নস্টালজিয়ার ভরসায় টিকে থাকা এক শতবর্ষী ব্র্যান্ড
অনেক মার্কিন পরিবারের জন্য নীল-সাদা ছোট্ট জিফি কর্ন মাফিন মিক্স এখন থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রায় বদলাবে না এমন রেট্রো ডিজাইনের কার্টন বাজারে এসেছে বহু দশক আগে, কিন্তু এখনো প্রতি নভেম্বরেই সুপারশপের তাক থেকে দ্রুত উধাও হয়ে যায়। সেই মিক্স দিয়েই তৈরি হয় নরম কর্নব্রেড, ধোঁয়া ওঠা ক্যাসেরোল বা স্টাফিং; যেগুলো পরিবারিক ভোজ, কমিউনিটি ডিনার ও চার্চ পটলাকের টেবিলে গরম গরম পৌঁছে যায়।
এই পরিচিত বাক্সটির পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত ১৩৭ বছরের পুরোনো এক পারিবারিক মালিকানাধীন কোম্পানি, যে এখনো বৈশ্বিক খাদ্যশিল্পের বড় অংশকে নাড়া দেওয়া অনেক ট্রেন্ড থেকে দূরে আছে। প্রতিদ্বন্দ্বীরা যেখানে গ্লুটেন-ফ্রি, কিটো বা নানা গুরমে মিশ্রণ আর চকচকে প্যাকেজিংয়ের দৌড়ে নামছে, জিফি সেখানে ধরে রেখেছে সরলতা ও স্মৃতিকাতরতা। পণ্যের সংখ্যা সীমিত, দাম তুলনামূলক কম; দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্মিত লাখো রান্নাঘরে ব্র্যান্ডটি টিকে আছে মূলত অভ্যাস ও মুখে মুখে প্রচারের ওপর ভর করে। বহু পরিবারে এখনো দাদিমার “গোপন” কর্নব্রেড রেসিপি একই ছোট্ট বাক্স দিয়ে শুরু হয়।
সাশ্রয়ী আরামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা উৎসবের রাজনীতি
খাদ্য বিশ্লেষকদের মতে, জিফির টিকে থাকা মূলত সঠিক সময় ও আস্থার ফল। বিংশ শতকের মাঝামাঝি, যখন আরও বেশি নারী কর্মজীবনে যাচ্ছিলেন এবং ঘরের রান্না দ্রুত ও সহজ করার চাপ বাড়ছিল, তখনই কর্ন মাফিন মিক্স জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মাত্র একটি ডিম আর সামান্য দুধ মিশিয়ে কয়েক মিনিটে ওভেনে গরম কর্নব্রেড বানানো যেত; যা ব্যস্ত জীবনে বড় সহায়তা দেয়, আবার “পুরোপুরি রেডিমেড” খাবারের অপরাধবোধও কিছুটা কমিয়ে দেয়। একেক পরিবার নিজেদের মতো করে ক্যানের ভুট্টা, চিজ, জলাপেনো বা অতিরিক্ত চিনি যোগ করে নতুন স্বাদ বানিয়েছে এবং সেগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে গেছে।
কোম্পানিটিও সেই স্মৃতি ধরে রাখতে সচেষ্ট। একই ছোট শহরে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া এবং বছরের পর বছর একই স্বাদ বজায় রাখা তাদের মূল বার্তা। সুপারশপের লম্বা তাক যখন নতুন নতুন ব্র্যান্ড ও স্বাস্থ্যগত দাবি দিয়ে ভরে যাচ্ছে, তখন অনেক ক্রেতার কাছে আগের মতোই স্বাদ পাওয়ার নিশ্চয়তা বড় আকর্ষণ। আরও একটি বাস্তবতা হলো, মুদ্রাস্ফীতির এই সময়ে কোনো সস্তা মিক্স দিয়ে বড় পাত্র ভরতে পারা, বিশেষ করে যখন ফুড ব্যাংক ও কমিউনিটি কিচেনে বেকিং মিক্সই দ্রুততম হারে শেষ হয়ে যায়।
‘সস্তা খাবার’ ধারণা আর যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তবতা
তবে জিফির গল্প শুধু আরামদায়ক স্মৃতির নয়, বরং “সস্তা খাবার” নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রশ্নগুলোর সঙ্গেও জড়িয়ে আছে। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের বাজারকে অনেক পরিবারের জন্য চাপের উৎস বানিয়েছে; অনেকেই এখন পছন্দের পদ নয়, বরং বাজেট বাঁচানোকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। একটি কমদামি মিক্স দিয়ে টেবিলে অতিরিক্ত একটি ডিশ যোগ করা তখন কৌশলগত সিদ্ধান্তের মতো হয়ে ওঠে। পুষ্টিবিদেরা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এমন প্যাকেটজাত মিশ্রণ একা খাদ্য নিরাপত্তার সমাধান নয়; তাজা সবজি ও প্রোটিনের ঘাটতি সেখানেই থেকে যায়।
অন্যদিকে পরিচিত, সহজ রেসিপি মানসিক চাপ কমায়—বিশেষ করে যারা একাধিক কাজ বা পরিচর্যার দায়িত্ব সামলান তাদের জন্য। বহু অভিবাসী ও সংখ্যালঘু পরিবার নিজেদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশে কর্নব্রেড জায়গা করে নিয়েছে; সেখানে ছোট্ট জিফি বাক্স সাংস্কৃতিক হুমকি নয়, বরং মিশ্র পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। নতুন প্রজন্মের রাঁধুনিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই পুরোনো মিক্স দিয়ে ব্রাউনি, ডেজার্ট বা ব্রাঞ্চ ডিশ বানিয়ে ভাইরাল করছেন, যা পুরোনো ব্র্যান্ডটিকে আবার নতুন চোখে দেখাচ্ছে। যতদিন থ্যাঙ্কসগিভিং পরিবার, গল্প আর আরামদায়ক খাবারের উৎসব হয়ে থাকবে, ততদিন কোনো না কোনো টেবিলে হয়তো এমনই এক পাত্র সোনালি কর্নব্রেডের জন্য জায়গা থাকবে, যার শুরু একটি ছোট্ট কার্টন থেকে।
Sarakhon Report 



















