আক্রমণের তিন বছর নয় মাস পরও ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। খবর, বিশ্লেষণ, কূটনৈতিক শব্দযুদ্ধ—সবকিছুই প্রতিদিন বাড়ছে। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে বাস্তবতা দাঁড়িয়েছে একই জায়গায়: এই যুদ্ধের সামনে এখনো কোনো পরিসমাপ্তি নেই।
ইউরোপের নেতৃত্ব, ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশল পরিবর্তন
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব ভূমিকা নিচ্ছে।
যে যুদ্ধে একসময় যুক্তরাষ্ট্রই মূল সহায়তা দিত, সেখানে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে ইউরোপ। তবুও ওয়াশিংটন পিছিয়ে নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, যাকে ইউক্রেনকে সাহায্য না করার সন্দেহে বারবার সমালোচিত করা হয়েছিল, এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে চাপ বাড়াচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্র শুধু গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করছে না; তারা ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরের গভীর লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা চালানোর অনুমতি দিচ্ছে।
এই আঘাতে রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বছরের শুরু থেকে তাদের জ্বালানি রপ্তানি কমেছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

লুকোইল ও রসনেফটের ওপর নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে সময় নেবে, কিন্তু এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি।
উপরন্তু, ভারতকে—রাশিয়ার অন্যতম বড় ক্রেতা—চাপ দেওয়া হচ্ছে আমদানি কমাতে। ভারত ইতোমধ্যেই সাড়া দিচ্ছে।
এর ফলে রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্র আগামী বছরগুলোতে বিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
ইউক্রেনের জনবল ঘাটতি তাদের বড় ধরনের পাল্টা আক্রমণ চালাতে বাধা দিচ্ছে।
কিন্তু সুনির্দিষ্ট দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হাতে থাকায় রাশিয়ার উষ্ণ-পানির বন্দরগুলো হঠাৎই ঝুঁকিতে পড়েছে—যেগুলো শীতে জমে না এবং রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির প্রধান পথ।
এইসব স্থাপনা রক্ষায় রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কতটা সক্ষম, তা এখনও অনিশ্চিত।
পুতিনের কঠোর অবস্থান ও শীতের অন্ধকার
সব সত্ত্বেও কোনো ইঙ্গিত নেই যে ভ্লাদিমির পুতিন শিগগিরই পিছু হটবেন।
রাশিয়া পশ্চিমাদের চাপ সহ্য করতে সক্ষম—তারা তা প্রমাণও করেছে।

২০২৬ সালে নিষেধাজ্ঞা, ইউরোপের ঐক্য, বা ট্রাম্পের অধৈর্যতা—কোনোটাই রাশিয়াকে হামলার মাত্রা কমাতে বাধ্য করবে না।
এদিকে ইউক্রেনে শীত আবারও হয়ে উঠবে নির্মম।
রাশিয়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বারবার আঘাত হানবে, ইউক্রেনের দুর্বল বায়ুরক্ষা ভেঙে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে।
এটি শুধু অর্থনীতিকে নয়, মানুষের মনোবলকেও আঘাত করবে।
জুলাইয়ের গ্যালাপ জরিপ বলছে—৬৯% ইউক্রেনীয় যুদ্ধের দ্রুত আলোচনাভিত্তিক সমাপ্তি চান; ২৪% চান পুরো বিজয়ের লক্ষ্যে লড়াই।
এই মনোভাব ২০২২–২৩ সালের অবস্থানের ঠিক বিপরীত।
কিন্তু আলোচনা এখনই সম্ভব নয়। পুতিন দাবি করছেন ইউক্রেনকে আরও বেশি ভূমি ছেড়ে দিতে হবে, পাশাপাশি দেশটিকে কার্যত নিরস্ত্র হতে হবে—যা জেলেনস্কি সরকারের জন্য সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

ইউরোপীয় দেশগুলো তাই প্রস্তুতি নিচ্ছে দীর্ঘ লড়াইয়ের। তারা আগামী দুই বছরে স্থগিত রুশ সম্পদ থেকে ১৪০ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত ইউক্রেনকে দিতে পারে—যা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মাঠে রাশিয়ার ছোটখাটো অগ্রগতি থাকবে।
ইউক্রেনীয় বেসামরিক মানুষের জীবন আরও চূর্ণবিচূর্ণ হবে।
উভয় পক্ষের সৈন্যদের মৃত্যু বাড়বে—বিশেষ করে রাশিয়ার।
মস্কো ন্যাটো দেশগুলোকে উত্তেজিত করতে থাকবে—গোপনচরবৃত্তি, নাশকতা, ড্রোন অনুপ্রবেশ, সাইবার হামলা—যতটা সম্ভব, কিন্তু এমন মাত্রায় যাতে বড় যুদ্ধ না বাঁধে।
এই যুদ্ধের শেষ তাই এখনো দূরে—অন্ধকার শীতের মতোই দীর্ঘ, ধীর, এবং নির্দয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















