১২:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৫
তাইওয়ানে সৃজনশীল স্বাধীনতার খোঁজে হংকং লেখকেরা থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যা, ড্রোন–হেলিকপ্টারে উদ্ধার তৎপরতা; ইন্দোনেশিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে ৬১ জনের মৃত্যু রিয়াদ মেট্রো বিশ্বের দীর্ঘতম চালকবিহীন ট্রেন নেটওয়ার্কের রেকর্ড গড়ল পুলিশ ও এনজিও আইন তড়িঘড়ি পাস না করার আহ্বান ফখরুলের মালয়েশিয়ার পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ভারি বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা ও বিপজ্জনক ভ্রমণ পরিস্থিতির সতর্কতা হংকং-এর উঁচু ভবনে অগ্নিকাণ্ড: জরুরি পরিস্থিতিতে উচ্ছেদ কেন এত কঠিন দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা: ইন্দোনেশিয়া-থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ায় মৃত্যু বাড়ছে শেখ হাসিনার রায় পরবর্তী ধৈর্যে’র রাজনীতি ইমরান খানকে ‘ডেথ সেল’-এ একঘরে আটকে রাখার অভিযোগ: গুজবের মাঝে পরিবারের গভীর উদ্বেগ বরিশাল-ভোলা সেতুর দাবিতে শাহবাগ অবরোধে ভোলাবাসী

থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যা, ড্রোন–হেলিকপ্টারে উদ্ধার তৎপরতা; ইন্দোনেশিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে ৬১ জনের মৃত্যু

থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় সাম্প্রতিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। থাইল্যান্ডে সবচেয়ে খারাপ বন্যার মধ্যে ড্রোন ও হেলিকপ্টারের সাহায্যে আটকে পড়া মানুষদের কাছে খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অন্তত ১০০ জন নিখোঁজ আছে। উভয় দেশের সরকারি সংস্থা ও উদ্ধারকর্মীরা সময়ের বিরুদ্ধে লড়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।


থাইল্যান্ডে বন্যার অবস্থা

লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের নয়টি প্রদেশ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সরকার। প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হাজারো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে হাট ইয়াই শহর, যেখানে ২১ নভেম্বর এক দিনে ৩৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে—এটি গত ৩০০ বছরে শহরটির সর্বোচ্চ এক দিনের বৃষ্টিপাত। শহরের বিভিন্ন সড়ক, বাজার, বাসাবাড়ি, হাসপাতাল পানির নিচে তলিয়ে গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং হাজারো মানুষ ছাদে বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

Severe flooding in Thailand and Malaysia - November 26, 2025 | Reuters

উদ্ধার তৎপরতা জোরদার

মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সেনাবাহিনী একটি বিমানবাহী রণতরী, ২০টি হেলিকপ্টার এবং খাদ্য–ওষুধবাহী ট্রাক পাঠিয়েছে। সরকার নৌকা ও জেট স্কির জন্য জনসাধারণের কাছে জরুরি আহ্বান জানিয়েছে, কারণ পানিবন্দী মানুষের কাছে পৌঁছাতে প্রচলিত যানবাহন কার্যত অচল হয়ে গেছে। ড্রোন ব্যবহার করে পানিতে আটকে থাকা এলাকার অবস্থান নির্ণয় এবং দ্রুত সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে হাসপাতাল ও ঘরবাড়ির ছাদে আটকে থাকা মানুষদের খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। হাট ইয়াই শহরে পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করায় কর্তৃপক্ষের আশা, প্রবেশাধিকার বাড়বে এবং ধীরে ধীরে জরুরি সেবা পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে। তবুও সরকারি মুখপাত্র সিরিপং অঙ্গকাসাকুলকিয়াত স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের মতো কঠিন হবে।


মানুষের জীবনযাপন ও দুর্ভোগ

আকাশ থেকে ধারণ করা ফুটেজে দেখা গেছে হাট ইয়াই শহর বাদামি বন্যার পানিতে ডুবে আছে। রাস্তা–ঘাট অদৃশ্য হয়ে গেছে, ডুবে থাকা গাড়ি ও ট্রাকের পাশ ঘেঁষে ভারী ট্রাক ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে, আর মানুষ হাঁটু–সমান পানিতে হাঁটতে হাঁটতে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অনেক পরিবার কয়েক দিন ধরে খাবার ছাড়াই আটকা পড়ে আছে। ১৮ বছর বয়সী নাতাওয়াত চের্মমন্ত্রি জানান, তার নানী দুই–তিন দিন খাবার পাননি। তিনি শুনেছেন যে অবশেষে কিছু খাবার পৌঁছেছে, কিন্তু তিনি এখনো উদ্বিগ্ন। এদিকে পুলিশ প্রায় ১,০০০ বিদেশিকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে। একটি ইনডোর বাস্কেটবল অ্যারেনাকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছে। সেখানে ৭০ বছর বয়সী কৃতচাওয়াত সোথিয়ানানথাকুন কাঁদতে কাঁদতে জানান, কীভাবে তার বাড়িতে পানি বাড়তে বাড়তে ছাদ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তিনি বলেন, “আমাদের ছাদ থেকে নেমে নৌকায় উঠতে হয়েছে। কুকুরটিকে কোলে নিয়ে নেমে আবার ট্রাকে উঠতে হয়েছে… আমাদের সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে।”


মালয়েশিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি

থাইল্যান্ডের প্রতিবেশী মালয়েশিয়াতেও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। সাতটি অঙ্গরাজ্যে বন্যায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৪,০০০-এর বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বাধ্য হয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে ফিরে আসা ক্ষতিগ্রস্ত মালয়েশীয়দের ফেরাতে কন্টেইনার লরি ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ ছোট গাড়ি দিয়ে সীমান্ত এলাকার বন্যা অতিক্রম করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, জনপ্রিয় পর্যটন শহর হাট ইয়াইয়ে এখনও প্রায় ৫০০ মালয়েশীয় আটকে আছেন। পেরলিস রাজ্যের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৩ বছর বয়সী গণ কাসিম বলেন, তার বাড়ি চারদিকে ধানখেতের মাঝখানে হওয়ায় পানি বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে তিনি অনুভব করেছিলেন চারদিকে যেন সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে।

Thailand turns to drones, helicopters to help those trapped by floods | The Straits Times - newspaper - Read this story on Magzter.com

ইন্দোনেশিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব

সুমাত্রায় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে তীব্র বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে, যা তিনটি প্রদেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে ৬১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং অন্তত ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট, ভাঙা সেতু, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা এবং বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোর কারণে উদ্ধার অভিযান আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকারী দলের ভিডিওতে দেখা গেছে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে কাদামাটি ঘরবাড়ির সামনে জমে আছে, গলা–সমান পানিতে ভেসে যাচ্ছে বিভিন্ন জিনিসপত্র, আর ভারী বর্ষণের মধ্যে মানুষদের রাবারের নৌকায় করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম সুমাত্রার যাচাই করা ছবিতে দেখা গেছে, উদ্ধারকারীরা হাঁটু–সমান কাদায় মৃতদেহ বহন করছে এবং বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া গাড়িগুলো একটির ওপর আরেকটি উঠে গেছে।


আবহাওয়ার কারণ ও বিশ্লেষণ

আবহাওয়াবিদদের মতে, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই চরম আবহাওয়া দুটি সক্রিয় সিস্টেমের মিলিত প্রভাব—ফিলিপাইনে থাকা টাইফুন কোটো এবং মালাক্কা প্রণালীতে অস্বাভাবিকভাবে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ট্রপিক্যাল ঝড়গুলোর শক্তি কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে, ফলে ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন ও শক্তিশালী আবহাওয়ার চরম ঘটনা ঘটতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে আঘাত হানা টাইফুন ও প্রচুর বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতায় এই বন্যাগুলো দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার আরও দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। দুই দেশের বিশাল অঞ্চলজুড়ে বন্যা, ভূমিধস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মৃত্যু, নিখোঁজ, অবকাঠামোর ক্ষতি ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। উদ্ধার অভিযান অনেক স্থানে চললেও আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা এবং ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জ পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।


#থাইল্যান্ড #ইন্দোনেশিয়া #বন্যা #ঘূর্ণিঝড় #হাটইয়াই #সুমাত্রা #মালয়েশিয়া #দক্ষিণপূর্বএশিয়া #জলবায়ুপরিবর্তন #উদ্ধারঅভিযান #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

তাইওয়ানে সৃজনশীল স্বাধীনতার খোঁজে হংকং লেখকেরা

থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যা, ড্রোন–হেলিকপ্টারে উদ্ধার তৎপরতা; ইন্দোনেশিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে ৬১ জনের মৃত্যু

১১:০০:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় সাম্প্রতিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। থাইল্যান্ডে সবচেয়ে খারাপ বন্যার মধ্যে ড্রোন ও হেলিকপ্টারের সাহায্যে আটকে পড়া মানুষদের কাছে খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অন্তত ১০০ জন নিখোঁজ আছে। উভয় দেশের সরকারি সংস্থা ও উদ্ধারকর্মীরা সময়ের বিরুদ্ধে লড়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।


থাইল্যান্ডে বন্যার অবস্থা

লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের নয়টি প্রদেশ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সরকার। প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হাজারো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে হাট ইয়াই শহর, যেখানে ২১ নভেম্বর এক দিনে ৩৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে—এটি গত ৩০০ বছরে শহরটির সর্বোচ্চ এক দিনের বৃষ্টিপাত। শহরের বিভিন্ন সড়ক, বাজার, বাসাবাড়ি, হাসপাতাল পানির নিচে তলিয়ে গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং হাজারো মানুষ ছাদে বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

Severe flooding in Thailand and Malaysia - November 26, 2025 | Reuters

উদ্ধার তৎপরতা জোরদার

মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সেনাবাহিনী একটি বিমানবাহী রণতরী, ২০টি হেলিকপ্টার এবং খাদ্য–ওষুধবাহী ট্রাক পাঠিয়েছে। সরকার নৌকা ও জেট স্কির জন্য জনসাধারণের কাছে জরুরি আহ্বান জানিয়েছে, কারণ পানিবন্দী মানুষের কাছে পৌঁছাতে প্রচলিত যানবাহন কার্যত অচল হয়ে গেছে। ড্রোন ব্যবহার করে পানিতে আটকে থাকা এলাকার অবস্থান নির্ণয় এবং দ্রুত সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে হাসপাতাল ও ঘরবাড়ির ছাদে আটকে থাকা মানুষদের খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। হাট ইয়াই শহরে পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করায় কর্তৃপক্ষের আশা, প্রবেশাধিকার বাড়বে এবং ধীরে ধীরে জরুরি সেবা পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে। তবুও সরকারি মুখপাত্র সিরিপং অঙ্গকাসাকুলকিয়াত স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের মতো কঠিন হবে।


মানুষের জীবনযাপন ও দুর্ভোগ

আকাশ থেকে ধারণ করা ফুটেজে দেখা গেছে হাট ইয়াই শহর বাদামি বন্যার পানিতে ডুবে আছে। রাস্তা–ঘাট অদৃশ্য হয়ে গেছে, ডুবে থাকা গাড়ি ও ট্রাকের পাশ ঘেঁষে ভারী ট্রাক ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে, আর মানুষ হাঁটু–সমান পানিতে হাঁটতে হাঁটতে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অনেক পরিবার কয়েক দিন ধরে খাবার ছাড়াই আটকা পড়ে আছে। ১৮ বছর বয়সী নাতাওয়াত চের্মমন্ত্রি জানান, তার নানী দুই–তিন দিন খাবার পাননি। তিনি শুনেছেন যে অবশেষে কিছু খাবার পৌঁছেছে, কিন্তু তিনি এখনো উদ্বিগ্ন। এদিকে পুলিশ প্রায় ১,০০০ বিদেশিকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে। একটি ইনডোর বাস্কেটবল অ্যারেনাকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছে। সেখানে ৭০ বছর বয়সী কৃতচাওয়াত সোথিয়ানানথাকুন কাঁদতে কাঁদতে জানান, কীভাবে তার বাড়িতে পানি বাড়তে বাড়তে ছাদ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তিনি বলেন, “আমাদের ছাদ থেকে নেমে নৌকায় উঠতে হয়েছে। কুকুরটিকে কোলে নিয়ে নেমে আবার ট্রাকে উঠতে হয়েছে… আমাদের সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে।”


মালয়েশিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি

থাইল্যান্ডের প্রতিবেশী মালয়েশিয়াতেও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। সাতটি অঙ্গরাজ্যে বন্যায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৪,০০০-এর বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বাধ্য হয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে ফিরে আসা ক্ষতিগ্রস্ত মালয়েশীয়দের ফেরাতে কন্টেইনার লরি ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ ছোট গাড়ি দিয়ে সীমান্ত এলাকার বন্যা অতিক্রম করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, জনপ্রিয় পর্যটন শহর হাট ইয়াইয়ে এখনও প্রায় ৫০০ মালয়েশীয় আটকে আছেন। পেরলিস রাজ্যের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৩ বছর বয়সী গণ কাসিম বলেন, তার বাড়ি চারদিকে ধানখেতের মাঝখানে হওয়ায় পানি বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে তিনি অনুভব করেছিলেন চারদিকে যেন সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে।

Thailand turns to drones, helicopters to help those trapped by floods | The Straits Times - newspaper - Read this story on Magzter.com

ইন্দোনেশিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব

সুমাত্রায় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে তীব্র বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে, যা তিনটি প্রদেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে ৬১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং অন্তত ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট, ভাঙা সেতু, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা এবং বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোর কারণে উদ্ধার অভিযান আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকারী দলের ভিডিওতে দেখা গেছে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে কাদামাটি ঘরবাড়ির সামনে জমে আছে, গলা–সমান পানিতে ভেসে যাচ্ছে বিভিন্ন জিনিসপত্র, আর ভারী বর্ষণের মধ্যে মানুষদের রাবারের নৌকায় করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম সুমাত্রার যাচাই করা ছবিতে দেখা গেছে, উদ্ধারকারীরা হাঁটু–সমান কাদায় মৃতদেহ বহন করছে এবং বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া গাড়িগুলো একটির ওপর আরেকটি উঠে গেছে।


আবহাওয়ার কারণ ও বিশ্লেষণ

আবহাওয়াবিদদের মতে, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই চরম আবহাওয়া দুটি সক্রিয় সিস্টেমের মিলিত প্রভাব—ফিলিপাইনে থাকা টাইফুন কোটো এবং মালাক্কা প্রণালীতে অস্বাভাবিকভাবে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ট্রপিক্যাল ঝড়গুলোর শক্তি কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে, ফলে ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন ও শক্তিশালী আবহাওয়ার চরম ঘটনা ঘটতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে আঘাত হানা টাইফুন ও প্রচুর বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতায় এই বন্যাগুলো দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার আরও দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। দুই দেশের বিশাল অঞ্চলজুড়ে বন্যা, ভূমিধস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মৃত্যু, নিখোঁজ, অবকাঠামোর ক্ষতি ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। উদ্ধার অভিযান অনেক স্থানে চললেও আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা এবং ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জ পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।


#থাইল্যান্ড #ইন্দোনেশিয়া #বন্যা #ঘূর্ণিঝড় #হাটইয়াই #সুমাত্রা #মালয়েশিয়া #দক্ষিণপূর্বএশিয়া #জলবায়ুপরিবর্তন #উদ্ধারঅভিযান #সারাক্ষণরিপোর্ট