১২:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
এশিয়ার কনটেন্ট হাব হতে ১৫৪ মিলিয়ন ডলারের নতুন ফিল্ম–টিভি তহবিল ঘোষণা সিঙ্গাপুরের ১০ জানুয়ারি থেকে কঠোর আন্দোলনের হুমকি সচিবালয় কর্মচারীদের জেডআই খান পান্নার নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে ৩৯১ জামায়াতের জন্য উপযুক্ত দল ছিল আওয়ামী লীগ: মির্জা আব্বাস বিদ্যুৎ লাইনে কাপড় পড়ে ১৫ মিনিট বন্ধ থাকে ঢাকার মেট্রোরেল খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করতে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ খালেদা জিয়া প্রাসাদে নয়, রাজপথে রাজনীতি করেছেন: মঈন খান প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সক্ষমতা বিকাশে সকলের যৌথ দায়িত্ব ঘূর্ণিঝড় দিতওয়া ও ভারত–শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক: পারস্পরিক কূটনীতির নতুন পাঠ

আফগানদের গণনির্বাসন

অসংখ্য আফগান শরণার্থী পাকিস্তান থেকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হচ্ছে। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা, সামরিক সংঘর্ষ এবং সীমান্ত বন্ধের মধ্যেই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বহু দশক ধরে আশ্রয় নেওয়া আফগান সম্প্রদায়কে আর ধারণ করতে পারছে না বলে জানিয়েছে।

এই বছর এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে বসবাসকারী প্রায় ৩০ লাখ আফগানের মধ্যে প্রায় ১০ লাখকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বা বাধ্য করা হয়েছে আফগানিস্তানে ফিরে যেতে—এক এমন দেশে, যেখানে অনেকেরই জন্ম হয়নি, যেখানে কাজের সুযোগ কম, বাড়ি ভাড়া হাতের নাগালে নয়, আর মানবিক পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

অনেকেই পুরো জীবন পাকিস্তানেই কাটিয়েছেন—যে দেশটি ১৯৭৯ সালের সোভিয়েত আগ্রাসনের পর থেকে আফগানদের আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।


বিতাড়নের ভয় ও বাধ্যতামূলক প্রস্থান

করাচির উপকণ্ঠে এক সন্ধ্যায় চারটি পরিবার, একটি মাত্র ৭ দিনের নবজাতকসহ, নিজেদের অল্পকিছু মালপত্র—বিছানার খাট, মুরগি, পানির জেরিক্যান, কয়েকটি ব্যাগ—একটি ট্রাকে তুলছিলেন।

সাইফুদ্দিন, যিনি এক নামে পরিচিত, বললেন তারা crackdown আরও কঠোর হওয়ার আগেই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মসজিদে এবং পুলিশের লাউডস্পিকারে তাদের বারবার ফিরে যাওয়ার নির্দেশ শোনা যাচ্ছিল।

তিনি বললেন, “এখানে ৪৫ বছর কাটালাম, তবুও এটা আমাদের দেশ নয়। আর আফগানিস্তানে আমাদের একটি ঘরও নেই।”

Pakistan issues fresh call for Afghans to leave country, thousands rush to  border

দশক ধরে দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চলে, ভাষা ও সংস্কৃতির মিল থাকায় বহু আফগান আসা-যাওয়া করেছেন। বহিষ্কার নতুন নয়, কিন্তু এবার যে পদ্ধতিতে সবাইকে নির্বিশেষে তাড়ানো হচ্ছে, তা নজিরবিহীন।

পাকিস্তানের ঘোষণা—যে কোনো অবস্থাতেই সব আফগানকে বের করে দেওয়া হবে, তাদের বৈধ কাগজপত্র আছে কি নেই বা ফিরে গেলে বিপদের মুখে পড়বেন কি না—এসব কোনো কিছুই বিবেচনা করা হবে না।

পশ্চিমা দেশের নিষেধাজ্ঞা ও ইরানের ভূমিকা

পাকিস্তানের এই পদক্ষেপের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোও আফগানদের প্রবেশে বিধিনিষেধ বাড়াচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তান থেকে অভিবাসন আবেদন গ্রহণ বন্ধ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে থাকা আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের অবস্থাও পুনর্বিবেচনা করবে—বিশেষত যারা মার্কিন বা ন্যাটো বাহিনীর হয়ে কাজ করেছিলেন। কারণ সম্প্রতি ওয়াশিংটনে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলি করা মামলার প্রধান সন্দেহভাজন একজন আফগান।

ইরানও এ বছর ১৫ লাখের বেশি আফগানকে ফেরত পাঠিয়েছে বা জোর করে বের করে দিয়েছে। বিদেশে থাকা আফগানরা দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের জন্য রেমিট্যান্স এবং সীমান্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হিসেবে কাজ করে এসেছে।

কিন্তু পাকিস্তান ও ইরান উভয় দেশেই যখন অর্থনৈতিক সংকট বেড়েছে, xenophobia-র সুর চড়েছে এবং ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ব্যাপক বহিষ্কার আরও দ্রুততর হয়েছে। সেই সময় থেকে দুই দেশ মিলিয়ে ৪৫ লক্ষের বেশি আফগানকে বের করে দিয়েছে, যার মধ্যে ২৫ লক্ষই এ বছর।

UN urges Pakistan to halt refugee expulsions after deadly quake in  Afghanistan

বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, গ্রেপ্তার ও নিপীড়ন

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বাড়িওয়ালাদের বলেছে আফগান ভাড়াটিয়াদের বের করে দিতে, এমনকি কিছু প্রদেশে নাগরিকদের ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ ব্যবস্থা ব্যবহার করে আফগানদের ধরিয়ে দিতে উৎসাহিত করেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর পাকিস্তান ১২ গুণ বেশি আফগানকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সানা আলিমিয়া বলেন, “এই মাত্রার বহিষ্কার ও জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন নৃশংসতার পর্যায়ে পৌঁছেছে।”

সাইফুদ্দিনদের মতো বহু পরিবার পুলিশের গ্রেপ্তারের আগেই নিজেরাই রাস্তায় ট্রাকে মালপত্র তুলে সীমান্তের দিকে রওনা দিচ্ছে।

তারা করাচির বস্তি এলাকা থেকে তাড়িত হচ্ছে—যারা স্ক্র্যাপ সংগ্রহ করে বা দিনমজুরি করে বেঁচে ছিলেন। অনেকে লাহোর ছেড়ে চলে গেছেন, কেউ বালুচিস্তানের পেঁয়াজক্ষেত বা কয়লাখনি থেকেও জীবিকা হারিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।

ইসলামাবাদের এক পার্কে আশ্রয় নেওয়া ২৪ বছর বয়সী আফগান দন্তচিকিৎসা শিক্ষার্থী মেহরাফজন জালিলি বললেন, “আমরা পুরোপুরি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দয়ার ওপর নির্ভরশীল।”

গত মঙ্গলবার পুলিশ ওই পার্কে অভিযান চালিয়ে শত শত আফগানকে গ্রেপ্তার করে নির্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে গেছে—এ ঘটনার ভিডিও তারা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দিয়েছেন।


‘মুজাহিদিন’ থেকে ‘হুমকি’—আফগানদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে

সোভিয়েত আক্রমণের পর পাকিস্তান প্রথমে আফগানদের ‘মুজাহিদ’ ও ‘ইসলামি ভ্রাতা’ হিসেবে স্বাগত জানায়।

কিন্তু বছরের পর বছর সরকারি বক্তব্য বদলে গেছে—এখন তাদের “অপরাধী”, “মাদক ব্যবসায়ী”, এমনকি “সন্ত্রাসী” হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, “দশক ধরে আমরা তাদের উন্মুক্তভাবে গ্রহণ করেছি। কিন্তু বিপুলসংখ্যক আফগান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।”

সাম্প্রতিক এক বোমা হামলায় ইসলামাবাদের একটি আদালতে ১২ জন নিহত হওয়ার জন্যও একজন আফগানকে দায়ী করছে পাকিস্তান।

Fed Up With the Taliban, Pakistan Expels Masses of Afghans - The New York  Times

পাকিস্তানি তালেবানের এক গোষ্ঠী, যারা আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছে, দায় স্বীকার করেছে।

পাকিস্তান অভিযোগ করছে—আফগান সরকার তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে, সমর্থন দিচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা গত সপ্তাহে তুঙ্গে ওঠে, যখন পেশোয়ারের কাছে এক আত্মঘাতী হামলায় তিন কর্মকর্তা নিহত ও ১১ জন আহত হন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এ হামলার জন্য পাকিস্তানি তালেবানকে দায়ী করেন।

পাকিস্তান পাল্টা আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোতে ও সীমান্ত অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে। তালেবান সরকার অভিযোগ করেছে—এই হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে, যদিও পাকিস্তান দায় অস্বীকার করেছে।

এদিকে আফগান বাহিনীও পাল্টা পাক সামরিক পোস্টে হামলা চালিয়েছে। সহিংসতা এতটাই বেড়েছে যে কাতার, তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়া মধ্যস্থতায় চেষ্টা করলেও ফল পাওয়া যায়নি।

এই সংঘাতের মাঝেই আফগান নাগরিকরা পাকিস্তানে অসহায় অবস্থায় পড়ে গেছে। তাদের ভিসা নবায়ন বন্ধ, এমনকি আজীবন পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া শিশুদেরও বহিষ্কারের তালিকায় রাখা হয়েছে। পাকিস্তানে থাকা আফগানদের মধ্যে ৬ লাখ ২০ হাজারই ১৫ বছরের নিচের শিশু।

গবেষক সাবা গুল খাত্তাক বলেন, “এই ভাবে বিতাড়িত হওয়ার স্মৃতি তরুণ প্রজন্মের মনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেগে থাকবে।”


ধনী আফগানদের বাঁচার পথ, গরিবদের ওপর চাপ

যাদের অর্থ বা সম্পর্ক আছে, তারা এখনো ঘুষ দিয়ে বা অন্যভাবে বহিষ্কার এড়াতে পারছেন। কিন্তু পুরো বোঝা পড়ছে দরিদ্রদের ওপর।

মেহরাফজন জালিলির পরিবারও বাড়িওয়ালার চাপের মুখে উচ্ছেদ হয়েছে। তিনি বছরখানেক হাসপাতালের রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন—মা ও তিন ভাইবোনের প্রধান উপার্জনকারী ছিলেন তিনি।

তার বাবা ছিলেন আফগান সেনাবাহিনীর কর্নেল; তালেবান তাকে ধরে হত্যা করে, তিনি বলেন।

রাতে আফগান পুরুষেরা পালাক্রমে পার্কের ফটকে পাহারা দিতেন। তবুও পুলিশ এসে সবাইকে জোর করে বাসে তুলে নিয়ে গেছে।

জালিলির বৈধ ভিসা আছে, এবং তিনি আটককেন্দ্র থেকে জানিয়েছেন—তিনি ও তার পরিবারকে যদি ফেরত না পাঠানো হয়, সেটাই তার আশা।

তিনি লিখেছেন, “কিন্তু অন্যদের কী হবে? তাদের তো ফেরত পাঠিয়ে দেবে। তখন কে জিজ্ঞেস করবে?”

জনপ্রিয় সংবাদ

এশিয়ার কনটেন্ট হাব হতে ১৫৪ মিলিয়ন ডলারের নতুন ফিল্ম–টিভি তহবিল ঘোষণা সিঙ্গাপুরের

আফগানদের গণনির্বাসন

০৭:৩৮:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

অসংখ্য আফগান শরণার্থী পাকিস্তান থেকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হচ্ছে। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা, সামরিক সংঘর্ষ এবং সীমান্ত বন্ধের মধ্যেই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বহু দশক ধরে আশ্রয় নেওয়া আফগান সম্প্রদায়কে আর ধারণ করতে পারছে না বলে জানিয়েছে।

এই বছর এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে বসবাসকারী প্রায় ৩০ লাখ আফগানের মধ্যে প্রায় ১০ লাখকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বা বাধ্য করা হয়েছে আফগানিস্তানে ফিরে যেতে—এক এমন দেশে, যেখানে অনেকেরই জন্ম হয়নি, যেখানে কাজের সুযোগ কম, বাড়ি ভাড়া হাতের নাগালে নয়, আর মানবিক পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

অনেকেই পুরো জীবন পাকিস্তানেই কাটিয়েছেন—যে দেশটি ১৯৭৯ সালের সোভিয়েত আগ্রাসনের পর থেকে আফগানদের আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।


বিতাড়নের ভয় ও বাধ্যতামূলক প্রস্থান

করাচির উপকণ্ঠে এক সন্ধ্যায় চারটি পরিবার, একটি মাত্র ৭ দিনের নবজাতকসহ, নিজেদের অল্পকিছু মালপত্র—বিছানার খাট, মুরগি, পানির জেরিক্যান, কয়েকটি ব্যাগ—একটি ট্রাকে তুলছিলেন।

সাইফুদ্দিন, যিনি এক নামে পরিচিত, বললেন তারা crackdown আরও কঠোর হওয়ার আগেই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মসজিদে এবং পুলিশের লাউডস্পিকারে তাদের বারবার ফিরে যাওয়ার নির্দেশ শোনা যাচ্ছিল।

তিনি বললেন, “এখানে ৪৫ বছর কাটালাম, তবুও এটা আমাদের দেশ নয়। আর আফগানিস্তানে আমাদের একটি ঘরও নেই।”

Pakistan issues fresh call for Afghans to leave country, thousands rush to  border

দশক ধরে দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চলে, ভাষা ও সংস্কৃতির মিল থাকায় বহু আফগান আসা-যাওয়া করেছেন। বহিষ্কার নতুন নয়, কিন্তু এবার যে পদ্ধতিতে সবাইকে নির্বিশেষে তাড়ানো হচ্ছে, তা নজিরবিহীন।

পাকিস্তানের ঘোষণা—যে কোনো অবস্থাতেই সব আফগানকে বের করে দেওয়া হবে, তাদের বৈধ কাগজপত্র আছে কি নেই বা ফিরে গেলে বিপদের মুখে পড়বেন কি না—এসব কোনো কিছুই বিবেচনা করা হবে না।

পশ্চিমা দেশের নিষেধাজ্ঞা ও ইরানের ভূমিকা

পাকিস্তানের এই পদক্ষেপের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোও আফগানদের প্রবেশে বিধিনিষেধ বাড়াচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তান থেকে অভিবাসন আবেদন গ্রহণ বন্ধ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে থাকা আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের অবস্থাও পুনর্বিবেচনা করবে—বিশেষত যারা মার্কিন বা ন্যাটো বাহিনীর হয়ে কাজ করেছিলেন। কারণ সম্প্রতি ওয়াশিংটনে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলি করা মামলার প্রধান সন্দেহভাজন একজন আফগান।

ইরানও এ বছর ১৫ লাখের বেশি আফগানকে ফেরত পাঠিয়েছে বা জোর করে বের করে দিয়েছে। বিদেশে থাকা আফগানরা দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের জন্য রেমিট্যান্স এবং সীমান্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হিসেবে কাজ করে এসেছে।

কিন্তু পাকিস্তান ও ইরান উভয় দেশেই যখন অর্থনৈতিক সংকট বেড়েছে, xenophobia-র সুর চড়েছে এবং ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ব্যাপক বহিষ্কার আরও দ্রুততর হয়েছে। সেই সময় থেকে দুই দেশ মিলিয়ে ৪৫ লক্ষের বেশি আফগানকে বের করে দিয়েছে, যার মধ্যে ২৫ লক্ষই এ বছর।

UN urges Pakistan to halt refugee expulsions after deadly quake in  Afghanistan

বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, গ্রেপ্তার ও নিপীড়ন

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বাড়িওয়ালাদের বলেছে আফগান ভাড়াটিয়াদের বের করে দিতে, এমনকি কিছু প্রদেশে নাগরিকদের ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ ব্যবস্থা ব্যবহার করে আফগানদের ধরিয়ে দিতে উৎসাহিত করেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর পাকিস্তান ১২ গুণ বেশি আফগানকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সানা আলিমিয়া বলেন, “এই মাত্রার বহিষ্কার ও জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন নৃশংসতার পর্যায়ে পৌঁছেছে।”

সাইফুদ্দিনদের মতো বহু পরিবার পুলিশের গ্রেপ্তারের আগেই নিজেরাই রাস্তায় ট্রাকে মালপত্র তুলে সীমান্তের দিকে রওনা দিচ্ছে।

তারা করাচির বস্তি এলাকা থেকে তাড়িত হচ্ছে—যারা স্ক্র্যাপ সংগ্রহ করে বা দিনমজুরি করে বেঁচে ছিলেন। অনেকে লাহোর ছেড়ে চলে গেছেন, কেউ বালুচিস্তানের পেঁয়াজক্ষেত বা কয়লাখনি থেকেও জীবিকা হারিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।

ইসলামাবাদের এক পার্কে আশ্রয় নেওয়া ২৪ বছর বয়সী আফগান দন্তচিকিৎসা শিক্ষার্থী মেহরাফজন জালিলি বললেন, “আমরা পুরোপুরি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দয়ার ওপর নির্ভরশীল।”

গত মঙ্গলবার পুলিশ ওই পার্কে অভিযান চালিয়ে শত শত আফগানকে গ্রেপ্তার করে নির্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে গেছে—এ ঘটনার ভিডিও তারা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দিয়েছেন।


‘মুজাহিদিন’ থেকে ‘হুমকি’—আফগানদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে

সোভিয়েত আক্রমণের পর পাকিস্তান প্রথমে আফগানদের ‘মুজাহিদ’ ও ‘ইসলামি ভ্রাতা’ হিসেবে স্বাগত জানায়।

কিন্তু বছরের পর বছর সরকারি বক্তব্য বদলে গেছে—এখন তাদের “অপরাধী”, “মাদক ব্যবসায়ী”, এমনকি “সন্ত্রাসী” হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, “দশক ধরে আমরা তাদের উন্মুক্তভাবে গ্রহণ করেছি। কিন্তু বিপুলসংখ্যক আফগান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।”

সাম্প্রতিক এক বোমা হামলায় ইসলামাবাদের একটি আদালতে ১২ জন নিহত হওয়ার জন্যও একজন আফগানকে দায়ী করছে পাকিস্তান।

Fed Up With the Taliban, Pakistan Expels Masses of Afghans - The New York  Times

পাকিস্তানি তালেবানের এক গোষ্ঠী, যারা আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছে, দায় স্বীকার করেছে।

পাকিস্তান অভিযোগ করছে—আফগান সরকার তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে, সমর্থন দিচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা গত সপ্তাহে তুঙ্গে ওঠে, যখন পেশোয়ারের কাছে এক আত্মঘাতী হামলায় তিন কর্মকর্তা নিহত ও ১১ জন আহত হন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এ হামলার জন্য পাকিস্তানি তালেবানকে দায়ী করেন।

পাকিস্তান পাল্টা আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোতে ও সীমান্ত অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে। তালেবান সরকার অভিযোগ করেছে—এই হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে, যদিও পাকিস্তান দায় অস্বীকার করেছে।

এদিকে আফগান বাহিনীও পাল্টা পাক সামরিক পোস্টে হামলা চালিয়েছে। সহিংসতা এতটাই বেড়েছে যে কাতার, তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়া মধ্যস্থতায় চেষ্টা করলেও ফল পাওয়া যায়নি।

এই সংঘাতের মাঝেই আফগান নাগরিকরা পাকিস্তানে অসহায় অবস্থায় পড়ে গেছে। তাদের ভিসা নবায়ন বন্ধ, এমনকি আজীবন পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া শিশুদেরও বহিষ্কারের তালিকায় রাখা হয়েছে। পাকিস্তানে থাকা আফগানদের মধ্যে ৬ লাখ ২০ হাজারই ১৫ বছরের নিচের শিশু।

গবেষক সাবা গুল খাত্তাক বলেন, “এই ভাবে বিতাড়িত হওয়ার স্মৃতি তরুণ প্রজন্মের মনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেগে থাকবে।”


ধনী আফগানদের বাঁচার পথ, গরিবদের ওপর চাপ

যাদের অর্থ বা সম্পর্ক আছে, তারা এখনো ঘুষ দিয়ে বা অন্যভাবে বহিষ্কার এড়াতে পারছেন। কিন্তু পুরো বোঝা পড়ছে দরিদ্রদের ওপর।

মেহরাফজন জালিলির পরিবারও বাড়িওয়ালার চাপের মুখে উচ্ছেদ হয়েছে। তিনি বছরখানেক হাসপাতালের রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন—মা ও তিন ভাইবোনের প্রধান উপার্জনকারী ছিলেন তিনি।

তার বাবা ছিলেন আফগান সেনাবাহিনীর কর্নেল; তালেবান তাকে ধরে হত্যা করে, তিনি বলেন।

রাতে আফগান পুরুষেরা পালাক্রমে পার্কের ফটকে পাহারা দিতেন। তবুও পুলিশ এসে সবাইকে জোর করে বাসে তুলে নিয়ে গেছে।

জালিলির বৈধ ভিসা আছে, এবং তিনি আটককেন্দ্র থেকে জানিয়েছেন—তিনি ও তার পরিবারকে যদি ফেরত না পাঠানো হয়, সেটাই তার আশা।

তিনি লিখেছেন, “কিন্তু অন্যদের কী হবে? তাদের তো ফেরত পাঠিয়ে দেবে। তখন কে জিজ্ঞেস করবে?”