ফিলিপাইনে সরকারী বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের নামে বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগ দেশকে নতুন রাজনৈতিক সঙ্কটে ঠেলে দিয়েছে। রবিবার মেট্রো ম্যানিলায় কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে—তবে আগের বিশাল বিক্ষোভগুলোর তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম। তবুও ফিলিপাইনের বন্যা দুর্নীতি কেলেঙ্কারি আবারও জনরোষের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে।
লেনেটা পার্কে সকাল থেকে জমতে থাকে মানুষের ঢল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় তিন হাজার, আর আয়োজকদের ভাষায় ২০ হাজার মানুষ অংশ নেয়। আন্দোলনকারীরা দুপুরে মেন্দিওলা হয়ে মালাকানিয়াং প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের দিকে মিছিল করেন। শহরের বিভিন্ন অংশেও ছোট ছোট সমাবেশ ছিল।
দুটি বছর, শতাধিক মৃত্যু—আর হারানো ৩০০ বিলিয়ন পেসো
২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে বছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন পেসো (১.৭৫ বিলিয়ন ডলার) দুর্নীতিতে হারিয়ে গেছে বলে সরকারের স্বীকারোক্তি। একই সময়ে প্রবল ঝড় ও বন্যায় শত শত মানুষ মারা গেছে। ফলে আন্দোলনের গতি থামেনি, যদিও সব বিক্ষোভে অংশগ্রহণ সমান নয়।

পুলিশ রবিবারের বিক্ষোভকে শান্তিপূর্ণ বলেছে। সেপ্টেম্বরের শেষের বিশাল সমাবেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর এবার ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন ছিল।
তবে অংশগ্রহণকারীদের ক্ষোভ প্রখর। তারা স্লোগানে প্রেসিডেন্ট ফের্ডিনান্ড মার্কোস জুনিয়র ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তের নাম উচ্চারণ করে জানায়—রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতির অভিযোগে দু’জনের চরিত্রে কোনো পার্থক্য নেই। বিক্ষোভে দু’জনের বিশাল কুশপুতুলও দাহ করা হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কেউই শাস্তির মুখে নয়
১৯ বছর বয়সী ইতিহাসের ছাত্র ফেলিক্স ত্রিনিদাদ বলেন—তিনি আগের বড় সমাবেশেও ছিলেন, কিন্তু এখনো বড় কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
তার দাবি—সরকার বরং ছোটখাটো কিছু ব্যক্তিকে বলির পাঁঠা বানাচ্ছে জনরোষ ঠাণ্ডা করতে।
এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন কেবল সাবেক সাংসদ জালদি কো এবং কিছু সরকারি প্রকৌশল কর্মকর্তা। কো বিদেশে; কোথায় আছেন কেউ জানে না।
নভেম্বরের শুরুতে মার্কোস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—জড়িতরা বড়দিন “কারাগারে কাটাবে”—কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে মার্কোসের বিশেষ দুর্নীতি তদন্ত কমিশন সুপারিশ করেছে—তারই চাচাতো ভাই, সাবেক স্পিকার ফের্ডিনান্ড মার্টিন রোমুয়ালদেজের বিরুদ্ধে প্লান্ডার (রাষ্ট্র সম্পদ লুট) মামলা হওয়া উচিত।
দুতের্তে-ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে মার্কোসকে পদত্যাগের চাপ বাড়াচ্ছে।
এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী জোসেফ বাদাহোস বললেন—জনতার রাগ যথেষ্ট নয়; আরও শক্ত চাপ তৈরি করতে হবে।
দুই বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, হারানো জীবন, আর নষ্ট হয়ে যাওয়া বিপুল সরকারি অর্থ—সব মিলিয়ে ফিলিপাইনের বন্যা দুর্নীতি কেলেঙ্কারি কেবল একটি অর্থনৈতিক কাহিনি নয়, বরং রাজনৈতিক দায়িত্বহীনতার গভীর সংকেত। রাস্তায় মানুষের পদচারণা হয়তো কমেছে, কিন্তু ক্ষোভ এখনও পুঞ্জীভূত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















