মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যান্ডুরিল ইন্ডাস্ট্রিজ সাম্প্রতিক পরীক্ষায় একাধিক ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর পরীক্ষায় তাদের আলটিয়াস ড্রোন দু’টি একই মাসে ভেঙে পড়ে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির আরেক জনপ্রিয় ড্রোন ‘ঘোস্ট’ মডেলও ইউক্রেন এবং সাম্প্রতিক সামরিক মহড়ায় সমস্যায় পড়েছে। এসব ঘটনা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
আলটিয়াস ড্রোনের পরীক্ষায় ব্যর্থতা
মাসের শুরুতে ফ্লোরিডার এগলিন এয়ার ফোর্স বেসে একটি মার্কিন সামরিক বিমানের মাধ্যমে আলটিয়াস ড্রোন পরীক্ষা করা হয়। আকাশে ওঠার পরপরই এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৮,০০০ ফুট নিচে ধেয়ে পড়ে। পরে আরেকটি আলটিয়াসও পৃথক পরীক্ষায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে।
বিমানবাহিনীর সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো এই ঘটনাগুলো প্রকাশ করা হয়।
অ্যান্ডুরিলের বৃদ্ধি ও যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোনের গুরুত্ব
ইউক্রেনে ড্রোনযুদ্ধ বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়ার কারণে অ্যান্ডুরিল দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে কোম্পানিটির বাজারমূল্য তিনগুণেরও বেশি বাড়ে এবং ৩০.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।

অ্যান্ডুরিল দাবি করে, আলটিয়াস ড্রোন নজরদারি, অস্ত্র বহন, দূরপাল্লার মিশন এবং দীর্ঘসময় আকাশে থাকার জন্য উপযোগী।
প্রতিষ্ঠাতা পামার লাকি জানান, আলটিয়াস ইতিমধ্যে “রুশ বাহিনীর শত শত মিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে” এবং তিনি তাইওয়ানে প্রথম ব্যাচ সরবরাহও করেছেন।
দাবি বনাম বাস্তবতা: ধারাবাহিক ব্যর্থতার প্রভাব
ধারাবাহিক পরীক্ষায় ব্যর্থতা এবং ইউক্রেনে ঘোস্ট ড্রোনের দুর্বলতা অ্যান্ডুরিলের যুদ্ধক্ষেত্র–প্রস্তুত প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
ইউক্রেনে ব্যবহৃত অধিকাংশ ড্রোনই স্থানীয়ভাবে তৈরি—২০২৪ সালে ব্যবহৃত ১০ লাখ ড্রোনের মধ্যে ৯৬ শতাংশই ইউক্রেনের নিজস্ব উৎপাদন।
অ্যান্ডুরিলের মুখপাত্র জানান, এসব ব্যর্থতা “বিচ্ছিন্ন ঘটনা” এবং শত শত পরীক্ষার স্বাভাবিক অংশ। তারা শেখা, উন্নয়ন এবং দ্রুত আপডেটের মাধ্যমে সক্ষমতা আরও উন্নত করতে চায়।
ঘোস্ট ড্রোন: ইউক্রেনে ব্যর্থতা ও নতুন সংস্করণ
যুদ্ধের শুরুতে অ্যান্ডুরিল প্রায় ৪০টি ঘোস্ট ড্রোন ইউক্রেনে পাঠায়। কিন্তু রুশ ইলেকট্রনিক হামলা ও স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন বিভ্রাটের কারণে এগুলো বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে।

পরে কোম্পানি ‘ঘোস্ট এক্স’ নামে উন্নত সংস্করণ সরবরাহ করে, যা পূর্বের সমস্যাগুলো সমাধানের দাবি করে।
ঘোস্ট এক্স-এর নতুন সমস্যাগুলো
২০২৫ সালের জানুয়ারির একটি সামরিক মহড়ায় ঘোস্ট এক্স মডেলকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা সৈন্যদের কাছাকাছি বিধ্বস্ত হতে দেখা যায়। পরবর্তীতে নিশ্চিত হওয়া ভিডিওটি জার্মানির হোহেনফেলস এলাকায় অনুষ্ঠিত মার্কিন সেনাবাহিনীর মহড়ায় ধারণ করা।
অ্যান্ডুরিল জানায়, রোটরের ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে এবং তা সংশোধন করা হয়েছে।
মার্কিন সেনাবাহিনী বলেছে, নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে “কঠিন অবতরণ, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং আবহাওয়াজনিত সমস্যা” স্বাভাবিক।
ইউক্রেনে আলটিয়াস ড্রোন
২০২৩ সালে ইউক্রেন প্রথম ১০০টির মতো আলটিয়াস পায়। ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যও ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তিতে ড্রোন সরবরাহের ঘোষণা দেয়।

যুক্তরাজ্য জানায়, ব্ল্যাক সি অঞ্চলে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ হবে। ইউক্রেনের নৌবাহিনীও এগুলো নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে।
অ্যান্ডুরিল বলছে, তারা শত শত সিস্টেম ইউক্রেনে পাঠিয়েছে এবং এগুলো বহু উচ্চমূল্যের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে সফল হয়েছে।
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে অ্যান্ডুরিল আরও উন্মুক্ত
প্রতিষ্ঠাতা পামার লাকি সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে জানতে চান, ব্যবহারকারীরা প্রতিষ্ঠানটির পর্দার পিছনের আরও তথ্য দেখতে চান কি না।
দুই দিন পর অ্যান্ডুরিল ‘ওমেন’ নামে নতুন নজরদারি ড্রোন ঘোষণা করে এবং পরে সেটির পরীক্ষামূলক বিধ্বস্ত হওয়ার ভিডিও প্রকাশ করে “উন্নয়নের শিক্ষা” শিরোনামে।
চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ড্রোন প্রযুক্তিতে অ্যান্ডুরিল প্রতিরক্ষা খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তবে সাম্প্রতিক ব্যর্থতাগুলো দেখিয়েছে যে যুদ্ধক্ষেত্রের কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে প্রযুক্তির সামঞ্জস্য আরও বাড়াতে হবে। দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য ড্রোনের যুগে প্রতিষ্ঠানটির জন্য ধারাবাহিক উন্নয়ন অপরিহার্য।
#অ্যান্ডুরিল #ড্রোন #আলটিয়াস #ঘোস্টএক্স #ইউক্রেনযুদ্ধ #মার্কিনপ্রতিরক্ষা #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















