সিক্যুয়েল ক্লান্তির মাঝেও রেকর্ড ভাঙা সূচনা
হলিউডে যখন সিক্যুয়েল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্লান্তির কথা বারবার উঠছে, ঠিক তখনই ইউনিভার্সাল পিকচার্স সিদ্ধান্ত নেয় জনপ্রিয় ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল ‘উইকেড’–কে এক নয়, দুইটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবিতে ভাগ করে বানাবে। তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, দর্শক কি আদৌ দু’টি পৃথক ছবি দেখতে হলে আসবেন? নতুন বক্স অফিস হিসেবে অন্তত দ্বিতীয় পর্ব ‘উইকেড: ফর গুড’ সেই সংশয়ের বড় অংশই উড়িয়ে দিয়েছে। উত্তর আমেরিকার প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ভাঙা উদ্বোধনী আয় করেছে; পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রথম সপ্তাহেই শক্ত অবস্থান নিয়েছে। গত বছরের প্রথম ছবির সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়ে এই ফল দেখাচ্ছে, গল্প ও চরিত্র ঠিকভাবে কাজ করলে দর্শক এখনও দুই ভাগে বলা কাহিনীতেও বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত।
শিল্পবিশ্লেষকেরা বলছেন, বিশেষ করে যখন বড় বাজেটের অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি সিরিজ পরপর হতাশাজনক ফল দিচ্ছে, তখন ‘উইকেড’–এর এই রেজাল্ট স্টুডিওগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল। জানা গেছে, দুই ছবির প্রযোজনা ও বিপণনে ইউনিভার্সাল কয়েক শ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ করেছে; তাদের ধারণা ছিল, থিয়েটার সংস্করণের বিশাল ভক্তগোষ্ঠী, সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা এবং সিঞ্চিয়া এরিভো ও আরিয়ানা গ্রান্দের তারকা প্রভাব মিলিয়ে প্রতিটি পর্বকে আলাদা ইভেন্ট বানানো যাবে। ‘উইকেড: ফর গুড’–এর প্রথম সপ্তাহের দর্শক জরিপে দেখা গেছে, তরুণী দর্শক ও দীর্ঘদিনের মিউজিক্যাল–ভক্তদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে বেশি, যে শ্রোতা–গোষ্ঠীকে হলিউড সবসময় ধারাবাহিকভাবে সন্তুষ্ট করতে পারে না।

মঞ্চ থেকে স্ট্রিমিং, সাউন্ডট্র্যাক থেকে মার্চেন্ডাইজ
শুধু টিকিট বিক্রিই নয়, ছবিটি আরও নানা পথে অর্থ ও প্রভাব তৈরি করতে প্রস্তুত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ‘উইকেড: ফর গুড’–এর সাউন্ডট্র্যাক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে দ্রুত এগোচ্ছে; নতুন দুটি গানসহ পুরোনো জনপ্রিয় ট্র্যাকগুলো সামাজিক মাধ্যমে রিল ও কাভারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাচ্ছে। পাশাপাশি কস্টিউম ও বিউটি ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে সীমিত সংস্করণের পোশাক–অ্যাক্সেসরিজ—বিভিন্ন মার্চেন্ডাইজ সহযোগিতাও ছবির মুক্তির সময়কে ঘিরে সাজানো হয়েছে। ইউনিভার্সালের জন্য এর মানে দাঁড়াচ্ছে, ‘উইকেড’ শুধু একটি মুক্তির উইকেন্ড নয়; থিয়েটার, মিউজিক ও স্ট্রিমিং মিলিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে আবার শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া।
অবশ্যই এই সাফল্য দেখে অন্য সব স্টুডিও একযোগে গল্পকে দুই ভাগে ভাগ করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে, এমন আশা করাও ভুল হবে। তবে প্রযোজক ও নির্মাতাদের সামনে কিছু স্পষ্ট শিক্ষা হাজির হয়েছে—থিয়েটার থেকে আসা একনিষ্ঠ ফ্যানবেস, নারীকেন্দ্রিক শক্তিশালী গল্প এবং ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের পাশাপাশি আবেগঘন চরিত্র–ভ্রমণকে অগ্রাধিকার দেওয়া; এগুলো মিলেই হয়তো দর্শকের আস্থা তৈরি করেছে। ২০২৫ সালের ঠাসা স্লেট—মার্ভেল–ধাঁচের সুপারহিরো সিক্যুয়েল, ভিডিও গেম অ্যাডাপটেশন আর কে–পপ তারকাদের ঘিরে নতুন ড্রামা ছবি—সবকিছুর ভিড়ে ‘উইকেড: ফর গুড’ প্রমাণ করে দিল, দর্শক এখনও দুই পর্বে বলা বড় কাহিনি দেখতে রাজি, যদি তারা বিশ্বাস করেন গল্পকাররা বিষয়টি যত্ন করে বানাচ্ছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















