সেপাংয়ের শান্ত গ্রামাঞ্চল হঠাৎ রাত্রিবেলা পরিণত হয় বন্যার হাহাকারে। সেই অচেনা অস্থিরতার মাঝেই নিখোঁজ হয়ে যান কর্পোরাল মুহাম্মদ রহিমি আমিরুদ্দিন—মাত্র ২৩ বছরের এক তরুণ পুলিশ সদস্য। শুক্রবার গভীর রাতে ক্লিনিক দেসা গিচিংয়ের কাছে তার গাড়ি আটকা পড়ে ওঠা পানিতে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পানির স্রোত তাকে টেনে নেয় অন্ধকারের দিকে।
গ্রামবাসীরা বলেছে, রহিমিকে তারা শেষ দেখেছিল একটি রাস্তার সাইনবোর্ড আঁকড়ে ধরে। স্রোত বাড়তেই তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কুলভার্টের দিকে। সেই দৃশ্যের আতঙ্ক আজও চোখে লেগে আছে স্থানীয়দের।
উদ্ধার অভিযান থেমে নেই

ঘটনার পর রাত ১১টা ৩০ মিনিটে জরুরি ফোন আসে। মুহূর্তেই নড়ে ওঠে পুরো সেপাং এলাকা। কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (KLIA) দমকল দল প্রথমে পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। তাদের প্রথম রেসপন্স ইউনিট আসে রাত ১২টা ০২ মিনিটে।
জেলার পুলিশ প্রধান অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নরহিজাম বাহামান জানান, ৬০ জনেরও বেশি সদস্য—দমকল, সিভিল ডিফেন্স, সেপাং-নিলাই পুলিশ ও গ্রামবাসীসহ—চলমান উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।
প্রাথমিক রাতে অভিযান থামাতে হয়েছিল প্রবল স্রোত আর অন্ধকারের কারণে। কিন্তু ভোরের আলো ফুটতেই আবার শুরু হয় তল্লাশি।
চোখের দেখার বিবরণ আরও ভয়ংকর। রহিমি বন্যার পথ ঠেলে গাড়ি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গাড়িটি স্রোতে পড়ে ড্রেনে আটকে যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি কোনওভাবে একটি রাস্তার সাইনবোর্ডে পৌঁছান। সেখানে কয়েক মুহূর্ত আঁকড়ে ধরার পরই তাকে টেনে নেয় বন্যার শক্ত ঢেউ।
উদ্ধার দল কুলভার্টে কয়েক দফা ডাইভ দিয়েও তাকে খুঁজে পায়নি। শুধু গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় তার নথিপত্র রাখা একটি ছোট পাউচ।

পরিবারের অপেক্ষা আর উদ্বেগ
দমকল বিভাগের অপারেশন সহকারী পরিচালক আহমদ মুখলিস মুখতার জানান, তারা এখন নদীর স্রোত বরাবর প্রায় ২.৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে চারবার গভীর পানিতে ডুব দিয়েছে বিশেষজ্ঞ ডাইভার দল।
সব ভুল ধারণা দূর করে কর্তৃপক্ষ জানায়—ঘটনার সময় কর্পোরাল মুহাম্মদ রহিমি আমিরুদ্দিন গাড়িতে একাই ছিলেন। তিনি পরিবার পরিদর্শন শেষে কাজে ফিরছিলেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত তার স্বজনরা সংবাদমাধ্যমে কিছু বলতে রাজি হননি। শুধু নীরবতা, উদ্বেগ আর অপেক্ষা।
নরহিজাম বলেন, “তাকে পাওয়া না পর্যন্ত অভিযান থামবে না।”
এই দীর্ঘ রাত্রি আর অনিশ্চয়তার মাঝেই সেপাংয়ে এখনও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সেই একটাই নাম—কর্পোরাল মুহাম্মদ রহিমি আমিরুদ্দিন।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















