্দ্র জেন জেড প্রজন্মের কাছেও এক নতুন তারকা হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর স্বতঃস্ফূর্ততা, রসবোধ এবং স্ক্রিপ্টবিহীন সরল ভঙ্গিতে ক্যামেরার দিকে হাসি আর চুম্বন ছোড়ার অভ্যাস তরুণদের কাছে তাঁকে আরও কাছে এনে দেয়।
কবি হিসেবে তাঁর পরিচয়
সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিতেন। প্রায়ই নিজের লেখা উর্দু শের-ও-শায়রি ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নিতেন। তবে আগের প্রজন্মের দর্শকদের চোখে তিনি ছিলেন একেবারে প্রথম সারির রোমান্টিক নায়ক—রুডলফ ভ্যালেন্টিনো-র মতোই একটি আইকনিক উপস্থিতি। বয়স নির্বিশেষে অসংখ্য নারী তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন, আর তিনি সবার অনুরোধই হাসিমুখে পূরণ করতেন—অটোগ্রাফ, আলিঙ্গন কিংবা আরও কিছু সময়ের সান্নিধ্য।
নারীদের প্রতি সম্মান ও সৌজন্য
ধর্মেন্দ্র বলেছিলেন, প্রতিটি নারীকে বিশেষ ও কাঙ্ক্ষিত মনে করানো ছিল তাঁর “দায়িত্ব”। তবে এ আচরণ কখনোই অশালীন ছিল না। বরং পুরোনো ধাঁচের সৌজন্যই তাঁর বৈশিষ্ট্য ছিল। নারীদের অবহেলা করা তিনি কখনোই পারতেন না।

ভক্তদের আনুগত্যের অদ্ভুত গল্প
আশির দশকের শুরুর দিকে দিল্লির বহু গৃহিণী সকালে ফ্লাইট ধরে শুটিং সেটে পৌঁছে তাঁর ড্রেসিং রুমে সাক্ষাৎ চাইতেন। ধর্মেন্দ্র কখনোই কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না। তিনি বলতেন, “আমি কোনো নারীকে হতাশ করতে পারি না।” তাঁর এই অদম্য সৌজন্য আজও বহু নারী কৃতজ্ঞ মনে স্মরণ করবেন।
সাফল্যের অপ্রতিদ্বন্দ্বী রেকর্ড
জিতেন্দ্র, শত্রুঘ্ন সিনহা, মনোজ কুমার কিংবা পরবর্তীতে অমিতাভ বচ্চন—সবাই নিজস্ব পরিচিতি গড়ে নিলেও হিট ছবির দিক থেকে কেউই ধর্মেন্দ্রর কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
১৯৭৩ সালে তাঁর আটটি টানা হিট, ১৯৮৭-তে সাতটি ব্লকবাস্টার, আর এক বছরে একসঙ্গে নয়টি ছবি হলগুলোতে চলা—এই রেকর্ড আজও অক্ষুণ্ণ। বাণিজ্যিক সাফল্যের সর্বোচ্চ সংখ্যক ছবির রেকর্ড তাঁরই দখলে।
বয়সকে ছাপিয়ে রোমান্টিক নায়ক
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ২০২৩ সালে ৮৭ বছর বয়সেও ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’-তে তিনি বড় সফল অভিনয় উপহার দেন। শাবানা আজমির সঙ্গে পর্দায় তাঁর রোমান্টিক মুহূর্ত আলোচনায় উঠে আসে। পরিণত বয়সে প্রেম ফিরে আসার গল্প—যেমনটি দেখা গেছে এই ছবিতে কিংবা ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’তে নাফিসা আলির বিপরীতে—তাঁকে আবারও সেই আদর্শ রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তুলে ধরে।
বাস্তব জীবনের সাহসী প্রেম
চলচ্চিত্রের মতোই ধর্মেন্দ্রর বাস্তব জীবনের প্রেমও ছিল নাটকীয়। ১৯৮০ সালে, ইতিমধ্যেই বিবাহিত হয়েও, তিনি হেমা মালিনীকে অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে হতে বাধা দিতে উড়াল দেন মাদ্রাজে। এর পর তাঁদের আকস্মিক বিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
তবুও ধর্মেন্দ্র ও হেমা মালিনী অত্যন্ত সম্মান ও ধৈর্যের সঙ্গে জীবনযাপন করেন এবং তাঁদের দুই কন্যাকে লালন-পালন করেন। প্রথম স্ত্রী প্রকাশ এবং চার সন্তানও নীরবে বিষয়টি মেনে নিয়ে কোনো বিতর্কে জড়াননি। সময়ের সঙ্গে এই জটিল পারিবারিক সমীকরণ আর আলোচনার বিষয় হয়নি।

গ্রামীণ শেকড়ে থাকা এক সুদর্শন নায়ক
প্রজন্মের সবচেয়ে সুদর্শন নায়ক হয়েও তিনি কখনোই নিজের গ্রামীণ শেকড় ভুলে যাননি। তাঁর চোখের মমত্বই বলে দিত—তিনি নিজের “ধর্ম” বা নীতিকে কখনোই বিস্মৃত হননি। আর দর্শকরাও তাঁকে নিঃশর্ত ভালোবাসতেন—কারণ তিনি ছিলেন ঠিক তিনি নিজেই।
লেখকের পরিচয়
শোভা দে একজন কলামিস্ট ও লেখক। এখানে প্রকাশিত মতামত ব্যক্তিগত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















