দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘দুঃখজনক’ বলেছেন—যেখানে ট্রাম্প জানান, আগামী বছরের ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ করেন যে, জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত গত সপ্তাহের জি-২০ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের প্রতিনিধির কাছে জি-২০ সভাপতিত্ব হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এই কারণেই ২০২৬ সালের জি-২০ সম্মেলনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমন্ত্রণ দেওয়া হবে না।
জি-২০ বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর একটি ফোরাম, যেখানে সদস্য দেশগুলোকে আলাদা করে আমন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। তবে ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে কার্যত অংশগ্রহণ সীমিত করা সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি নিয়ে রামাফোসার প্রতিক্রিয়া
রামাফোসা এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জি-২০ বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে জোহানেসবার্গের নেতাদের সম্মেলনে যোগ দেয়নি। যদিও কিছু মার্কিন ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, যেহেতু পূর্ণাঙ্গ মার্কিন প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল না, তাই দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দপ্তরের কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কর্মকর্তার হাতে জি-২০ সভাপতিত্বের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
ট্রাম্পের ক্ষোভ ও বিতর্কিত দাবি
নিম্ন-প্রোফাইল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব হস্তান্তর হওয়ায় ট্রাম্প বিরক্ত হন বলে মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ নীতি এবং পররাষ্ট্রনীতির প্রতি তিনি আগেও বহুবার সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক হত্যা ও ভূমি দখল চলছে—যা দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বারবার ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণবিহীন হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বুধবার ট্রাম্প পুনরায় অভিযোগ তোলেন যে সরকার নাকি “শ্বেতাঙ্গ মানুষকে হত্যা করছে এবং এলোমেলোভাবে তাদের খামার দখল করতে দিচ্ছে”।

সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে
রামাফোসা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করলেও ট্রাম্প ভুল তথ্য ও বিকৃত দাবির ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে থাকছেন। ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টে আরও বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা নাকি “বিশ্বকে দেখিয়েছে তারা কোথাও সদস্য হওয়ার যোগ্য নয়” এবং ঘোষণা দেন যে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে তাদের প্রতি সব ধরনের অর্থায়ন ও ভর্তুকি তৎক্ষণাৎ বন্ধ করা হবে।
জি-২০ সদস্যের প্রতি সংহতির আহ্বান
দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা অন্যান্য জি-২০ সদস্যদের প্রতি সংহতি দেখানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের রাজনৈতিক চাপের মুখেও যেন জি-২০-এর অখণ্ডতা এবং সদস্য দেশগুলোর অধিকার রক্ষা করা হয়।
এই প্রথম আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি জানালেও ঘোষণাটি গৃহীত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে যে চলতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকা জি-২০ সভাপতিত্ব কে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে।
# দক্ষিণ আফ্রিকা #যুক্তরাষ্ট্র #জি-২০ সম্মেলন #ডোনাল্ড ট্রাম্প #সিরিল রামাফোসা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















