০১:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
সোনার লড়াইয়ে মালয়েশিয়ার ভরসা লিয়ং জুন হাও চলচ্চিত্রকারের নীল দিনের গল্প বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণের সংকট ২০৪০ সালে আরও ভয়াবহ হতে চলেছে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন ঘোষণার এক বছর: ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং চীন–জাপান উত্তেজনায় নতুন অধ্যায় সরাসরি সম্প্রচারে অসুস্থ হয়ে পড়লেন উপস্থাপক লরা উডস ২০২৫ সালের শেষে কীভাবে দেখবেন স্পটিফাই র‌্যাপড, ইউটিউব রিক্যাপ ও অন্যান্য বার্ষিক সংক্ষিপ্তসার হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনে নতুন ভোট: নবজাতক সুরক্ষা নীতিতে বড় পরিবর্তনের আভাস যুদ্ধ থেকে অর্থ তুলতে চাওয়া: রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা কেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ক্ষতিকর পুতিনের ভারত সফর: যুদ্ধবিমান থেকে বাণিজ্যপথ—বৃহৎ চুক্তির সম্ভাবনা

যুদ্ধ থেকে অর্থ তুলতে চাওয়া: রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা কেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ক্ষতিকর

ইইউ–এর করদাতাদের জন্য এর মানে হতে পারে—ব্রাসেলস এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে শেষ পর্যন্ত তাদেরই কিয়েভের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের ব্যয়ের বোঝা বইতে হবে।

ইইউ কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লায়েন গত সপ্তাহে বড় ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন, যখন রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে কিয়েভের যুদ্ধ তহবিল গঠনের তার বহুল আলোচিত পরিকল্পনা বেলজিয়াম ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। এরপর তিনি সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে দুইটি পথ দেখিয়েছেন—দুটিই কিয়েভের হাতে অর্থ তুলে দেবে।

তার বক্তব্য অনুযায়ী, হয় ইইউ দেশগুলোকে ইউক্রেনের জন্য ঋণ নিতে হবে এবং এর বোঝা তাদের নাগরিকদের ওপর চাপবে, অথবা তাকে অনুমতি দিতে হবে বিতর্কিত ও সম্ভাব্য অবৈধ ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যেতে—যেখানে পরিশোধের দায় দীর্ঘ সময়ের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হবে।

এখন দেখে নেওয়া যাক, আলোচনা কোন বিষয়গুলোকে ঘিরে।

রাশিয়ার স্থগিত সম্পদ: কোথায় কত আছে?

বেলজিয়ামে অবস্থিত ক্লিয়ারিংহাউস ইউরোক্লিয়ার রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ইউরো জমা আটকে রেখেছে—এ তথ্য জানা। লুক্সেমবার্গে ২০ বিলিয়ন ইউরো রাশিয়ান সম্পদের খবরে দেশটি দাবি করেছে, মোট পরিমাণ ১০ হাজার ইউরোরও কম।

সুইজারল্যান্ড—যা ইইউ কিংবা জি৭-এর অংশ নয় এবং তাই উরসুলার নির্দেশনার আওতায়ও নয়—ঘোষণা করেছে তারা ৭.৪৫ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ (৮ বিলিয়ন ইউরো) আটকে রেখেছে। জার্মানি তথ্য সুরক্ষা আইনের অজুহাতে তাদের সম্পদের পরিমাণ জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। জাপানের কাছে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ইউরো আছে বলে ধারণা করা হয়। ফ্রান্সের সাবেক অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লে মায়ে বলেছেন, ফ্রান্সে প্রায় ২২.৮ বিলিয়ন ইউরো স্থগিত অবস্থায় আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার।

ইইউতে কোন ধরণের রাশিয়ান সম্পদ স্থগিত রয়েছে?

এসব সম্পদের বৃহত্তম অংশই ইউরোপীয় স্বল্প ও মধ্যম-মেয়াদি বন্ড, যেগুলোর বেশিরভাগের মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। বন্ড পরিপক্ব হলে মূলধন পরিশোধ করা হয়। ইউরোক্লিয়ার এত বড় অঙ্কের অর্থ নিজে ধরে রাখার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাই সেই অর্থ ইউরোক্লিয়ারের হাউস ব্যাংক ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করে। এই অর্থ থেকে যে সুদ তৈরি হচ্ছে, তা আইনি হিসেবে ইউরোক্লিয়ারের—তবে সাধারণ পরিস্থিতিতে তারা ফি বাদ দিয়ে তা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাত।

প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণ ঋণ কী?

পরিকল্পনাটি হচ্ছে—রাশিয়ার এই সম্পদকে জামানত হিসেবে ব্যবহার করে ইইউ ইউক্রেনকে সর্বোচ্চ ১৪০ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত ঋণ দেবে। এতে ইইউ আইনি বন্ধক তৈরি করে এই সম্পদকে দীর্ঘমেয়াদে বেঁধে ফেলবে।

ইইউ এই টাকা ধার করবে এবং কিয়েভকে দেবে—কথিত আছে যুদ্ধ পরিচালনা ও বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যবহার হবে। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে, এর বড় অংশই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অভিজাতদের অফশোর অ্যাকাউন্টে চলে যেতে পারে।

কিয়েভের জন্য বাড়তি সুবিধা হলো—রাশিয়া যুদ্ধ হারলে এবং ইউক্রেনকে ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হলে তবেই কিয়েভকে ইইউর কাছে এই ঋণ শোধ করতে হবে। বাস্তবে যা প্রায় অসম্ভব।

এমন পরিস্থিতিতে কিয়েভ ক্ষতিপূরণের অর্থ ব্রাসেলসকে দেবে, ব্রাসেলস ইউরোক্লিয়ারকে পরিশোধ করবে, আর ইউরোক্লিয়ার তখন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তার দায় শোধ করতে পারবে।

বেলজিয়াম পরিকল্পনাটি নিয়ে আতঙ্কিত কেন?

ইউরোক্লিয়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কিন্তু সেটি বেলজিয়ামে অবস্থিত। পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে বেলজিয়ামকেই দায় বহন করতে হতে পারে। রাশিয়ার সাথে বেলজিয়ামের বহুদিনের বিনিয়োগ চুক্তি রয়েছে—যেখানে কোনো বিরোধ হলে সালিশের ব্যবস্থা রয়েছে। বেলজিয়াম আশঙ্কা করছে—ইউরোক্লিয়ার থেকে টাকা বের হতেই রাশিয়া বেলজিয়ামের সম্পদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।

তাছাড়া, কোনো শান্তিচুক্তিতে যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয় কিন্তু ক্ষতিপূরণ না থাকে, তবে সেই বিশাল অঙ্কের টাকা কে দেবে? প্রচুর লবিংয়ের পরও বেলজিয়াম ইইউর অন্য সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত সমর্থন পায়নি। তাই তারা এই পরিকল্পনাকে কিয়েভের জন্য সবচেয়ে খারাপ সমাধান বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

যদি পরিকল্পনা ভেস্তে যায়, তাহলে ইউরোক্লিয়ার কি রাশিয়ার রিজার্ভের জন্য দায়ী হবে?

ইউরোক্লিয়ারের কাজ পদ্ধতি ব্যাংকের চেয়ে আলাদা। ব্যাংক আমানতকে নিজের দায় হিসেবে রাখে এবং তা ঋণ বা বিনিয়োগে ব্যবহার করে। কিন্তু ইউরোক্লিয়ার ক্লায়েন্টের সম্পদ ব্যালান্সশিটের বাইরে আলাদা ও নিরাপদভাবে রাখে। এসব সম্পদ তত্ত্বগতভাবে কখনো হারানোর কথা নয়। তাই ক্লায়েন্টের সম্পদের ক্ষতির দায় ইউরোক্লিয়ার বহন করার জন্য প্রস্তুত নয়।

এছাড়া, যদি ইইউ ক্ষতিপূরণ ঋণ অনুমোদন করে, তাহলে ইউরোক্লিয়ার ইইউ–এর আইন অনুযায়ী কেবল মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকবে। সেক্ষেত্রে সমস্যার মীমাংসা ইইউ–কেই করতে হবে। ইউরোক্লিয়ারের প্রতিরক্ষা সহজ—সম্পদের মালিকানা তাদের নয়; তারা কেবল আইন মেনে হস্তান্তর করেছে।

তবু ঝুঁকি থেকে যায়—রাশিয়া মামলা জিতবে না জেনেও আদালতে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে পারে।

রাশিয়া কীভাবে আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারে?

রাশিয়া ইইউ বা পশ্চিমা আদালতে জেতার সম্ভাবনা কম। অতীতে বহু দাবি দ্রুত খারিজ হয়েছে। কিন্তু আইনি ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ায় দুটি ঝুঁকি রয়েছে—

প্রথমত, রাশিয়া বা রাশিয়া–সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান কোনো নিরপেক্ষ দেশে মামলা করতে পারে—যেমন হংকং, সিঙ্গাপুর, দুবাই—যেখানে ইউরোক্লিয়ারের কার্যক্রম আছে। আদালত যদি নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তবে ইউরোক্লিয়ারের সম্পদ স্থানান্তর জটিল হয়ে পড়বে।

ইউরোক্লিয়ার বিশ্বব্যাপী আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার একটি মূল অংশ। তাই মামলার ঝুঁকি বা দায়বদ্ধতা তাদের ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ইউরোপীয় কাস্টডিয়ানদের প্রতি আস্থা কমাতে পারে।

সুতরাং রাশিয়া অর্থ ফিরে না পেলেও কৌশলগত সুবিধা পেতে পারে।

ক্ষতিপূরণ ঋণ কি শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে বাড়তি সুবিধা দেবে?

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে জমাট বাঁধা এই রিজার্ভগুলোকে মোট রিজার্ভ হিসেবে গণনা করলেও বাস্তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট পরিকল্পনায় এগুলোকে ধরছে না। অর্থাৎ কার্যত রাশিয়া এসব তহবিল শূন্য ধরে সামনে এগোচ্ছে। তাই এই ঋণ রাশিয়ার ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না।

যুক্তি আছে—রাশিয়ার মূল উদ্বেগ অর্থ ফিরিয়ে পাওয়া নয়, বরং তা যেন ইউক্রেনের হাতে না যায়। ইউক্রেন আগামী বছরগুলোতে বড় আর্থিক ঘাটতির মুখে পড়বে। পশ্চিমা করদাতাদের ওপর বোঝা চাপানো রাজনৈতিকভাবে কঠিন; তাই রাশিয়ার সম্পদই সহজ লক্ষ্য।

তবে ইউক্রেন অতিরিক্ত সময় পেলেও যুদ্ধের ফল বদলাবে—এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। অর্থনৈতিক চাপ দিয়ে রাশিয়াকে নতি স্বীকার করানোর সব প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বর্ণের দাম বাড়ায় রাশিয়ার রিজার্ভও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণের সরকারি মূল্য এই গ্রীষ্মে ২৪৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া গ্যোসফান্ড নামে আরেক রাষ্ট্রীয় স্বর্ণ–তহবিলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্বর্ণ আছে বলে ধারণা করা হয়। অর্থাৎ রাশিয়ার প্রকৃত স্বর্ণভাণ্ডার বিশাল।

ক্ষতিপূরণ ঋণ বড় ধরনের শান্তিচুক্তির সম্ভাবনাকে কীভাবে সংকুচিত করে?

এই ঋণ পশ্চিমাদের কূটনৈতিক সুযোগ কমিয়ে দেবে। রাশিয়া শান্তির বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাইতে পারে—কিন্তু ইউক্রেনকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে না। এতে ইইউকে বিশাল অঙ্কের অর্থের দায় নিতে হবে, কারণ রাশিয়া ক্ষতিপূরণ না দিলে ইউক্রেনও ইইউকে টাকা ফেরত দেবে না।

ইইউ–এর করদাতাদের জন্য এর মানে—তারা এক ধরনের অনিবার্য পরিস্থিতিতে পড়বে যেখানে কিয়েভের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে অর্থায়ন করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

পশ্চিমা বিশ্লেষকরাও স্বীকার করেন—রাশিয়ার সামরিক পরাজয় কার্যত অসম্ভব। তাই ইইউ যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা ভবিষ্যতে নিজেদের ওপরই বিশাল আর্থিক বোঝা চাপাতে পারে।

যদি এই ঋণ বাস্তবায়িত হয়, তবে তা সম্ভাব্য সমঝোতার ক্ষেত্র আরও সংকুচিত করবে। বেলজিয়াম তাদের প্রতিবাদে এই বিষয়টি বারবার তুলেছে।

ঋণ পরিকল্পনাটি মূলত যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার একটি পরোক্ষ আহ্বান—কারণ এটি কিয়েভের সরকারকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং একটি সমগ্র শান্তি–সমাধানের সম্ভাবনা আরও জটিল করে তুলবে।


জনপ্রিয় সংবাদ

সোনার লড়াইয়ে মালয়েশিয়ার ভরসা লিয়ং জুন হাও

যুদ্ধ থেকে অর্থ তুলতে চাওয়া: রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা কেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ক্ষতিকর

১২:৪২:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ইইউ–এর করদাতাদের জন্য এর মানে হতে পারে—ব্রাসেলস এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে শেষ পর্যন্ত তাদেরই কিয়েভের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের ব্যয়ের বোঝা বইতে হবে।

ইইউ কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লায়েন গত সপ্তাহে বড় ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন, যখন রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে কিয়েভের যুদ্ধ তহবিল গঠনের তার বহুল আলোচিত পরিকল্পনা বেলজিয়াম ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। এরপর তিনি সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে দুইটি পথ দেখিয়েছেন—দুটিই কিয়েভের হাতে অর্থ তুলে দেবে।

তার বক্তব্য অনুযায়ী, হয় ইইউ দেশগুলোকে ইউক্রেনের জন্য ঋণ নিতে হবে এবং এর বোঝা তাদের নাগরিকদের ওপর চাপবে, অথবা তাকে অনুমতি দিতে হবে বিতর্কিত ও সম্ভাব্য অবৈধ ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যেতে—যেখানে পরিশোধের দায় দীর্ঘ সময়ের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হবে।

এখন দেখে নেওয়া যাক, আলোচনা কোন বিষয়গুলোকে ঘিরে।

রাশিয়ার স্থগিত সম্পদ: কোথায় কত আছে?

বেলজিয়ামে অবস্থিত ক্লিয়ারিংহাউস ইউরোক্লিয়ার রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ইউরো জমা আটকে রেখেছে—এ তথ্য জানা। লুক্সেমবার্গে ২০ বিলিয়ন ইউরো রাশিয়ান সম্পদের খবরে দেশটি দাবি করেছে, মোট পরিমাণ ১০ হাজার ইউরোরও কম।

সুইজারল্যান্ড—যা ইইউ কিংবা জি৭-এর অংশ নয় এবং তাই উরসুলার নির্দেশনার আওতায়ও নয়—ঘোষণা করেছে তারা ৭.৪৫ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ (৮ বিলিয়ন ইউরো) আটকে রেখেছে। জার্মানি তথ্য সুরক্ষা আইনের অজুহাতে তাদের সম্পদের পরিমাণ জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। জাপানের কাছে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ইউরো আছে বলে ধারণা করা হয়। ফ্রান্সের সাবেক অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লে মায়ে বলেছেন, ফ্রান্সে প্রায় ২২.৮ বিলিয়ন ইউরো স্থগিত অবস্থায় আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার।

ইইউতে কোন ধরণের রাশিয়ান সম্পদ স্থগিত রয়েছে?

এসব সম্পদের বৃহত্তম অংশই ইউরোপীয় স্বল্প ও মধ্যম-মেয়াদি বন্ড, যেগুলোর বেশিরভাগের মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। বন্ড পরিপক্ব হলে মূলধন পরিশোধ করা হয়। ইউরোক্লিয়ার এত বড় অঙ্কের অর্থ নিজে ধরে রাখার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাই সেই অর্থ ইউরোক্লিয়ারের হাউস ব্যাংক ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করে। এই অর্থ থেকে যে সুদ তৈরি হচ্ছে, তা আইনি হিসেবে ইউরোক্লিয়ারের—তবে সাধারণ পরিস্থিতিতে তারা ফি বাদ দিয়ে তা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাত।

প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণ ঋণ কী?

পরিকল্পনাটি হচ্ছে—রাশিয়ার এই সম্পদকে জামানত হিসেবে ব্যবহার করে ইইউ ইউক্রেনকে সর্বোচ্চ ১৪০ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত ঋণ দেবে। এতে ইইউ আইনি বন্ধক তৈরি করে এই সম্পদকে দীর্ঘমেয়াদে বেঁধে ফেলবে।

ইইউ এই টাকা ধার করবে এবং কিয়েভকে দেবে—কথিত আছে যুদ্ধ পরিচালনা ও বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যবহার হবে। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে, এর বড় অংশই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অভিজাতদের অফশোর অ্যাকাউন্টে চলে যেতে পারে।

কিয়েভের জন্য বাড়তি সুবিধা হলো—রাশিয়া যুদ্ধ হারলে এবং ইউক্রেনকে ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হলে তবেই কিয়েভকে ইইউর কাছে এই ঋণ শোধ করতে হবে। বাস্তবে যা প্রায় অসম্ভব।

এমন পরিস্থিতিতে কিয়েভ ক্ষতিপূরণের অর্থ ব্রাসেলসকে দেবে, ব্রাসেলস ইউরোক্লিয়ারকে পরিশোধ করবে, আর ইউরোক্লিয়ার তখন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তার দায় শোধ করতে পারবে।

বেলজিয়াম পরিকল্পনাটি নিয়ে আতঙ্কিত কেন?

ইউরোক্লিয়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কিন্তু সেটি বেলজিয়ামে অবস্থিত। পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে বেলজিয়ামকেই দায় বহন করতে হতে পারে। রাশিয়ার সাথে বেলজিয়ামের বহুদিনের বিনিয়োগ চুক্তি রয়েছে—যেখানে কোনো বিরোধ হলে সালিশের ব্যবস্থা রয়েছে। বেলজিয়াম আশঙ্কা করছে—ইউরোক্লিয়ার থেকে টাকা বের হতেই রাশিয়া বেলজিয়ামের সম্পদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।

তাছাড়া, কোনো শান্তিচুক্তিতে যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয় কিন্তু ক্ষতিপূরণ না থাকে, তবে সেই বিশাল অঙ্কের টাকা কে দেবে? প্রচুর লবিংয়ের পরও বেলজিয়াম ইইউর অন্য সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত সমর্থন পায়নি। তাই তারা এই পরিকল্পনাকে কিয়েভের জন্য সবচেয়ে খারাপ সমাধান বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

যদি পরিকল্পনা ভেস্তে যায়, তাহলে ইউরোক্লিয়ার কি রাশিয়ার রিজার্ভের জন্য দায়ী হবে?

ইউরোক্লিয়ারের কাজ পদ্ধতি ব্যাংকের চেয়ে আলাদা। ব্যাংক আমানতকে নিজের দায় হিসেবে রাখে এবং তা ঋণ বা বিনিয়োগে ব্যবহার করে। কিন্তু ইউরোক্লিয়ার ক্লায়েন্টের সম্পদ ব্যালান্সশিটের বাইরে আলাদা ও নিরাপদভাবে রাখে। এসব সম্পদ তত্ত্বগতভাবে কখনো হারানোর কথা নয়। তাই ক্লায়েন্টের সম্পদের ক্ষতির দায় ইউরোক্লিয়ার বহন করার জন্য প্রস্তুত নয়।

এছাড়া, যদি ইইউ ক্ষতিপূরণ ঋণ অনুমোদন করে, তাহলে ইউরোক্লিয়ার ইইউ–এর আইন অনুযায়ী কেবল মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকবে। সেক্ষেত্রে সমস্যার মীমাংসা ইইউ–কেই করতে হবে। ইউরোক্লিয়ারের প্রতিরক্ষা সহজ—সম্পদের মালিকানা তাদের নয়; তারা কেবল আইন মেনে হস্তান্তর করেছে।

তবু ঝুঁকি থেকে যায়—রাশিয়া মামলা জিতবে না জেনেও আদালতে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে পারে।

রাশিয়া কীভাবে আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারে?

রাশিয়া ইইউ বা পশ্চিমা আদালতে জেতার সম্ভাবনা কম। অতীতে বহু দাবি দ্রুত খারিজ হয়েছে। কিন্তু আইনি ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ায় দুটি ঝুঁকি রয়েছে—

প্রথমত, রাশিয়া বা রাশিয়া–সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান কোনো নিরপেক্ষ দেশে মামলা করতে পারে—যেমন হংকং, সিঙ্গাপুর, দুবাই—যেখানে ইউরোক্লিয়ারের কার্যক্রম আছে। আদালত যদি নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তবে ইউরোক্লিয়ারের সম্পদ স্থানান্তর জটিল হয়ে পড়বে।

ইউরোক্লিয়ার বিশ্বব্যাপী আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার একটি মূল অংশ। তাই মামলার ঝুঁকি বা দায়বদ্ধতা তাদের ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ইউরোপীয় কাস্টডিয়ানদের প্রতি আস্থা কমাতে পারে।

সুতরাং রাশিয়া অর্থ ফিরে না পেলেও কৌশলগত সুবিধা পেতে পারে।

ক্ষতিপূরণ ঋণ কি শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে বাড়তি সুবিধা দেবে?

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে জমাট বাঁধা এই রিজার্ভগুলোকে মোট রিজার্ভ হিসেবে গণনা করলেও বাস্তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট পরিকল্পনায় এগুলোকে ধরছে না। অর্থাৎ কার্যত রাশিয়া এসব তহবিল শূন্য ধরে সামনে এগোচ্ছে। তাই এই ঋণ রাশিয়ার ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না।

যুক্তি আছে—রাশিয়ার মূল উদ্বেগ অর্থ ফিরিয়ে পাওয়া নয়, বরং তা যেন ইউক্রেনের হাতে না যায়। ইউক্রেন আগামী বছরগুলোতে বড় আর্থিক ঘাটতির মুখে পড়বে। পশ্চিমা করদাতাদের ওপর বোঝা চাপানো রাজনৈতিকভাবে কঠিন; তাই রাশিয়ার সম্পদই সহজ লক্ষ্য।

তবে ইউক্রেন অতিরিক্ত সময় পেলেও যুদ্ধের ফল বদলাবে—এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। অর্থনৈতিক চাপ দিয়ে রাশিয়াকে নতি স্বীকার করানোর সব প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বর্ণের দাম বাড়ায় রাশিয়ার রিজার্ভও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণের সরকারি মূল্য এই গ্রীষ্মে ২৪৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া গ্যোসফান্ড নামে আরেক রাষ্ট্রীয় স্বর্ণ–তহবিলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্বর্ণ আছে বলে ধারণা করা হয়। অর্থাৎ রাশিয়ার প্রকৃত স্বর্ণভাণ্ডার বিশাল।

ক্ষতিপূরণ ঋণ বড় ধরনের শান্তিচুক্তির সম্ভাবনাকে কীভাবে সংকুচিত করে?

এই ঋণ পশ্চিমাদের কূটনৈতিক সুযোগ কমিয়ে দেবে। রাশিয়া শান্তির বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাইতে পারে—কিন্তু ইউক্রেনকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে না। এতে ইইউকে বিশাল অঙ্কের অর্থের দায় নিতে হবে, কারণ রাশিয়া ক্ষতিপূরণ না দিলে ইউক্রেনও ইইউকে টাকা ফেরত দেবে না।

ইইউ–এর করদাতাদের জন্য এর মানে—তারা এক ধরনের অনিবার্য পরিস্থিতিতে পড়বে যেখানে কিয়েভের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে অর্থায়ন করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

পশ্চিমা বিশ্লেষকরাও স্বীকার করেন—রাশিয়ার সামরিক পরাজয় কার্যত অসম্ভব। তাই ইইউ যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা ভবিষ্যতে নিজেদের ওপরই বিশাল আর্থিক বোঝা চাপাতে পারে।

যদি এই ঋণ বাস্তবায়িত হয়, তবে তা সম্ভাব্য সমঝোতার ক্ষেত্র আরও সংকুচিত করবে। বেলজিয়াম তাদের প্রতিবাদে এই বিষয়টি বারবার তুলেছে।

ঋণ পরিকল্পনাটি মূলত যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার একটি পরোক্ষ আহ্বান—কারণ এটি কিয়েভের সরকারকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং একটি সমগ্র শান্তি–সমাধানের সম্ভাবনা আরও জটিল করে তুলবে।