১১:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি: তিন সপ্তাহ ধরে তথ্যশূন্যতায় শিক্ষার্থীরা ড্রোন যুদ্ধে রুশ সুবিধা বৃদ্ধি টানা তিন সপ্তাহ ইমরান খান জীবিত কিনা জানে না পরিবার: গভীর উদ্বেগে স্বজনরা ইসলামাবাদ–রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারা; ইমরান খান ইস্যুতে বিক্ষোভ ঘিরে কেপি পুলিশকে কঠোর সতর্কবার্তা ২০২৬ সাল থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচ ব্যবহার নিষিদ্ধ তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: সালাহউদ্দিন চীনের হাতে বৈশ্বিক ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের নিয়ন্ত্রণ সিঙ্গাপুরের সাহিত্যকে এগিয়ে নিতে নিজের সম্পদ ঝুঁকিতে ফেলছেন এডমন্ড উই মৃত্যুহীন প্রসবের লক্ষ্য: ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাফল্য প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৩২)

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২.০-এর অধীনে বেইজিংয়ের ‘গ্লোবালিস্ট’ এজেন্ডা

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ১ সেপ্টেম্বর তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানেই শি নতুন কূটনৈতিক কাঠামো ‘গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভ’ (জিজিআই) উন্মোচন করেন। ওয়াং ই এই উদ্যোগকে বলেন “মানবতার অভিন্ন ভবিষ্যতের নকশা।”

২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এ বছরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব পুনর্বিবেচনা করা জরুরি—এ বছরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পূর্তি পালিত হচ্ছে।
চীনও এই প্রতীকী মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে “যুদ্ধ-পরবর্তী ব্যবস্থার রক্ষক” হিসেবে তুলে ধরছে।

সেপ্টেম্বরে এসসিও সম্মেলনে শি জিজিআই ঘোষণা করেন। চীন এই উদ্যোগকে ‘জাপানবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধে বিজয়’ এবং জাতিসংঘের ৮০ বছর পূর্তির সঙ্গে যুক্ত করতে চায়—যাতে যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নৈতিক ও ঐতিহাসিক উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা যায়।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জিজিআই ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ—“৮০ বছর আগের শিক্ষার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত”—শান্তি ও উন্নয়নে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে। চীন অঙ্গীকার করছে যে তারা জাতিসংঘ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক আইন-ভিত্তিক বিশ্বশৃঙ্খলা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে।

কিন্তু একই নথিতে বর্তমান বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার তিনটি কাঠামোগত ত্রুটিও চিহ্নিত করা হয়েছে:
১) উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধিত্বে ‘ঐতিহাসিক অবিচার’;
২) ভূরাজনৈতিক সংঘাত বৃদ্ধির ফলে জাতিসংঘের কর্তৃত্ব ক্ষয়;
৩) এসডিজি স্থবিরতা, জেনারেটিভ এআই ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সীমিত সক্ষমতা।

চীন দাবি করছে—বিশ্ব শাসনব্যবস্থায় ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধারে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর কণ্ঠকে জোরদার করা জরুরি। একইসঙ্গে ইঙ্গিতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ‘একতরফা নীতি’ এবং ‘শীতল যুদ্ধ-মানসিকতা’কে সমালোচনা করছে।
জিজিআই তাই জাতিসংঘভিত্তিক ব্যবস্থাকে ভেতর থেকে সংস্কারের একটি প্রচেষ্টা, যেখানে চীন নিজেকে একই সঙ্গে রক্ষক ও পরিবর্তনের অগ্রণী শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।

একসময় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর কাছে ‘গ্লোবাল গভর্নেন্স’ ছিল পশ্চিমা বুদ্ধিবৃত্তিক ধারণা। কিন্তু ২০০০-এর দশক থেকে পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউ কেপিংসহ চীনা পণ্ডিতরা কমিউনিস্ট পার্টির নীতিচর্চার মধ্যেই বৈশ্বিক শাসন ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন।
২০০১ সালে চীনের ডব্লিউটিও-তে যোগদানের পর বিশ্বায়নকে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসেবে দেখা হয়। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর চীনের জি-২০-তে ভূমিকা বাড়ে এবং “গ্লোবাল গভর্নেন্স সংস্কার” বর্ণনা জোরদার হয়।

শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে—২০১২ সালের ১৮তম পার্টি কংগ্রেসের পর—এই ধারণা সরকারি নথিতে প্রবেশ করে এবং এআইআইবি ও বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের মাধ্যমে বাস্তব রূপ পেতে শুরু করে।
জিজিআই এই দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরিণতি—যা চীনকে আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি গঠনের রূপকার হিসেবে তুলে ধরার এক “গ্লোবালিস্ট ইশতেহার।”

Trump 2.0 softens on China

আমেরিকা ফার্স্ট
পরিস্থিতির এই পরিবর্তন ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের সঙ্গে তীব্র বৈপরীত্য তৈরি করে। ২০২৫ সালের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং ইউনেসকো ছাড়ার ইঙ্গিত দেন। তাঁর প্রশাসনের দাবি—এসডিজিভিত্তিক “গ্লোবালিস্ট ও আদর্শিক এজেন্ডা” মার্কিন স্বার্থের বিরোধী।

সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ট্রাম্প আবারও “গ্লোবালিস্টদের” নিন্দা করেন এবং জোট, সাহায্য ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে মার্কিন স্বাধীনতার জন্য “শৃঙ্খল” বলে আখ্যা দেন।
একই সঙ্গে ইউএসএআইডি কার্যত ভেঙে ফেলার প্রচেষ্টা ও উন্নয়ন চুক্তি স্থগিত করার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্রমেই চীনের অর্থায়ন ও উন্নয়ন কাঠামোর দিকে ঝুঁকছে।

মার্কিন সরে দাঁড়ানো বিশ্ব শাসন নেতৃত্বে একটি শূন্যতা তৈরি করেছে—যা চীন জিজিআইয়ের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে দ্রুত পূরণ করতে চায়। “ন্যায়, অন্তর্ভুক্তি ও যৌথ উন্নয়ন”-এর ভাষা ব্যবহার করে চীন পশ্চিমের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে নিজেকে মার্কিন আধিপত্যের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সেপ্টেম্বরের এসসিও বৈঠকে জিজিআইকে “স্বাগত” জানান—যদিও তা আংশিক কূটনৈতিক সৌজন্য, তবে জাতিসংঘ ব্যবস্থায় চীনের বাড়তি আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকার বাস্তব স্বীকৃতিও।

চীন এখন জাতিসংঘের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাজেট প্রদানকারী। চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ও সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন ফান্ড বহু জাতিসংঘ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এবং সম্প্রতি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি সাংহাইয়ে ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ স্থাপন করতে সম্মত হয়েছে।

তবে চীনের অবদান সীমাবদ্ধতামুক্ত নয়—নির্ধারিত চাঁদা সময়মতো পরিশোধে দেরি হওয়ায় কখনও কখনও জাতিসংঘের আর্থিক চাপ বাড়ে, আর স্বেচ্ছা অনুদানও পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় কম।
তবুও চীন ধারাবাহিকভাবে প্রভাব বাড়িয়েছে—আইটিইউ ও এফএওর মতো সংস্থায় নেতৃত্ব অর্জন করে এবং “মানবতার অভিন্ন ভবিষ্যত”—এর মতো রাজনৈতিক শব্দগুচ্ছ জাতিসংঘ নথিতে যুক্ত করিয়ে।

এর ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ বেড়েছে—কারণ চীন শুধু নীতি নয়, ডেমোক্রেসিতেও প্রভাব বিস্তার করছে।

গ্লোবাল সাউথের দাবি ও যৌথ দায়িত্ব
জিজিআই যদিও গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে সংহতির বার্তা বহন করে, তবে এটি পশ্চিম-নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ-পরবর্তী ব্যবস্থাকেও চ্যালেঞ্জ করে। চীন ও রাশিয়ার মতো উদীয়মান শক্তিকেও গ্লোবাল সাউথের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করে চীন নেতৃত্বের দাবিকে আরও দৃঢ় করতে চায়।

ওয়াশিংটন-বেইজিং প্রতিযোগিতা সামরিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্র ছাড়িয়ে এখন শাসনব্যবস্থাতেও তীব্র—যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাচ্ছে এবং চীন অগ্রসর হচ্ছে। এতে চীন নিজেকে “দায়িত্বশীল অংশীদার” হিসেবে প্রকাশ করতে পারছে, যদিও বহু দেশ এখনও সন্দিহান।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন দরকার—চীনের বর্ণনার বাস্তবতা বিশ্লেষণ, প্রতীকের সঙ্গে পার্থক্য চিহ্নিত করা এবং প্রতিষ্ঠানগত সংস্কারের জরুরি চাহিদা নির্ণয় করা।

চীনের উদ্দেশ্য নিজস্ব স্বার্থনির্ভর হলেও—গ্লোবাল সাউথের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ওজন ক্রমশ বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক জনসম্পদের যৌথ ব্যবস্থাপনায় তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

জাপানের জন্য এখন একটি কৌশলগত পুনর্বিবেচনার সময়—চীনের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ, জাতিসংঘের ক্লান্ত প্রতিষ্ঠানগত কাঠামো চিহ্নিত করা এবং গ্লোবাল সাউথের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে এমন শাসনসংস্কারের প্রস্তাব করা।

শুধু সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই টোকিও একটি ভারসাম্যপূর্ণ, নিয়মভিত্তিক নতুন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গঠনে অবদান রাখতে পারে।

লেখকঃ কেনইচি দোই ইনস্টিটিউট অব জিওইকোনমিক্সের চায়না গ্রুপের সিনিয়র গবেষণা ফেলো। ‘জিওইকোনমিক ব্রিফিং’ সিরিজে জাপানের চ্যালেঞ্জ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, বাণিজ্য ঝুঁকি এবং প্রযুক্তিগত ও শিল্প কাঠামো বিশ্লেষণ করা হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি: তিন সপ্তাহ ধরে তথ্যশূন্যতায় শিক্ষার্থীরা

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২.০-এর অধীনে বেইজিংয়ের ‘গ্লোবালিস্ট’ এজেন্ডা

০৮:০০:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ১ সেপ্টেম্বর তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানেই শি নতুন কূটনৈতিক কাঠামো ‘গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভ’ (জিজিআই) উন্মোচন করেন। ওয়াং ই এই উদ্যোগকে বলেন “মানবতার অভিন্ন ভবিষ্যতের নকশা।”

২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এ বছরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব পুনর্বিবেচনা করা জরুরি—এ বছরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পূর্তি পালিত হচ্ছে।
চীনও এই প্রতীকী মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে “যুদ্ধ-পরবর্তী ব্যবস্থার রক্ষক” হিসেবে তুলে ধরছে।

সেপ্টেম্বরে এসসিও সম্মেলনে শি জিজিআই ঘোষণা করেন। চীন এই উদ্যোগকে ‘জাপানবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধে বিজয়’ এবং জাতিসংঘের ৮০ বছর পূর্তির সঙ্গে যুক্ত করতে চায়—যাতে যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নৈতিক ও ঐতিহাসিক উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা যায়।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জিজিআই ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ—“৮০ বছর আগের শিক্ষার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত”—শান্তি ও উন্নয়নে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে। চীন অঙ্গীকার করছে যে তারা জাতিসংঘ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক আইন-ভিত্তিক বিশ্বশৃঙ্খলা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে।

কিন্তু একই নথিতে বর্তমান বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার তিনটি কাঠামোগত ত্রুটিও চিহ্নিত করা হয়েছে:
১) উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধিত্বে ‘ঐতিহাসিক অবিচার’;
২) ভূরাজনৈতিক সংঘাত বৃদ্ধির ফলে জাতিসংঘের কর্তৃত্ব ক্ষয়;
৩) এসডিজি স্থবিরতা, জেনারেটিভ এআই ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সীমিত সক্ষমতা।

চীন দাবি করছে—বিশ্ব শাসনব্যবস্থায় ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধারে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর কণ্ঠকে জোরদার করা জরুরি। একইসঙ্গে ইঙ্গিতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ‘একতরফা নীতি’ এবং ‘শীতল যুদ্ধ-মানসিকতা’কে সমালোচনা করছে।
জিজিআই তাই জাতিসংঘভিত্তিক ব্যবস্থাকে ভেতর থেকে সংস্কারের একটি প্রচেষ্টা, যেখানে চীন নিজেকে একই সঙ্গে রক্ষক ও পরিবর্তনের অগ্রণী শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।

একসময় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর কাছে ‘গ্লোবাল গভর্নেন্স’ ছিল পশ্চিমা বুদ্ধিবৃত্তিক ধারণা। কিন্তু ২০০০-এর দশক থেকে পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউ কেপিংসহ চীনা পণ্ডিতরা কমিউনিস্ট পার্টির নীতিচর্চার মধ্যেই বৈশ্বিক শাসন ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন।
২০০১ সালে চীনের ডব্লিউটিও-তে যোগদানের পর বিশ্বায়নকে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসেবে দেখা হয়। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর চীনের জি-২০-তে ভূমিকা বাড়ে এবং “গ্লোবাল গভর্নেন্স সংস্কার” বর্ণনা জোরদার হয়।

শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে—২০১২ সালের ১৮তম পার্টি কংগ্রেসের পর—এই ধারণা সরকারি নথিতে প্রবেশ করে এবং এআইআইবি ও বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের মাধ্যমে বাস্তব রূপ পেতে শুরু করে।
জিজিআই এই দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরিণতি—যা চীনকে আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি গঠনের রূপকার হিসেবে তুলে ধরার এক “গ্লোবালিস্ট ইশতেহার।”

Trump 2.0 softens on China

আমেরিকা ফার্স্ট
পরিস্থিতির এই পরিবর্তন ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের সঙ্গে তীব্র বৈপরীত্য তৈরি করে। ২০২৫ সালের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং ইউনেসকো ছাড়ার ইঙ্গিত দেন। তাঁর প্রশাসনের দাবি—এসডিজিভিত্তিক “গ্লোবালিস্ট ও আদর্শিক এজেন্ডা” মার্কিন স্বার্থের বিরোধী।

সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ট্রাম্প আবারও “গ্লোবালিস্টদের” নিন্দা করেন এবং জোট, সাহায্য ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে মার্কিন স্বাধীনতার জন্য “শৃঙ্খল” বলে আখ্যা দেন।
একই সঙ্গে ইউএসএআইডি কার্যত ভেঙে ফেলার প্রচেষ্টা ও উন্নয়ন চুক্তি স্থগিত করার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্রমেই চীনের অর্থায়ন ও উন্নয়ন কাঠামোর দিকে ঝুঁকছে।

মার্কিন সরে দাঁড়ানো বিশ্ব শাসন নেতৃত্বে একটি শূন্যতা তৈরি করেছে—যা চীন জিজিআইয়ের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে দ্রুত পূরণ করতে চায়। “ন্যায়, অন্তর্ভুক্তি ও যৌথ উন্নয়ন”-এর ভাষা ব্যবহার করে চীন পশ্চিমের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে নিজেকে মার্কিন আধিপত্যের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সেপ্টেম্বরের এসসিও বৈঠকে জিজিআইকে “স্বাগত” জানান—যদিও তা আংশিক কূটনৈতিক সৌজন্য, তবে জাতিসংঘ ব্যবস্থায় চীনের বাড়তি আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকার বাস্তব স্বীকৃতিও।

চীন এখন জাতিসংঘের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাজেট প্রদানকারী। চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ও সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন ফান্ড বহু জাতিসংঘ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এবং সম্প্রতি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি সাংহাইয়ে ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ স্থাপন করতে সম্মত হয়েছে।

তবে চীনের অবদান সীমাবদ্ধতামুক্ত নয়—নির্ধারিত চাঁদা সময়মতো পরিশোধে দেরি হওয়ায় কখনও কখনও জাতিসংঘের আর্থিক চাপ বাড়ে, আর স্বেচ্ছা অনুদানও পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় কম।
তবুও চীন ধারাবাহিকভাবে প্রভাব বাড়িয়েছে—আইটিইউ ও এফএওর মতো সংস্থায় নেতৃত্ব অর্জন করে এবং “মানবতার অভিন্ন ভবিষ্যত”—এর মতো রাজনৈতিক শব্দগুচ্ছ জাতিসংঘ নথিতে যুক্ত করিয়ে।

এর ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ বেড়েছে—কারণ চীন শুধু নীতি নয়, ডেমোক্রেসিতেও প্রভাব বিস্তার করছে।

গ্লোবাল সাউথের দাবি ও যৌথ দায়িত্ব
জিজিআই যদিও গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে সংহতির বার্তা বহন করে, তবে এটি পশ্চিম-নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ-পরবর্তী ব্যবস্থাকেও চ্যালেঞ্জ করে। চীন ও রাশিয়ার মতো উদীয়মান শক্তিকেও গ্লোবাল সাউথের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করে চীন নেতৃত্বের দাবিকে আরও দৃঢ় করতে চায়।

ওয়াশিংটন-বেইজিং প্রতিযোগিতা সামরিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্র ছাড়িয়ে এখন শাসনব্যবস্থাতেও তীব্র—যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাচ্ছে এবং চীন অগ্রসর হচ্ছে। এতে চীন নিজেকে “দায়িত্বশীল অংশীদার” হিসেবে প্রকাশ করতে পারছে, যদিও বহু দেশ এখনও সন্দিহান।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন দরকার—চীনের বর্ণনার বাস্তবতা বিশ্লেষণ, প্রতীকের সঙ্গে পার্থক্য চিহ্নিত করা এবং প্রতিষ্ঠানগত সংস্কারের জরুরি চাহিদা নির্ণয় করা।

চীনের উদ্দেশ্য নিজস্ব স্বার্থনির্ভর হলেও—গ্লোবাল সাউথের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ওজন ক্রমশ বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক জনসম্পদের যৌথ ব্যবস্থাপনায় তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

জাপানের জন্য এখন একটি কৌশলগত পুনর্বিবেচনার সময়—চীনের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ, জাতিসংঘের ক্লান্ত প্রতিষ্ঠানগত কাঠামো চিহ্নিত করা এবং গ্লোবাল সাউথের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে এমন শাসনসংস্কারের প্রস্তাব করা।

শুধু সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই টোকিও একটি ভারসাম্যপূর্ণ, নিয়মভিত্তিক নতুন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গঠনে অবদান রাখতে পারে।

লেখকঃ কেনইচি দোই ইনস্টিটিউট অব জিওইকোনমিক্সের চায়না গ্রুপের সিনিয়র গবেষণা ফেলো। ‘জিওইকোনমিক ব্রিফিং’ সিরিজে জাপানের চ্যালেঞ্জ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, বাণিজ্য ঝুঁকি এবং প্রযুক্তিগত ও শিল্প কাঠামো বিশ্লেষণ করা হয়।