০৭:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
পাকিস্তানের বিমান হামলার অভিযোগে আবারও উত্তপ্ত আফগান সীমান্ত ময়মনসিংহে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান, একদিনে জরিমানা ৪.৮ লাখ টাকা খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়ার মিরপুর রেলস্টেশন অবহেলায় নড়বড়ে, নেই স্টেশনমাস্টারও রাজশাহী মহানগরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৯ সিলেট এয়ারপোর্ট সড়কে ট্রাক–প্রাইভেট কার সংঘর্ষে যুবক নিহত, আহত ছয় মাদকবিরোধী অভিযানে গাজীপুরে পুলিশের ওপর হামলা, দুই সদস্য আহত ভূমিকম্পের পর বারিশাল শহরে দুটি ভবন হেলে পড়ায় আতঙ্ক, বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া মালয়েশিয়াগামী নৌযান আটক, টেকনাফ উপকূলে ২৮ জনকে মানবপাচারের হাত থেকে উদ্ধার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ভূমিকম্প মহড়া, শিক্ষার্থীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার প্রশিক্ষণ বিসিএস পরীক্ষার সময়সূচি স্থগিতের দাবিতে সাভারে ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন ঘিরে আলোচনা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আড়াই মাস আগে নতুন একটি রাজনৈতিক জোট বা প্ল্যাটফর্ম গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আড়াই মাস আগে নতুন রাজনৈতিক জোট বা প্ল্যাটফর্ম গঠনের বিষয়ে নানা দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে যেসব দল এই জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছে, তাদের কারোরই ভোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইতিহাস নেই বললেই চলে।

গণঅভ্যুত্থানের পরে গত এক বছরের বেশি সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ অথবা একে অপরের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার নানা খবর শোনা গেছে।

এরই মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলগুলোর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।

জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পরে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপিকে ঘিরে পুরনো দলগুলোকে নানা হিসাব-নিকাশও করতে দেখা গেছে।

নতুন এই দলটিও নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান শক্ত বা পাকাপোক্ত করতে বিভিন্ন ধরনের কৌশলের অংশ নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি অথবা নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের মতো নানা বিষয়।

এরই অংশ হিসেবে মাস দুয়ে’ক আগেই শোনা গেছে, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ এই দুইটি দল নিজেরা একীভূতকরণের কথা আলোচনা করেছে। এছাড়া বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর সাথেও তাদের আলোচনার বিষয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে।

তবে, এবার বেশ কয়েকটি দল নতুন একটি রাজনৈতিক জোট বা অ্যালায়েন্স গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছে।

এমনকি এই সপ্তাহের মধ্যেই জোট গঠন নিয়ে আলোচনার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি দলের নেতারা।

প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে ঠিক কী কারণে এই রাজনৈতিক জোট গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে? জোট গঠনের রাজনৈতিক তাৎপর্যই বা ঠিক কী?

জোটের ঘোষণায় ভোটের হিসেবে আদৌ কোনো প্রভাব পড়বে?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সমন্বয়কদের ছবি

জুলাইয়ের স্পিরিট এবং গণঅভ্যুত্থানের পেছনে রাষ্ট্রের সংস্কারের যে আকাঙ্খা ছিল, তা বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক জোট গঠনের এই আলোচনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি দলের নেতা।

কেন এবং আলোচনায় কোন কোন রাজনৈতিক দল?

রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, রাজনৈতিক দল এবি পার্টি এবং ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ এরই মধ্যে জোট গঠনের আলোচনায় শুরু করেছে। গত মাসখানেক ধরেই নানা কর্মসূচিও করেছে তারা।

একইসাথে যেসব দল এই জোট গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক সেসব দলগুলোও এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।

নভেম্বর মাসের শুরুতেই রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বানে তাদের কার্যালয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল এক বৈঠক করে।

এই জোটের আলোচনায় মোট নয়টি দলের অংশ নেওয়ার কথা জানা যাচ্ছে।

এসব দলের মধ্যে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চ।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বিবিসি বাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মি. কাইয়ুম জানান, এই আলোচনা বেশ আগে থেকেই হচ্ছে কিন্তু এখন এটা একটা গতি পেয়েছে। নয় দল বিভিন্ন সময় নানা বৈঠক, কর্মসূচিতেও অংশ নিয়েছে।

কেন এই জোট গঠনের উদ্যোগ এমন প্রশ্নে মি. কাইয়ুম বলেন, “অভ্যুত্থানের যে আশা এবং অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য যে সমস্ত রাজনৈতিক দল নিজেদের কাছাকাছি মনে করে এবং যারা বিএনপি-জামায়াত জোটের বাইরে থেকে রাজনীতি করতে চায় তাদেরকে নিয়ে এই ঐক্যের আলোচনাটা হচ্ছে। এটা প্রধানত একটা রাজনৈতিক জোট হওয়ার সম্ভাবনা।”

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরও জোট গঠনের এই আলোচনায় নিজের দলের ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “দলগুলোর সাথে বেশ কয়েকবার আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কনক্রীট সিদ্ধান্তে আসা যায় নাই। জোটের বিষয়ে চূড়ান্ত অগ্রগতি হলেই তখন আত্মপ্রকাশ বা আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হতে পারে।”

নির্বাচনের আগে কেন এই তৎপরতা এমন প্রশ্নে মি. নূর বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটটা যদি দেখেন কোন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের কিংবা নেতৃত্বে তা হয়নি। একেবারেই বিচ্ছিন্নভাবে কিছু তরুণ যারা সংগ্রাম করেছে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বা জেলা শহরে তাদের ডাকেই একটা ম্যাস মুভমেন্ট হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের একটা পরিষ্কার ঘোষণা ছিল যে আমরা একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গঠনের মাধ্যমেই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই।”

গত ১৫ মাসের অভিজ্ঞতায় রাজনীতিতে কালো টাকা, প্রশাসনে আধিপত্য বিস্তারের পুরোনো ব্যবস্থা পরিবর্তনে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার কারণেই এই জোট গঠনের বিষয়টি চিন্তা- ভাবনা ও আলোচনা হচ্ছে বলে জানান মি. নূর।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বেড়েছে

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি মি. কাইয়ুমও জানান, নির্বাচন বা ভোট ব্যাংক জোট গঠনের মূল লক্ষ্য নয়।

জোট গঠনের রাজনৈতিক তাৎপর্য কী? ভোটে প্রভাব পড়বে?

যেসব দল নতুন জোট গঠন নিয়ে আলোচনায় অগ্রসর হয়েছে সেগুলোর নেতারা বলছেন, ভোটের রাজনীতিতে এর তেমন প্রভাব না থাকলেও, জোট গঠনের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এই জোট গঠনের বিষয়ে নিজের দলের ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বিবিসি বাংলাকে।

মি. ইসলাম বলেন, “ভোটের মাঠে ইম্প্যাক্ট কিছুটা কম হলেও রাজনৈতিক গুরুত্বের বিবেচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দলগুলোকে জনবান্ধব এবং সংস্কারপন্থী, গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিতে এক রকমের বাধ্য করবে। “

” রাষ্ট্রের আগের যে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা কাঠামো আছে, এক ব্যক্তি রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার কুক্ষিগত রাখা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, ভারসাম্য আনা এই যে জুলাই সনদে যে প্রস্তাবগুলো আসছে সেটার বাস্তবায়নে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ” বলেন মি. ইসলাম।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি মি. কাইয়ুমও জানান, নির্বাচন বা ভোট ব্যাংক জোট গঠনের মূল লক্ষ্য নয়।

“নির্বাচন মূল লক্ষ্য না। যেহেতু নির্বাচন সামনে আছে এবং একটা বড় রাজনৈতিক ইভেন্ট সেজন্য নির্বাচনটাকেও স্বাধীনভাবে করার পরিকল্পনা আছে। তবে এটা কতটা কার্যকরভাবে করা যাবে তা আলাপের পরে ফাইনালি বলা যাবে ” বলেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে এনসিপি একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হলেও নির্বাচনের রাজনীতি বেশ ভিন্ন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, ” কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতিটা ভিন্ন। মানুষ কাকে চাইবে না চাইবে এটাতো তাদের ব্যাপার। তারা মূল্যায়ন করবে এনসিপিকে। আমার মনে হয় এনসিপি এই ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জোট করে করতে পারে।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর সমন্বয়ে জোট গঠন হলে এর তাৎপর্য তুলে ধরতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এরকম চমকপ্রদ বিষয় তুলে ধরতে হবে বলে মনে করেন।

” তবে তাদেরকে এই অ্যালায়েন্সের তাৎপর্য তুলে ধরতে হলে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে এমন অ্যাট্রাকটিভ বা চমকপ্রদ কিছু তুলে ধরতে হবে। তা না হলে এরা যদি একসাথে মিলে কিছু ভোট হয়তো তারা পাবে। কিন্তু এনসিপি যাদের সাথে অ্যালায়েন্স করতে চায়,ইনক্লুডিং এনসিপি তাদের কাউকেই উইনিং কোনো দল আমার মনে হয় না। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত বা এ সমস্ত দলের পাশে খুব কঠিন হয়ে যাবে পাস করে বেরিয়ে আসা ” বলেন মি. আহমেদ।

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানের বিমান হামলার অভিযোগে আবারও উত্তপ্ত আফগান সীমান্ত

নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন ঘিরে আলোচনা

০৫:০০:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আড়াই মাস আগে নতুন রাজনৈতিক জোট বা প্ল্যাটফর্ম গঠনের বিষয়ে নানা দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে যেসব দল এই জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছে, তাদের কারোরই ভোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইতিহাস নেই বললেই চলে।

গণঅভ্যুত্থানের পরে গত এক বছরের বেশি সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ অথবা একে অপরের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার নানা খবর শোনা গেছে।

এরই মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলগুলোর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।

জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পরে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপিকে ঘিরে পুরনো দলগুলোকে নানা হিসাব-নিকাশও করতে দেখা গেছে।

নতুন এই দলটিও নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান শক্ত বা পাকাপোক্ত করতে বিভিন্ন ধরনের কৌশলের অংশ নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি অথবা নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের মতো নানা বিষয়।

এরই অংশ হিসেবে মাস দুয়ে’ক আগেই শোনা গেছে, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ এই দুইটি দল নিজেরা একীভূতকরণের কথা আলোচনা করেছে। এছাড়া বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর সাথেও তাদের আলোচনার বিষয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে।

তবে, এবার বেশ কয়েকটি দল নতুন একটি রাজনৈতিক জোট বা অ্যালায়েন্স গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছে।

এমনকি এই সপ্তাহের মধ্যেই জোট গঠন নিয়ে আলোচনার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি দলের নেতারা।

প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে ঠিক কী কারণে এই রাজনৈতিক জোট গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে? জোট গঠনের রাজনৈতিক তাৎপর্যই বা ঠিক কী?

জোটের ঘোষণায় ভোটের হিসেবে আদৌ কোনো প্রভাব পড়বে?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সমন্বয়কদের ছবি

জুলাইয়ের স্পিরিট এবং গণঅভ্যুত্থানের পেছনে রাষ্ট্রের সংস্কারের যে আকাঙ্খা ছিল, তা বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক জোট গঠনের এই আলোচনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি দলের নেতা।

কেন এবং আলোচনায় কোন কোন রাজনৈতিক দল?

রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, রাজনৈতিক দল এবি পার্টি এবং ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ এরই মধ্যে জোট গঠনের আলোচনায় শুরু করেছে। গত মাসখানেক ধরেই নানা কর্মসূচিও করেছে তারা।

একইসাথে যেসব দল এই জোট গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক সেসব দলগুলোও এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।

নভেম্বর মাসের শুরুতেই রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বানে তাদের কার্যালয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল এক বৈঠক করে।

এই জোটের আলোচনায় মোট নয়টি দলের অংশ নেওয়ার কথা জানা যাচ্ছে।

এসব দলের মধ্যে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চ।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বিবিসি বাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মি. কাইয়ুম জানান, এই আলোচনা বেশ আগে থেকেই হচ্ছে কিন্তু এখন এটা একটা গতি পেয়েছে। নয় দল বিভিন্ন সময় নানা বৈঠক, কর্মসূচিতেও অংশ নিয়েছে।

কেন এই জোট গঠনের উদ্যোগ এমন প্রশ্নে মি. কাইয়ুম বলেন, “অভ্যুত্থানের যে আশা এবং অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য যে সমস্ত রাজনৈতিক দল নিজেদের কাছাকাছি মনে করে এবং যারা বিএনপি-জামায়াত জোটের বাইরে থেকে রাজনীতি করতে চায় তাদেরকে নিয়ে এই ঐক্যের আলোচনাটা হচ্ছে। এটা প্রধানত একটা রাজনৈতিক জোট হওয়ার সম্ভাবনা।”

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরও জোট গঠনের এই আলোচনায় নিজের দলের ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “দলগুলোর সাথে বেশ কয়েকবার আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কনক্রীট সিদ্ধান্তে আসা যায় নাই। জোটের বিষয়ে চূড়ান্ত অগ্রগতি হলেই তখন আত্মপ্রকাশ বা আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হতে পারে।”

নির্বাচনের আগে কেন এই তৎপরতা এমন প্রশ্নে মি. নূর বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটটা যদি দেখেন কোন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের কিংবা নেতৃত্বে তা হয়নি। একেবারেই বিচ্ছিন্নভাবে কিছু তরুণ যারা সংগ্রাম করেছে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বা জেলা শহরে তাদের ডাকেই একটা ম্যাস মুভমেন্ট হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের একটা পরিষ্কার ঘোষণা ছিল যে আমরা একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গঠনের মাধ্যমেই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই।”

গত ১৫ মাসের অভিজ্ঞতায় রাজনীতিতে কালো টাকা, প্রশাসনে আধিপত্য বিস্তারের পুরোনো ব্যবস্থা পরিবর্তনে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার কারণেই এই জোট গঠনের বিষয়টি চিন্তা- ভাবনা ও আলোচনা হচ্ছে বলে জানান মি. নূর।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বেড়েছে

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি মি. কাইয়ুমও জানান, নির্বাচন বা ভোট ব্যাংক জোট গঠনের মূল লক্ষ্য নয়।

জোট গঠনের রাজনৈতিক তাৎপর্য কী? ভোটে প্রভাব পড়বে?

যেসব দল নতুন জোট গঠন নিয়ে আলোচনায় অগ্রসর হয়েছে সেগুলোর নেতারা বলছেন, ভোটের রাজনীতিতে এর তেমন প্রভাব না থাকলেও, জোট গঠনের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এই জোট গঠনের বিষয়ে নিজের দলের ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বিবিসি বাংলাকে।

মি. ইসলাম বলেন, “ভোটের মাঠে ইম্প্যাক্ট কিছুটা কম হলেও রাজনৈতিক গুরুত্বের বিবেচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দলগুলোকে জনবান্ধব এবং সংস্কারপন্থী, গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিতে এক রকমের বাধ্য করবে। “

” রাষ্ট্রের আগের যে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা কাঠামো আছে, এক ব্যক্তি রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার কুক্ষিগত রাখা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, ভারসাম্য আনা এই যে জুলাই সনদে যে প্রস্তাবগুলো আসছে সেটার বাস্তবায়নে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ” বলেন মি. ইসলাম।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি মি. কাইয়ুমও জানান, নির্বাচন বা ভোট ব্যাংক জোট গঠনের মূল লক্ষ্য নয়।

“নির্বাচন মূল লক্ষ্য না। যেহেতু নির্বাচন সামনে আছে এবং একটা বড় রাজনৈতিক ইভেন্ট সেজন্য নির্বাচনটাকেও স্বাধীনভাবে করার পরিকল্পনা আছে। তবে এটা কতটা কার্যকরভাবে করা যাবে তা আলাপের পরে ফাইনালি বলা যাবে ” বলেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে এনসিপি একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হলেও নির্বাচনের রাজনীতি বেশ ভিন্ন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, ” কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতিটা ভিন্ন। মানুষ কাকে চাইবে না চাইবে এটাতো তাদের ব্যাপার। তারা মূল্যায়ন করবে এনসিপিকে। আমার মনে হয় এনসিপি এই ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জোট করে করতে পারে।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর সমন্বয়ে জোট গঠন হলে এর তাৎপর্য তুলে ধরতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এরকম চমকপ্রদ বিষয় তুলে ধরতে হবে বলে মনে করেন।

” তবে তাদেরকে এই অ্যালায়েন্সের তাৎপর্য তুলে ধরতে হলে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে এমন অ্যাট্রাকটিভ বা চমকপ্রদ কিছু তুলে ধরতে হবে। তা না হলে এরা যদি একসাথে মিলে কিছু ভোট হয়তো তারা পাবে। কিন্তু এনসিপি যাদের সাথে অ্যালায়েন্স করতে চায়,ইনক্লুডিং এনসিপি তাদের কাউকেই উইনিং কোনো দল আমার মনে হয় না। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত বা এ সমস্ত দলের পাশে খুব কঠিন হয়ে যাবে পাস করে বেরিয়ে আসা ” বলেন মি. আহমেদ।

বিবিসি নিউজ বাংলা