কক্ষপথে প্রবেশের জাতীয় প্রয়োজন
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য নিজস্ব কক্ষপথে পৌঁছানোর সক্ষমতা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। বৈশ্বিক অর্থনীতি দ্রুত তথ্যভিত্তিক কাঠামোর দিকে এগোচ্ছে, আর কক্ষপথে অবস্থান করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করছে। তাই মহাকাশে স্বাধীনভাবে প্রবেশের ক্ষমতা কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়—এটি এখন জাতীয় কৌশলগত অপরিহার্য বিষয়। বিশ্বজুড়ে ডেটা সেন্টারের চাহিদা, সেগুলো চালাতে প্রয়োজনীয় শক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এবং কক্ষপথে এআই স্থাপনের সম্ভাবনা—সব মিলেই মহাকাশভিত্তিক অবকাঠামোর গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। এই বাস্তবতায় আমিরাতের নিজস্ব উৎক্ষেপণ সক্ষমতা গড়ে তোলা জরুরি জাতীয় অগ্রাধিকার হয়ে উঠছে।
মহাকাশে প্রবেশের স্বাধীনতার গুরুত্ব
যে কোনো দেশেরই মহাকাশে প্রবেশের অধিকার রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে খুব কম দেশই নিজস্ব উৎক্ষেপণ সক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনভাবে মহাকাশে পৌঁছানোর কৌশলগত মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেবল ভূরাজনৈতিক কারণেই নয়, বরং তথ্যনির্ভর পৃথিবীতে মহাকাশ-নির্ভর প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের কারণেও এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। ভবিষ্যতের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির চালিকা শক্তি যে মহাকাশ—এটি এখন প্রায় নিশ্চিত। তাই মহাকাশে প্রবেশ ক্ষমতা যে কোনো দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সুবিধার অন্যতম প্রধান উপাদান।

বিশ্বব্যাপী উৎক্ষেপণ ক্ষমতার বর্তমান অবস্থা
২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিক থেকে ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বিশ্বে মোট ৬২৫টি কক্ষপথ উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি উৎক্ষেপণ করেছে, এরপর রয়েছে চীন ও রাশিয়া। ভারত, জাপান, ইউরোপীয় দেশগুলো, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া ও ইসরায়েল মিলে বাকি অংশটি সম্পন্ন করেছে। এ সময় ৩৬টি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা মিলিয়ে মোট ৭,৮৯৪টি মহাকাশযান কক্ষপথে পাঠানো হয়েছে, যার মোট ওজন প্রায় ৪.৯ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। স্পেসএক্স, চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশন, রসকসমস, রকেট ল্যাব এবং ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স সবচেয়ে বেশি উৎক্ষেপণ পরিচালনা করেছে। এসব সংখ্যার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয় যে মহাকাশে প্রবেশ ক্ষমতা এখন একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র, যেখানে কেবল এগিয়ে থাকা দেশ ও সংস্থাগুলোর আধিপত্য রয়েছে।
অর্থনীতির আকার নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো নীতি ও বিনিয়োগ
পৃথিবীর ১৯৫টি দেশের মধ্যে মাত্র এক ডজন দেশ নিজস্ব উৎক্ষেপণ সক্ষমতা অর্জন করেছে, যা দেখায় অর্থনীতির আকার নয়—সাহসী বিনিয়োগ ও নীতিগত অগ্রাধিকারই এখানে মূল বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বিশাল হলেও তাদের উৎক্ষেপণ সক্ষমতা নেই। একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক শক্তি উল্লেখযোগ্য হলেও তারা এ সক্ষমতা অর্জন করেনি। কিন্তু ইরান, ইসরায়েল, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া নিজস্ব সক্ষমতা গড়ে তুলতে পেরেছে। অর্থনীতির তুলনামূলক ছোট আকার সত্ত্বেও তারা নীতিগত অগ্রাধিকার ও কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে সফল হয়েছে। এটি আমিরাতের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা—যে মহাকাশে প্রবেশ সক্ষমতা অর্জন করতে হলে অর্থনৈতিক আকার নয়, দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহসী পদক্ষেপই সবচেয়ে বড় উপাদান।

মহাকাশ খাতে আমিরাতের অগ্রগতি
২০১৯ সালে জাতীয় মহাকাশ কৌশল ঘোষণার পর থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে মহাকাশ তাদের কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ পরিকল্পনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ২০২২ সালে জাতীয় মহাকাশ তহবিল চালুর পর তারা আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে গেছে। আমিরাতের মহাকাশ সংস্থা এবং মোহাম্মদ বিন রাশিদ স্পেস সেন্টার দেশের মহাকাশ কর্মসূচিকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ মহাকাশ পরিষদ প্রতিষ্ঠা করার ফলে দেশের মহাকাশ খাতে পরিচালনা, নীতি ও দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে নতুন গতি এসেছে। গত এক দশকে আমিরাত স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, মানব মহাকাশযাত্রা, মঙ্গল মিশন ও চন্দ্র রোভার–সবক্ষেত্রেই আঞ্চলিক নেতৃত্বের অবস্থানে উঠে এসেছে।
এখন প্রয়োজন নিজস্ব উৎক্ষেপণ সক্ষমতা
তবে জাতীয় মহাকাশ কৌশলে এখনো আমিরাতের নিজস্ব কক্ষপথ উৎক্ষেপণ সক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। মহাকাশ খাতে দ্রুত অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে এখন সময় এসেছে সেই কৌশল হালনাগাদ করার। রকেটের মাধ্যমে বা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রযুক্তি যেমন স্পেস এলিভেটরের মাধ্যমে—যেভাবেই হোক, নিজস্ব উৎক্ষেপণ সক্ষমতা অর্জন আমিরাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও প্রযুক্তি-নির্ভর সুফল নিশ্চিত করবে। তথ্যনির্ভর অর্থনীতির ভবিষ্যৎ শক্তিশালী ও নিরাপদ রাখতে এটি সবচেয়ে কার্যকর পথ। সংযুক্ত আরব আমিরাত যদি এখনই এই উদ্যোগ গ্রহণ করে, তবে ভবিষ্যতের মহাকাশ-চালিত অর্থনীতি ও প্রযুক্তিতে তারা নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে।
# মহাকাশ #আমিরাত #উৎক্ষেপণক্ষমতা #মহাকাশনীতি #উপগ্রহ #আন্তর্জাতিকসম্পর্ক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















