০৫:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কাঃ আগামী ৪৮ ঘন্টা গুরুত্বপূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত পোল্ট্রি ফার্মে ফেনীতে বাড়ছে পরিবেশ সংকট ট্রাম্পের ট্যারিফ নিয়ে প্লান বি বগুড়ায় দুই সন্তানকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা ৪ হাজার কিমি দূরের অগ্ন্যুত্পাত—কীভাবে ভারতের আকাশপথে সংকট তৈরি করল? পাকিস্তানি হামলায় আফগানিস্তানে ১০ জন নিহত: উত্তেজনা বাড়ছে, পাল্টা জবাবের ঘোষণা তালেবানের নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন ঘিরে আলোচনা আজ থেকে ঘরে বসেই মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ করা যাবে ইউরোপের ইভি বাজারে আরও শক্ত অবস্থান গড়ছে চীনা বিএইডি দুই বছরের গাজা যুদ্ধেই ধস নামল ফিলিস্তিনের অর্থনীতি: জাতিসংঘ

সুনেরাহ বিনতে কামাল: জীবনের পথচলা

শৈশব, পরিবার ও বেড়ে ওঠা

সুনেরাহ বিনতে কামাল বাংলাদেশের বিনোদন জগতের এক উজ্জ্বল মুখ। তার জন্ম ২২ আগস্ট রংপুরে হলেও পরিবারের শিকড় বগুড়ার আদমদীঘিতে। তার বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা গৃহিণী। পরিবারের পরিবেশ ছিল সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক — সেই আবহ থেকেই তার শিল্পমাধ্যমের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। অল্প বয়স থেকেই নাচের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল; মাত্র আড়াই বছর বয়সেই তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখা শুরু করেন। শৈশবে এই নিয়মিত নাচের চর্চা তাকে শৃঙ্খলা, তাল, ছন্দ ও আত্মবিশ্বাস শিখিয়েছে। তিনি ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে এ-লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করেন, যেখানে শিক্ষা ও শিল্প—দুটি ক্ষেত্রেই নিজের পরিচয় গড়ে তোলার সুযোগ পান। শৈশবে পরিবার তাকে কেবল পড়াশোনা নয়, বরং নিজের প্রতিভা বিকাশে স্বাধীনতা দিয়েছে, যা পরে তার ক্যারিয়ারের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

নৃত্য থেকে মডেলিংয়ে পথচলা

নাচের অভিজ্ঞতা তাকে শুধু মঞ্চে নয়, ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। কৈশোরে তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে শুরু করেন; সেখান থেকেই ধীরে ধীরে মডেলিং জগতে প্রবেশ ঘটে। ২০১১ সালে সুনেরাহ আনুষ্ঠানিকভাবে র‍্যাম্প মডেল হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন ফ্যাশন শো, ব্র্যান্ড ইভেন্ট ও স্টাইল ফটোশুটে কাজ করে বাংলাদেশের ফ্যাশন দুনিয়ায় দ্রুত পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল বোঝা এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আয়ত্ত করা—এসবই পরবর্তীতে তার অভিনয় জীবনের জন্য সহায়ক হয়েছে। মডেলিং তাকে কেবল পরিচিতি দেয়নি, বরং শিখিয়েছে পেশাদারিত্ব, সময়ানুবর্তিতা এবং নিজের ইমেজ ধরে রাখার কৌশল।

রাজের সঙ্গে এসব ভিডিও ৫ বছর আগের : সুনেরাহ বিনতে কামাল

থিয়েটার ও অভিনয়ের ভিত্তি তৈরি

মডেলিংয়ের পাশাপাশি তিনি থিয়েটারে কাজ শুরু করেন, যা তার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ছিল। থিয়েটার তাকে চরিত্র বিশ্লেষণ, সংলাপ বলার ধরণ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ—এমন নানা দিক শিখিয়েছে। থিয়েটারই তাকে শিল্পের গভীরে নিয়ে যায় এবং বুঝায় যে অভিনয় শুধুই সৌন্দর্য বা স্টাইল নয়; এটি আবেগ, গল্প ও দর্শকের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার একটি শিল্প। এ সময়ের অভিজ্ঞতা তার ভিতরের শিল্পীকে শক্তিশালী করেছে এবং তাকে বড় পর্দায় অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত করেছে।

চলচ্চিত্রে অভিষেক: ‘নো ডরাই’ ও প্রথম সাফল্যের বিস্ফোরণ

২০১৯ সাল সুনেরাহর জীবনে এক ঐতিহাসিক বছর। এ বছর তিনি অভিনয় করেন তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নো ডরাই’—এ, যেখানে তিনি আয়েশা নামের এক সাহসী সার্ফার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। চরিত্রটির জন্য তাকে সার্ফিং শেখা, কঠিন আবহাওয়ায় শুটিং করা এবং একটি শক্তিশালী নারীর জীবনসংগ্রাম ফুটিয়ে তোলার মতো শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয় এতটাই প্রশংসিত হয় যে তিনি প্রথম সিনেমাতেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সেরা অভিনেত্রী হিসেবে। দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে খুব কম অভিনেত্রী প্রথম সিনেমায় এমন সম্মান অর্জন করেছেন। ‘নো ডরাই’ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় — তাকে কেবল একজন অভিনেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, বরং জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনে দাঁড় করিয়েছে।

পরবর্তী সময়ের চলচ্চিত্র ও কাজের বিস্তার

‘নো ডরাই’-এর সাফল্যের পর সুনেরাহ পিছনে ফিরে তাকাননি। তিনি একের পর এক ভিন্নধর্মী কাজ শুরু করেন। ২০২২ সালে তিনি অভিনয় করেন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’—তে। ছবিটি ভয়ের সঙ্গে মানবিক অনুভূতি মিশিয়ে একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যেখানে সুনেরাহ আবারও তার অভিনয়ের দক্ষতা প্রদর্শন করেন। ২০২৩ সালে তিনি বড় বাজেটের সিনেমা ‘অন্তর্জাল’—এ অভিনয় করেন; এখানে ডিজিটাল যুদ্ধ, সাইবার জগত ও থ্রিলারের মেলবন্ধন ছিল চলচ্চিত্রটির মূল শক্তি। তিনি নতুন প্রকল্পে যুক্ত হতে শুরু করেছেন এবং বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ক্রমাগত উন্নতি, বৈচিত্র্যময় চরিত্র বেছে নেওয়া এবং নিজেকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা—এসবই তাকে তরুণ প্রজন্মের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

নুহাশের চোখ দেখলেই আমি বুঝতে পারি ও কী চাচ্ছে: সু...

ব্যক্তিগত জীবন ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সুনেরাহর ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত জীবনও বহুবার মিডিয়ার আলোচনায় এসেছে। কখনো তার সম্পর্ক, কখনো সোশ্যাল মিডিয়ার গুঞ্জন—এসব নিয়ে নানা খবর ছড়িয়েছে। কিন্তু তিনি সর্বদা নিজের অবস্থান পরিষ্কার রেখেছেন। বারবার তিনি বলেছেন যে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মিথ্যাচার বা গুজব তিনি সহ্য করেন না। তার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—শিল্পীর কাজ বিচার হবে তার অভিনয় ও কাজের মাধ্যমে, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নয়। এই দৃঢ়তা ও পরিপক্কতা তার ব্যক্তিত্বকে আরও শক্তিশালী করেছে। নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করা এবং সামাজিক চাপের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো—এগুলো একজন শিল্পীর জন্য যেমন কঠিন, তেমনি প্রয়োজনীয়। সুনেরাহ সেই দায়িত্ব সচেতনভাবে পালন করে আসছেন।

চ্যালেঞ্জ, সংগ্রাম ও দৃঢ়তা

যে কোনো তারকার জীবনেই চ্যালেঞ্জ থাকে—সুনেরাহর ক্ষেত্রেও তাই। নতুন প্রতিভার আগমন, প্রতিযোগিতা, কঠোর সমালোচনা—এসব তাকে বারবার নিজের দিকে ফিরে তাকাতে বাধ্য করেছে। একজন তরুণ অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম ছবিতে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া তাকে উচ্চমান ধরে রাখার দায়িত্ব দিয়েছে। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্ক, সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক মন্তব্য এবং নারীবিষয়ক স্টেরিওটাইপ—এসব অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। তবুও সুনেরাহ সবসময় নিজের কাজকে এগিয়ে রেখে নিয়মিত পরিশ্রম করে নিজেকে উন্নত করার পথে অগ্রসর হয়েছেন। তার দৃঢ়তা, মনোবল ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাকে সব বাধা পেরিয়ে সামনে যেতে সাহায্য করেছে।

বর্তমান সময় ও ভবিষ্যতের পথচলা

২০২৫ সালে সুনেরাহ বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত এবং সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী। তিনি নতুন চলচ্চিত্র, ওয়েব কনটেন্ট ও আন্তর্জাতিক প্রকল্প—বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত হচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার উপস্থিতি, ফ্যাশন সেন্স এবং বিভিন্ন শো ও ফটোশুটে অংশগ্রহণ সবই তাকে আরও জনপ্রিয় করেছে। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি নাচ, মডেলিং ও অভিনয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে নিজেকে বহুমাত্রিকভাবে উপস্থাপন করছেন। আগামী দিনে তিনি আরও বড় বাজেটের সিনেমা, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও ভিন্নধর্মী চরিত্রে কাজ করে বাংলাদেশের সিনেমাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান এবং নিজেকে একটি গ্লোবাল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।

সুনেরাহ তার জীবনের প্রতিটি দিনকে লক্ষ্য, পরিশ্রম ও স্বপ্নের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি দিন তার কাছে একটি চলমান অনুশীলন — নিজেকে পরিণত করার একটি ধারা। শৃঙ্খলা তার দৈনন্দিন জীবনের মূল ভিত্তি, যা তাকে পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।

তিনি প্রতিদিন নাচ, অভিনয়, শরীরচর্চা, স্ক্রিপ্ট পড়া ও ক্যামেরার ভাষা বোঝার মতো বিষয়গুলোর অনুশীলন করেন। এসব অভ্যাস তাকে কেবল দক্ষ করে না, বরং একজন শিল্পীর মতো ভিতর থেকে আরও পরিপক্ব করে তোলে। শুটিংয়ের দিনগুলোতে তিনি সময়ানুবর্তিতা, পেশাদার আচরণ এবং সহকর্মীদের প্রতি সম্মান অগ্রাধিকার দেন — এসব তাকে দলের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তার ক্যারিয়ারের বৈশিষ্ট্য হলো বৈচিত্র্য: নৃত্যশিল্পী হিসেবে শুরু, মডেলিং, থিয়েটার এবং চলচ্চিত্র—প্রতিটি স্তরে তিনি নিজেকে নতুনভাবে গড়েছেন। থিয়েটার তাকে শিখিয়েছে চরিত্র নির্মাণ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও দর্শকের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা; মডেলিং দিয়েছে আত্মবিশ্বাস, ক্যামেরার সামনে স্বতঃস্ফূর্ততা এবং পেশাদারিত্ব; এবং চলচ্চিত্র তাকে দিয়েছে বৃহৎ দর্শক, প্রশংসা ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি।

ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি দৃঢ় ও আত্মসম্মানী। বিতর্ক ও গুজবের মধ্যেও তিনি তার মূল্যবোধ ও গোপনীয়তা বজায় রেখেছেন। তার স্থিরতা ও মানসিক শক্তি তাকে একজন সমসাময়িক, পরিশ্রমী ও সচেতন শিল্পী হিসেবে প্রতিপন্ন করেছে। তিনি বিশ্বাস করেন প্রতিটি দিনই উন্নতির দিন এবং প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই তাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে — তার প্রতিটি পদক্ষেপই অনুপ্রেরণার উৎস।

তার পাঁচটি চলচ্চিত্র: বিস্তৃত বিশ্লেষণ

শুটিংয়ে আহত সুনেরাহ

১. নো ডরাই (২০১৯)

সুনেরাহর চলচ্চিত্রজীবনের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল ‘নো ডরাই’। এই চলচ্চিত্রে তিনি আয়েশা নামের এক সার্ফার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে সমাজিক বাঁধা, পারিবারিক চাপ ও শারীরিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে ওঠে। চরিত্রটির জন্য তাকে সার্ফিং শেখা এবং ব্যাপক শারীরিক প্রস্তুতি নিতে হয়। সমুদ্রের ঢেউ, বিপদসংকুল জোয়ার ও কঠিন লোকেশন—এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি চরিত্রটিকে প্রাণবন্ত করেছেন। দর্শক তার অভিনয়ে আয়েশার ব্যথা, উৎসাহ, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার মুহূর্তগুলো অনুভব করেছেন। এই চলচ্চিত্র তাকে জাতীয় পুরস্কার এনে দিয়েছে এবং তাকে দেশের সেরা অভিনেত্রীদের কাতারে স্থান করে দিয়েছে। গল্পের শক্তি, সিনেমাটোগ্রাফি, সংলাপ ও তার শরীরী ভাষা মিলেমিশে এই চলচ্চিত্রকে স্মরণীয় করে রেখেছে।

২. মশারি (২০২২)

‘মশারি’ একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ভৌতিক চলচ্চিত্র, যার ভিতরে সামাজিক বাস্তবতা ও মানবিক সম্পর্কের গভীর আবেগ লুকিয়ে আছে। সুনেরাহ এখানে বড় বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন; চরিত্রটি এক অদ্ভুত ভাইরাসের পরিবেশে ছোট বোনকে বাঁচাতে সংগ্রাম করে। পুরো গল্পটি একটি মশারির ভেতরে থাকা দুই নারীর সংগ্রামের মাধ্যমে এগিয়ে যায়—ভয়, ভালোবাসা ও বেঁচে থাকার লড়াইয়ের আবেদন নিয়ে। এই চরিত্রে তিনি সংযত আবেগ ও নীরব প্রকাশের মাধ্যমে ভয়ের অনুভূতিকে দক্ষভাবে ফুটিয়েছেন। ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয় এবং তাকে আন্তর্জাতিক দর্শকমণ্ডলীতেও পরিচিত করে।

৩. অন্তর্জাল (২০২৩)

‘অন্তর্জাল’ একটি সাইবার থ্রিলার চলচ্চিত্র, যেখানে সুনেরাহ আধুনিক ও প্রযুক্তি সচেতন এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গল্পে সাইবার যুদ্ধ, হ্যাকিং, ডিজিটাল আক্রমণ ও জাতীয় নিরাপত্তা—all জড়িত ছিল এবং তার চরিত্র কাহিনির একজন মূল অংশ ছিল। এই চলচ্চিত্রে তাকে উচ্চগতির ডায়লগ, প্রযুক্তিগত শব্দভাণ্ডার ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নাটকীয়তা নিয়ে কাজ করতে হয়। বড় বাজেট, বড় শিল্পী দল এবং প্রযুক্তিনির্ভর কাহিনি—এসব মিলিয়ে এই সিনেমাটি তার ক্যারিয়ারের একটি সাহসী পদক্ষেপ ছিল। তিনি প্রমাণ করেছেন যে তিনি শুধু আবেগঘন বা নাটকীয় চরিত্রেই দক্ষ নন, বরং আধুনিক থ্রিলারেও সফলভাবে নিজ অবস্থান তৈরি করতে পারেন।

শুটিংয়ের সময় গুরুতর আহত সুনেরাহ - Bangla news

৪. দাগী

‘দাগী’ সুনেরাহর ক্যারিয়ারের একটি নতুন অধ্যায় হতে যাচ্ছে। এখানে তিনি এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন যা সামাজিক ও মানসিক সংকটের মধ্য দিয়ে যায়—শরীর ও মন দুটোই বহন করছে অদৃশ্য দাগ। চরিত্রটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক এবং তাকে ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। শোনা যায়, তিনি চরিত্রের জন্য শুটিংয়ের আগে মনস্তাত্ত্বিক রেফারেন্স সংগ্রহ করছেন, ডায়েরি লিখছেন এবং দৈনন্দিন আচরণেও কিছু পরিবর্তন আনছেন। এই চলচ্চিত্র তার অভিনয়ের গভীরতা ও চরিত্রপ্রস্তুতির দিককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

৫. উৎসব 

‘উৎসব’ একটি আবেগঘন নাট্যধর্মী সিনেমা, যেখানে সুনেরাহ একজন ভাঙনের মধ্যে থাকা তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করছেন—যিনি পরিবারের উৎসব, স্মৃতি ও সম্পর্কের দ্বন্দ্বের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন। ছবিটি পরিবারকেন্দ্রিক হলেও চরিত্রটি বহুস্তরীয় আবেগ বহন করে—নিরাশা, ভালোবাসা, ক্ষোভ, অসহায়ত্ব ও আশা। চরিত্রটির মাধ্যমে তিনি দেখাচ্ছেন কিভাবে পরিবারের ভাঙনের মধ্যেও একজন নারী নিজের পথ খুঁজে নিতে পারে। এটি তার অভিনয় জীবনে আরেকটি আবেগঘন অধ্যায় যুক্ত করবে, যা দর্শকের হৃদয়ে স্থান করে নেবে।

সুনেরাহ বিনতে কামাল—একটি নাম যার শুরু হয়েছিল নাচ দিয়ে, পরিচিতি এসেছিল মডেলিংয়ে এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অভিনয় জগতে। তার জীবনের গল্প পরিশ্রম, প্রতিভা, দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের গল্প। শৈশবের মঞ্চ থেকে জাতীয় পুরস্কার জয়—এই যাত্রাপথ দেখায় যে স্বপ্ন যদি বাস্তব এবং পরিশ্রম ধারাবাহিক হয়, তবে সাফল্য আসবেই। তার সাহসী সিদ্ধান্ত, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা এবং ব্যক্তিত্বকে অটুট রাখার মানসিকতা আজ তাকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে তিনি কেবল একজন অভিনেত্রী নয়, বরং একজন সাংস্কৃতিক আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন—এমন প্রত্যাশা তার ভক্তদের রয়েছে।

 

#সুনেরাহবিনতেকামাল #সুনেরাহ #অভিনয় #নৃত্য #মডেলিং #চলচ্চিত্র #Feature #বাংলাচলচ্চিত্র #শিল্পীরযাত্রা

জনপ্রিয় সংবাদ

বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কাঃ আগামী ৪৮ ঘন্টা গুরুত্বপূর্ণ

সুনেরাহ বিনতে কামাল: জীবনের পথচলা

০৩:৪১:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

শৈশব, পরিবার ও বেড়ে ওঠা

সুনেরাহ বিনতে কামাল বাংলাদেশের বিনোদন জগতের এক উজ্জ্বল মুখ। তার জন্ম ২২ আগস্ট রংপুরে হলেও পরিবারের শিকড় বগুড়ার আদমদীঘিতে। তার বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা গৃহিণী। পরিবারের পরিবেশ ছিল সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক — সেই আবহ থেকেই তার শিল্পমাধ্যমের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। অল্প বয়স থেকেই নাচের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল; মাত্র আড়াই বছর বয়সেই তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখা শুরু করেন। শৈশবে এই নিয়মিত নাচের চর্চা তাকে শৃঙ্খলা, তাল, ছন্দ ও আত্মবিশ্বাস শিখিয়েছে। তিনি ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে এ-লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করেন, যেখানে শিক্ষা ও শিল্প—দুটি ক্ষেত্রেই নিজের পরিচয় গড়ে তোলার সুযোগ পান। শৈশবে পরিবার তাকে কেবল পড়াশোনা নয়, বরং নিজের প্রতিভা বিকাশে স্বাধীনতা দিয়েছে, যা পরে তার ক্যারিয়ারের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

নৃত্য থেকে মডেলিংয়ে পথচলা

নাচের অভিজ্ঞতা তাকে শুধু মঞ্চে নয়, ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। কৈশোরে তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে শুরু করেন; সেখান থেকেই ধীরে ধীরে মডেলিং জগতে প্রবেশ ঘটে। ২০১১ সালে সুনেরাহ আনুষ্ঠানিকভাবে র‍্যাম্প মডেল হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন ফ্যাশন শো, ব্র্যান্ড ইভেন্ট ও স্টাইল ফটোশুটে কাজ করে বাংলাদেশের ফ্যাশন দুনিয়ায় দ্রুত পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল বোঝা এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আয়ত্ত করা—এসবই পরবর্তীতে তার অভিনয় জীবনের জন্য সহায়ক হয়েছে। মডেলিং তাকে কেবল পরিচিতি দেয়নি, বরং শিখিয়েছে পেশাদারিত্ব, সময়ানুবর্তিতা এবং নিজের ইমেজ ধরে রাখার কৌশল।

রাজের সঙ্গে এসব ভিডিও ৫ বছর আগের : সুনেরাহ বিনতে কামাল

থিয়েটার ও অভিনয়ের ভিত্তি তৈরি

মডেলিংয়ের পাশাপাশি তিনি থিয়েটারে কাজ শুরু করেন, যা তার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ছিল। থিয়েটার তাকে চরিত্র বিশ্লেষণ, সংলাপ বলার ধরণ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ—এমন নানা দিক শিখিয়েছে। থিয়েটারই তাকে শিল্পের গভীরে নিয়ে যায় এবং বুঝায় যে অভিনয় শুধুই সৌন্দর্য বা স্টাইল নয়; এটি আবেগ, গল্প ও দর্শকের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার একটি শিল্প। এ সময়ের অভিজ্ঞতা তার ভিতরের শিল্পীকে শক্তিশালী করেছে এবং তাকে বড় পর্দায় অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত করেছে।

চলচ্চিত্রে অভিষেক: ‘নো ডরাই’ ও প্রথম সাফল্যের বিস্ফোরণ

২০১৯ সাল সুনেরাহর জীবনে এক ঐতিহাসিক বছর। এ বছর তিনি অভিনয় করেন তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নো ডরাই’—এ, যেখানে তিনি আয়েশা নামের এক সাহসী সার্ফার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। চরিত্রটির জন্য তাকে সার্ফিং শেখা, কঠিন আবহাওয়ায় শুটিং করা এবং একটি শক্তিশালী নারীর জীবনসংগ্রাম ফুটিয়ে তোলার মতো শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয় এতটাই প্রশংসিত হয় যে তিনি প্রথম সিনেমাতেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সেরা অভিনেত্রী হিসেবে। দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে খুব কম অভিনেত্রী প্রথম সিনেমায় এমন সম্মান অর্জন করেছেন। ‘নো ডরাই’ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় — তাকে কেবল একজন অভিনেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, বরং জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনে দাঁড় করিয়েছে।

পরবর্তী সময়ের চলচ্চিত্র ও কাজের বিস্তার

‘নো ডরাই’-এর সাফল্যের পর সুনেরাহ পিছনে ফিরে তাকাননি। তিনি একের পর এক ভিন্নধর্মী কাজ শুরু করেন। ২০২২ সালে তিনি অভিনয় করেন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’—তে। ছবিটি ভয়ের সঙ্গে মানবিক অনুভূতি মিশিয়ে একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যেখানে সুনেরাহ আবারও তার অভিনয়ের দক্ষতা প্রদর্শন করেন। ২০২৩ সালে তিনি বড় বাজেটের সিনেমা ‘অন্তর্জাল’—এ অভিনয় করেন; এখানে ডিজিটাল যুদ্ধ, সাইবার জগত ও থ্রিলারের মেলবন্ধন ছিল চলচ্চিত্রটির মূল শক্তি। তিনি নতুন প্রকল্পে যুক্ত হতে শুরু করেছেন এবং বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ক্রমাগত উন্নতি, বৈচিত্র্যময় চরিত্র বেছে নেওয়া এবং নিজেকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা—এসবই তাকে তরুণ প্রজন্মের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

নুহাশের চোখ দেখলেই আমি বুঝতে পারি ও কী চাচ্ছে: সু...

ব্যক্তিগত জীবন ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সুনেরাহর ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত জীবনও বহুবার মিডিয়ার আলোচনায় এসেছে। কখনো তার সম্পর্ক, কখনো সোশ্যাল মিডিয়ার গুঞ্জন—এসব নিয়ে নানা খবর ছড়িয়েছে। কিন্তু তিনি সর্বদা নিজের অবস্থান পরিষ্কার রেখেছেন। বারবার তিনি বলেছেন যে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মিথ্যাচার বা গুজব তিনি সহ্য করেন না। তার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—শিল্পীর কাজ বিচার হবে তার অভিনয় ও কাজের মাধ্যমে, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নয়। এই দৃঢ়তা ও পরিপক্কতা তার ব্যক্তিত্বকে আরও শক্তিশালী করেছে। নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করা এবং সামাজিক চাপের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো—এগুলো একজন শিল্পীর জন্য যেমন কঠিন, তেমনি প্রয়োজনীয়। সুনেরাহ সেই দায়িত্ব সচেতনভাবে পালন করে আসছেন।

চ্যালেঞ্জ, সংগ্রাম ও দৃঢ়তা

যে কোনো তারকার জীবনেই চ্যালেঞ্জ থাকে—সুনেরাহর ক্ষেত্রেও তাই। নতুন প্রতিভার আগমন, প্রতিযোগিতা, কঠোর সমালোচনা—এসব তাকে বারবার নিজের দিকে ফিরে তাকাতে বাধ্য করেছে। একজন তরুণ অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম ছবিতে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া তাকে উচ্চমান ধরে রাখার দায়িত্ব দিয়েছে। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্ক, সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক মন্তব্য এবং নারীবিষয়ক স্টেরিওটাইপ—এসব অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। তবুও সুনেরাহ সবসময় নিজের কাজকে এগিয়ে রেখে নিয়মিত পরিশ্রম করে নিজেকে উন্নত করার পথে অগ্রসর হয়েছেন। তার দৃঢ়তা, মনোবল ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাকে সব বাধা পেরিয়ে সামনে যেতে সাহায্য করেছে।

বর্তমান সময় ও ভবিষ্যতের পথচলা

২০২৫ সালে সুনেরাহ বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত এবং সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী। তিনি নতুন চলচ্চিত্র, ওয়েব কনটেন্ট ও আন্তর্জাতিক প্রকল্প—বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত হচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার উপস্থিতি, ফ্যাশন সেন্স এবং বিভিন্ন শো ও ফটোশুটে অংশগ্রহণ সবই তাকে আরও জনপ্রিয় করেছে। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি নাচ, মডেলিং ও অভিনয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে নিজেকে বহুমাত্রিকভাবে উপস্থাপন করছেন। আগামী দিনে তিনি আরও বড় বাজেটের সিনেমা, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও ভিন্নধর্মী চরিত্রে কাজ করে বাংলাদেশের সিনেমাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান এবং নিজেকে একটি গ্লোবাল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।

সুনেরাহ তার জীবনের প্রতিটি দিনকে লক্ষ্য, পরিশ্রম ও স্বপ্নের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি দিন তার কাছে একটি চলমান অনুশীলন — নিজেকে পরিণত করার একটি ধারা। শৃঙ্খলা তার দৈনন্দিন জীবনের মূল ভিত্তি, যা তাকে পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।

তিনি প্রতিদিন নাচ, অভিনয়, শরীরচর্চা, স্ক্রিপ্ট পড়া ও ক্যামেরার ভাষা বোঝার মতো বিষয়গুলোর অনুশীলন করেন। এসব অভ্যাস তাকে কেবল দক্ষ করে না, বরং একজন শিল্পীর মতো ভিতর থেকে আরও পরিপক্ব করে তোলে। শুটিংয়ের দিনগুলোতে তিনি সময়ানুবর্তিতা, পেশাদার আচরণ এবং সহকর্মীদের প্রতি সম্মান অগ্রাধিকার দেন — এসব তাকে দলের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তার ক্যারিয়ারের বৈশিষ্ট্য হলো বৈচিত্র্য: নৃত্যশিল্পী হিসেবে শুরু, মডেলিং, থিয়েটার এবং চলচ্চিত্র—প্রতিটি স্তরে তিনি নিজেকে নতুনভাবে গড়েছেন। থিয়েটার তাকে শিখিয়েছে চরিত্র নির্মাণ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও দর্শকের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা; মডেলিং দিয়েছে আত্মবিশ্বাস, ক্যামেরার সামনে স্বতঃস্ফূর্ততা এবং পেশাদারিত্ব; এবং চলচ্চিত্র তাকে দিয়েছে বৃহৎ দর্শক, প্রশংসা ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি।

ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি দৃঢ় ও আত্মসম্মানী। বিতর্ক ও গুজবের মধ্যেও তিনি তার মূল্যবোধ ও গোপনীয়তা বজায় রেখেছেন। তার স্থিরতা ও মানসিক শক্তি তাকে একজন সমসাময়িক, পরিশ্রমী ও সচেতন শিল্পী হিসেবে প্রতিপন্ন করেছে। তিনি বিশ্বাস করেন প্রতিটি দিনই উন্নতির দিন এবং প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই তাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে — তার প্রতিটি পদক্ষেপই অনুপ্রেরণার উৎস।

তার পাঁচটি চলচ্চিত্র: বিস্তৃত বিশ্লেষণ

শুটিংয়ে আহত সুনেরাহ

১. নো ডরাই (২০১৯)

সুনেরাহর চলচ্চিত্রজীবনের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল ‘নো ডরাই’। এই চলচ্চিত্রে তিনি আয়েশা নামের এক সার্ফার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে সমাজিক বাঁধা, পারিবারিক চাপ ও শারীরিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে ওঠে। চরিত্রটির জন্য তাকে সার্ফিং শেখা এবং ব্যাপক শারীরিক প্রস্তুতি নিতে হয়। সমুদ্রের ঢেউ, বিপদসংকুল জোয়ার ও কঠিন লোকেশন—এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি চরিত্রটিকে প্রাণবন্ত করেছেন। দর্শক তার অভিনয়ে আয়েশার ব্যথা, উৎসাহ, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার মুহূর্তগুলো অনুভব করেছেন। এই চলচ্চিত্র তাকে জাতীয় পুরস্কার এনে দিয়েছে এবং তাকে দেশের সেরা অভিনেত্রীদের কাতারে স্থান করে দিয়েছে। গল্পের শক্তি, সিনেমাটোগ্রাফি, সংলাপ ও তার শরীরী ভাষা মিলেমিশে এই চলচ্চিত্রকে স্মরণীয় করে রেখেছে।

২. মশারি (২০২২)

‘মশারি’ একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ভৌতিক চলচ্চিত্র, যার ভিতরে সামাজিক বাস্তবতা ও মানবিক সম্পর্কের গভীর আবেগ লুকিয়ে আছে। সুনেরাহ এখানে বড় বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন; চরিত্রটি এক অদ্ভুত ভাইরাসের পরিবেশে ছোট বোনকে বাঁচাতে সংগ্রাম করে। পুরো গল্পটি একটি মশারির ভেতরে থাকা দুই নারীর সংগ্রামের মাধ্যমে এগিয়ে যায়—ভয়, ভালোবাসা ও বেঁচে থাকার লড়াইয়ের আবেদন নিয়ে। এই চরিত্রে তিনি সংযত আবেগ ও নীরব প্রকাশের মাধ্যমে ভয়ের অনুভূতিকে দক্ষভাবে ফুটিয়েছেন। ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয় এবং তাকে আন্তর্জাতিক দর্শকমণ্ডলীতেও পরিচিত করে।

৩. অন্তর্জাল (২০২৩)

‘অন্তর্জাল’ একটি সাইবার থ্রিলার চলচ্চিত্র, যেখানে সুনেরাহ আধুনিক ও প্রযুক্তি সচেতন এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গল্পে সাইবার যুদ্ধ, হ্যাকিং, ডিজিটাল আক্রমণ ও জাতীয় নিরাপত্তা—all জড়িত ছিল এবং তার চরিত্র কাহিনির একজন মূল অংশ ছিল। এই চলচ্চিত্রে তাকে উচ্চগতির ডায়লগ, প্রযুক্তিগত শব্দভাণ্ডার ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নাটকীয়তা নিয়ে কাজ করতে হয়। বড় বাজেট, বড় শিল্পী দল এবং প্রযুক্তিনির্ভর কাহিনি—এসব মিলিয়ে এই সিনেমাটি তার ক্যারিয়ারের একটি সাহসী পদক্ষেপ ছিল। তিনি প্রমাণ করেছেন যে তিনি শুধু আবেগঘন বা নাটকীয় চরিত্রেই দক্ষ নন, বরং আধুনিক থ্রিলারেও সফলভাবে নিজ অবস্থান তৈরি করতে পারেন।

শুটিংয়ের সময় গুরুতর আহত সুনেরাহ - Bangla news

৪. দাগী

‘দাগী’ সুনেরাহর ক্যারিয়ারের একটি নতুন অধ্যায় হতে যাচ্ছে। এখানে তিনি এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন যা সামাজিক ও মানসিক সংকটের মধ্য দিয়ে যায়—শরীর ও মন দুটোই বহন করছে অদৃশ্য দাগ। চরিত্রটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক এবং তাকে ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। শোনা যায়, তিনি চরিত্রের জন্য শুটিংয়ের আগে মনস্তাত্ত্বিক রেফারেন্স সংগ্রহ করছেন, ডায়েরি লিখছেন এবং দৈনন্দিন আচরণেও কিছু পরিবর্তন আনছেন। এই চলচ্চিত্র তার অভিনয়ের গভীরতা ও চরিত্রপ্রস্তুতির দিককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

৫. উৎসব 

‘উৎসব’ একটি আবেগঘন নাট্যধর্মী সিনেমা, যেখানে সুনেরাহ একজন ভাঙনের মধ্যে থাকা তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করছেন—যিনি পরিবারের উৎসব, স্মৃতি ও সম্পর্কের দ্বন্দ্বের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন। ছবিটি পরিবারকেন্দ্রিক হলেও চরিত্রটি বহুস্তরীয় আবেগ বহন করে—নিরাশা, ভালোবাসা, ক্ষোভ, অসহায়ত্ব ও আশা। চরিত্রটির মাধ্যমে তিনি দেখাচ্ছেন কিভাবে পরিবারের ভাঙনের মধ্যেও একজন নারী নিজের পথ খুঁজে নিতে পারে। এটি তার অভিনয় জীবনে আরেকটি আবেগঘন অধ্যায় যুক্ত করবে, যা দর্শকের হৃদয়ে স্থান করে নেবে।

সুনেরাহ বিনতে কামাল—একটি নাম যার শুরু হয়েছিল নাচ দিয়ে, পরিচিতি এসেছিল মডেলিংয়ে এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অভিনয় জগতে। তার জীবনের গল্প পরিশ্রম, প্রতিভা, দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের গল্প। শৈশবের মঞ্চ থেকে জাতীয় পুরস্কার জয়—এই যাত্রাপথ দেখায় যে স্বপ্ন যদি বাস্তব এবং পরিশ্রম ধারাবাহিক হয়, তবে সাফল্য আসবেই। তার সাহসী সিদ্ধান্ত, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা এবং ব্যক্তিত্বকে অটুট রাখার মানসিকতা আজ তাকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে তিনি কেবল একজন অভিনেত্রী নয়, বরং একজন সাংস্কৃতিক আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন—এমন প্রত্যাশা তার ভক্তদের রয়েছে।

 

#সুনেরাহবিনতেকামাল #সুনেরাহ #অভিনয় #নৃত্য #মডেলিং #চলচ্চিত্র #Feature #বাংলাচলচ্চিত্র #শিল্পীরযাত্রা