পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কারাবন্দি অবস্থান নিয়ে তার পরিবার, রাজনৈতিক দল ও প্রাদেশিক নেতাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়েছে—এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় তার ছেলে কাসিম খান অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে ইমরানকে একটি ‘মৃত্যুকক্ষ’-এ একাকী বন্দি রাখা হয়েছে এবং তাদের কাছে তার জীবিত থাকার কোনো প্রমাণ নেই।
কাসিম খানের অভিযোগ: ‘মৃত্যুকক্ষে’ আটকে রাখা
কাসিম খান এক্সে পোস্ট করে জানান, তার বাবা ৮৪৫ দিন ধরে কারাবন্দি এবং গত ছয় সপ্তাহ ধরে সম্পূর্ণ একাকী একটি ‘ডেথ সেল’-এ রাখা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কাউকেই তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ইমরানের বোনদের বারবার সাক্ষাৎ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং ছেলেরাও কোনো যোগাযোগ বা জীবিত থাকার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না।
তার ভাষায়, “এই অন্ধকারে বন্দিত্ব কোনো নিরাপত্তা প্রটোকল নয়; বরং তার অবস্থার সত্য গোপন করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, ইমরানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে পাকিস্তান সরকার ও তাদের ‘হ্যান্ডলারদের’ জবাবদিহি করতে হবে।
এ ছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও গণতান্ত্রিক দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জীবিত থাকার প্রমাণ ও একাকী বন্দিত্ব অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান।

বোন নুরীন নিয়াজির অভিযোগ: কঠোর সেন্সরশিপ
ইমরান খানের বোন নুরীন নিয়াজি অভিযোগ করেন, পাকিস্তানে ভয়াবহ মাত্রার মিডিয়া সেন্সরশিপ চলছে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যম মালিকদের আটক ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
নিয়াজি বলেন, “সেন্সরশিপ এতটাই কঠোর যে সাংবাদিকদের এমনভাবে নির্যাতন করা হয়—যেন বের হওয়ার পর তারা কিছু বলতে না পারেন।” তার দাবি, বহু সাংবাদিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এবং তাদের পাসপোর্ট ও সম্পদও ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “হিটলারের সময়ের ঘটনা আমরা বইয়ে পড়েছি… আজ পাকিস্তানে তারই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে।”
একইসঙ্গে তিনি শেহবাজ শরিফ সরকারের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে বলেন, এই সরকার দুর্বল ও অজনপ্রিয়। পশ্চিমা দেশগুলো পাকিস্তানের ‘প্রতারণা’ সম্পর্কে জানলেও কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলেও মন্তব্য করেন।
পিটিআই নেতৃত্বের চাপ বৃদ্ধি
খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফ্রিদি টানা অষ্টমবার সাক্ষাৎ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর আদিয়ালা জেলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তবে পুলিশ তাকে ও পিটিআই কর্মীদের জেলের কাছে যেতে বাধা দেয়।
তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। “২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের প্রতিনিধিকে কেন আটকে রাখা হচ্ছে? এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির,” বলেন তিনি।
তার অভিযোগ, ইমরানের বোন, আইনজীবী ও চিকিৎসকরাও সাক্ষাতের অনুমতি পাচ্ছেন না।
পিটিআই নেতা জুলফি বুখারি এবং মেহর বানো কুরেশি সরকারের কাছে যথাযথ ও স্বচ্ছ বিবৃতি এবং পরিবারকে অবিলম্বে সাক্ষাতের অনুমতির দাবি জানান।
জেল কর্তৃপক্ষের জবাব: ‘গুজব ভিত্তিহীন’
আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, ইমরান খান সুস্থ আছেন এবং প্রয়োজনীয় সব সেবা পাচ্ছেন। তাকে কোথাও স্থানান্তর করা হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো খবরগুলোকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে জেল কর্তৃপক্ষ। বিদেশি কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে ইমরানের মৃত্যু-সম্পর্কিত মিথ্যা পোস্ট ছড়ানোর পর গুজব আরও বাড়ে, যার কোনো বিশ্বাসযোগ্য উৎস নেই।

বোনদের ওপর পুলিশের হামলার অভিযোগ
ইমরানের তিন বোন—নুরীন নিয়াজি, আলীমা খান ও ড. উজমা খান—অভিযোগ করেন, গত সপ্তাহে তারা জেলের বাইরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে বসলে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়। রাস্তার লাইট বন্ধ করে তাদের চুল ধরে টেনে ফেলা, মারধর করা ও ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
নিয়াজি দাবি করেন, চুল ধরে টেনে ফেলার কারণে তিনি আহত হন। তারা জানান, এক মাসের বেশি সময় ধরে সাক্ষাৎ না পাওয়ার প্রতিবাদেই অবস্থান কর্মসূচিতে বসেছিলেন।
জেল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক
আদিয়ালা জেল পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারের অধীনে, যার নেতৃত্বে আছেন মুখ্যমন্ত্রী মেরিয়ম নওয়াজ। তিনি দাবি করেন, ইমরানের সাক্ষাৎ ব্যবস্থার ওপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আগে ইমরান অভিযোগ করেছিলেন, জেলের বিষয়গুলো একটি সামরিক কর্নেল নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















