মিরাল ডেস্টিনেশনের সিইও লিয়াম ফাইন্ডলে যেন সবসময়ই দৌড়ের ওপর থাকেন। তিনি ঘুম থেকে উঠেই নতুন নতুন আইডিয়ায় ভরে যান—এতটাই যে সকালের নাশতার সময়ও পান না। তার কল্পনাশক্তিই তার প্রকৃত জ্বালানি। আর সেই কল্পনাই গত সাত বছরে আবুধাবিকে দিয়েছে নতুন এক বিনোদন–পরিচয়।
ইয়াস আইল্যান্ডকে বিশ্বমানের পারিবারিক গন্তব্যে পরিণত করতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন ওয়ার্নার ব্রাদার্স ওয়ার্ল্ড, সিওয়ার্ল্ড আবুধাবি, ফেরারি ওয়ার্ল্ডের সম্প্রসারণ, ইয়াস ওয়াটারওয়ার্ল্ড উন্নয়ন এবং হ্যারি পটার–থিমযুক্ত ল্যান্ড তৈরির উদ্যোগে। সবচেয়ে আলোচিত অর্জন—আবুধাবিতে ডিজনির আগমন এবং সম্পূর্ণ নিমজ্জনমূলক ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস: দ্য এক্সপেরিয়েন্স’ চালু করা।
তিনি শান্তভাবে বলেন, “আমরা উত্তরাধিকার তৈরি করছি। আগামী ৩০–৪০ বছর এই গন্তব্য নিয়ে কথা বলবে সবাই।”
স্ট্রেঞ্জার থিংস: ব্যক্তিগত এক সাফল্য
স্ট্রেঞ্জার থিংস এক্সপেরিয়েন্সটি তার কাছে শুধু পেশাগত নয়, ব্যক্তিগতও। এটাই ছিল তার পরিবারে প্রথম কিশোর–প্রাপ্তবয়স্কদের শো, যা তারা একসাথে দেখেছেন। তিনি বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমার সন্তানদের চোখে দেখার পাশাপাশি তাদের আমার শৈশবের অনুভূতিও দেয়।”
ইয়াস আইল্যান্ডজুড়ে ভেসে আসা রহস্যময় সাউন্ড এফেক্ট যেন কথোপকথনের মাঝেও ‘আপসাইড ডাউন’-এর উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। তার মতে, সাংস্কৃতিক নস্টালজিয়া, আধুনিক ডিজাইন এবং প্রজন্মের সংযোগ—এগুলোই মিরালের দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু।

“অতিথিই আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার,” তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন। “অতিথির অভিজ্ঞতা মুখের কথার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে—যা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের প্রচার থেকেও বেশি শক্তিশালী।”
এই বক্তব্য আরও দৃঢ় হয় যখন জানা যায়—রায়ান রেনল্ডস, জেসন মোমোয়া, কেভিন হার্ট, রণবীর সিং থেকে শুরু করে বহু তারকা ইয়াস আইল্যান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন।
সহযোগিতামূলক নেতৃত্ব
ফাইন্ডলের নেতৃত্বের ধরন বিনয়ী ও সহযোগিতামূলক। তিনি বলেন, “আমি কখনো মনে করি না আমি কক্ষে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি। সিদ্ধান্ত আসে সবার সম্মিলিত চিন্তা থেকে।”
মিরাল ডেস্টিনেশনের কর্মী বদলের হার মাত্র ৬ শতাংশ—এটিকে তিনি দলের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সৃজনশীল স্বাধীনতার ফল বলে মনে করেন। “আমরা সবাই একসঙ্গে কিছু জাদুকরি তৈরি করছি,” তিনি বলেন।
তার পরিবারও ইয়াস আইল্যান্ডের জীবনে মিশে আছে। সন্তানরা বড় হয়েছে থিমপার্ক, ওয়াটারপার্ক, গলফ কোর্স ও গো–কার্ট ট্র্যাকের মাঝে। “ওরা অতি বিশেষ জীবনযাপন করে,” তিনি হাসেন।
ডিজনির আগমন: সবচেয়ে কঠিন গোপনীয়তা
ইয়াস আইল্যান্ডে ডিজনি রিসোর্টের ঘোষণা ছিল বড় অর্জন। কিন্তু এটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন গোপনীয় কাজ—নিজ সন্তানদের কাছেও বলতে পারেননি!
যদিও প্রকল্পটি এখনও ডিজাইন পর্যায়ে, উচ্ছ্বাস ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ। ডিজনি যখন কোনো শহরে আসে, তখন সেটির সাংস্কৃতিক ও অভিজ্ঞতাবিষয়ক চরিত্রই বদলে যায়।

তিনি উত্তেজিত গলায় বলেন, “অনেক কিছু আসছে। নজর রাখুন।”
আবুধাবি: নিরাপদ ও বৈচিত্র্যময় গন্তব্য
১৫ বছর ধরে ইউএইতে বসবাস করা ফাইন্ডলে দেশটিকে বলেন “ইউটোপিয়া”।
তিনি মনে করেন, নিরাপত্তা—যা আবুধাবিকে টানা ১৫ বছর বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহরের স্বীকৃতি এনে দিয়েছে—পরিবারভিত্তিক পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ।
প্রতিযোগিতা নয়, নিজেই ‘নর্থ স্টার’
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিযোগী আমরা নিজেরাই। অন্যদের কাছ থেকে শিখি, কিন্তু দিকনির্দেশনা ঠিক করি নিজেদের মতো করে।”
ইউএই–এর ভেতরে বিভিন্ন গন্তব্যের মধ্যে সুস্থ সমন্বয়ও সাফল্যের বড় কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভারতীয় পর্যটকরা বিশেষ
ভারতে কয়েক বছর কাটানো ফাইন্ডলে ভারতীয় পর্যটকদের প্রতি বিশেষ টান অনুভব করেন। তিনি এক ঘটনা স্মরণ করেন—ফেরারি ওয়ার্ল্ডে ‘ফর্মুলা রোসা’তে ৭০–এর বেশি বয়সী এক ভারতীয় দম্পতিকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন।
তাদের উত্তরে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন—“হ্যাঁ, আমরা তো দ্রুততমটিই চাই।”
ফাইন্ডলের চোখে ভারতীয় পর্যটকের পরিচয়—“কৌতূহলী, সাহসী, নতুন কিছু চেষ্টা করতে প্রস্তুত।”
বিনোদনের বিস্তার: এফ১ থেকে মেটালিকা
ইয়াস আইল্যান্ডের বিনোদন শুধু রোলার কোস্টারে সীমাবদ্ধ নয়। এফ১ গ্র্যান্ড প্রিক্স এখন আবুধাবির বড় সাংস্কৃতিক উৎসব। বৈশ্বিক তারকাদের কনসার্ট দিয়ে উত্তাপ আরও বাড়ে।
তার ১২ বছরের সন্তানের প্রিয় ব্যান্ড এখন মেটালিকা—এবং এ বছর তারা দু’জনে একসঙ্গে লাইভ কনসার্ট দেখবে।
কেটি পেরি, বেনসন বুন, পোস্ট ম্যালোনসহ আরও তারকারা এই বছরের লাইনআপে রয়েছে।

গতি ও ভারসাম্য
ডিসেম্বরের ব্যস্ততা সবার মতো তাকেও চাপে ফেলে, তবে তিনি বলেন, “আমি এই গতিকে ভালোবাসি।”
তবে বিশ্রামও প্রয়োজন—“গ্রীষ্ম হলো শক্তি পুনরুদ্ধারের সময়।”
কার্যক্রম, প্রচারণা, নতুন আকর্ষণ—সবকিছুতেই তিনি এগিয়ে চলেছেন। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি কি অর্জন উদ্যাপন করেন? স্ট্রেঞ্জার থিংস, ডিজনি, আন্তর্জাতিক তারকা, ব্লকবাস্টার সিনেমার শুটিং…
তিনি চুপ করে কিছুক্ষণ পর বলেন, “দল অসাধারণ কাজ করেছে। আমরা গর্বিত।”
তারপরই তার কণ্ঠে ফিরে আসে উদ্যম—নতুন আইডিয়া, নতুন আকর্ষণ, নতুন আইপি—সবকিছু নিয়েই তার ভাবনা ছুটে চলে সামনে।
“আমরা তো সবে শুরু করেছি।”
ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি ও মিরালের অংশীদারিত্বে আবুধাবিতে চালু হচ্ছে বিশ্বমানের নতুন রিসোর্ট—ডিজনির সপ্তম গ্লোবাল থিম পার্ক গন্তব্য।
ইয়াস আইল্যান্ডের অন্যান্য আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইনডোর পার্ক ফেরারি ওয়ার্ল্ড, সিওয়ার্ল্ড আবুধাবি এবং বহু তারকার প্রচারণায় গ্লোবাল পর্যটকদের কাছে এর শক্তিশালী পরিচিতি।
#ইয়াস_আইল্যান্ড #আবুধাবি ডিজনি #স্ট্রেঞ্জার_#থিংস মিরাল লিয়াম_#ফাইন্ডলে ইউএই #পর্যটন
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















