মৌসুমি বৃষ্টির তীব্রতায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন দেশে এক বিস্তীর্ণ দুর্যোগ নেমে এসেছে। থাইল্যান্ড-ইন্দোনেশিয়ার বন্যা এই সপ্তাহে বহু মানুষের জীবন থমকে দিয়েছে; নদী উপচে পড়েছে, পাহাড় ধসে পড়েছে, শত শত ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা এখনও নিখোঁজদের খুঁজে ফিরছেন।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে পরিস্থিতি সবচেয়ে কঠিন। বহু এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে—দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছে, আরও শতাধিকের সন্ধান নেই। পশ্চিম সুমাত্রায় একের পর এক গ্রাম কাদায় ডুবে গেছে। রাত নামার পর উদ্ধার অভিযান আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
ইন্দোনেশিয়ায় প্রাণহানির চাপ বাড়ছে
পশ্চিম সুমাত্রার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর জানায়, মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। শুক্রবার রাতের হিসাব অনুযায়ী ৬১ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে, ৯০ জন নিখোঁজ। উত্তর সুমাত্রায় মৃত্যুর সংখ্যা ১১৬ ছাড়িয়েছে। আচেহ প্রদেশেও অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, বৃষ্টির তীব্রতা কমাতে সুমাত্রায় মেঘ বপন (cloud seeding) শুরু হবে। তবে বৃষ্টির একটি বড় অংশ ইতিমধ্যে উপচে পড়েছে, পাহাড়ি অঞ্চলগুলো নরম হয়ে আছে, ভূমিধসের সম্ভাবনা এখনও প্রবল।

থাইল্যান্ডে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বন্যা
থাইল্যান্ড-ইন্দোনেশিয়ার বন্যা এবার দু’দেশেই ভয়াবহ ক্ষতি রেখে গেছে। দক্ষিণ থাইল্যান্ডের সঙখলা প্রদেশে পানি তিন মিটার পর্যন্ত উঠে গেছে। কমপক্ষে ১৪৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে—এটি গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণহানি।
পাত্তানি, হাট ইয়াই, নাখন সি থাম্মারাত—এ সব জায়গায় মানুষের ভিড় ঠাঁই নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। হাট ইয়াইয়ের একটি হাসপাতালে মৃতদেহ রাখার জায়গা না থাকায় সেগুলো সংরক্ষণ করতে রেফ্রিজারেটেড ট্রাক ব্যবহার করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অনুটিন চার্নভিরাকুল ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই বিপর্যয় তাঁর দায়িত্বের সময় ঘটায় তিনি লজ্জিত। জেলা পরিষ্কারে দুই সপ্তাহের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে।
থাইল্যান্ড-ইন্দোনেশিয়ার বন্যা দেশজুড়ে সরকারি ব্যবস্থাপনার সমালোচনা টেনে এনেছে। দুই কর্মকর্তা দায়িত্বহীনতার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। বিরোধী দলের এক সাংসদ বলেছেন, সরকার পরিস্থিতি ভুলভাবে মূল্যায়ন করেছে।

মালয়েশিয়ার উত্তরাংশেও বৃষ্টি বাড়ায় পারলিস প্রদেশের বহু এলাকা পানিতে ডুবে গেছে, দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
মৌসুমি বৃষ্টির সময় সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এ বছর একটি শক্তিশালী ট্রপিক্যাল স্টর্ম পুরো অঞ্চলে বন্যার চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বর্ষার স্থায়িত্ব ও তীব্রতা বদলে গেছে—বৃষ্টি আরও ভারী, ঝড় আরও অস্থির।
থাইল্যান্ড-ইন্দোনেশিয়ার বন্যা দেখিয়ে দিল, আবহাওয়ার নতুন বাস্তবতায় পুরোনো প্রস্তুতি আর যথেষ্ট নয়। প্রবল বৃষ্টি, উত্তাল নদী, আর ভেঙে পড়া পাহাড়—সব মিলিয়ে মানবিক সংকটের এই বৃত্ত আরও বড় হয়ে উঠছে। অন্ধকার জলের নিচে রয়ে গেছে বহু জীবনের গল্প; উদ্ধারকারীরা থেমে নেই, কিন্তু প্রকৃতি এখনও পুরোপুরি থামেনি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















