০১:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
হোয়াইট হাউসের শোভা: ছুটির মৌসুমে ‘ঘর’ সাজানো ধনী আমেরিকানরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য দায়ী নারী নিহত, ভাতিজি আহত: জয়পুরহাটে দুর্বৃত্তদের হামলা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীর মৃত্যু গাজীপুরে কারখানার দূষিত পানি পানে অসুস্থ তিন শতাধিক শ্রমিক ঘোড়া ছুটে গেল? লাল পোশাকের রাইডারদের প্রস্তুত থাকতে হবে আমেরিকার ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য আরও আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির দাবি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজের স্বপ্নের প্রকল্প বড় হচ্ছে ,স্থপতিরাও আশঙ্কিত ধনীদের নতুন ট্রেন্ড: আকস্মিক ‘ট্রাস্ট রিভিল’ অনুষ্ঠানে উত্তরাধিকারীদের সামনে সম্পদ ঘোষণা যত্নদাতাদের নিজেদের যত্ন নেওয়ার লড়াই

যত্নদাতাদের নিজেদের যত্ন নেওয়ার লড়াই

প্রিয়জনের যত্ন নেওয়া অনেকের কাছে একদিকে দায়িত্ব, অন্যদিকে বিশেষ এক সৌভাগ্য। তবে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ বা মৃত্যুপথযাত্রী কারও পাশে থাকা মানে অবিরাম চাপ, ভয়, শোক ও অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করা। ছুটির মৌসুম এলে সেই চাপ আরও বেড়ে যায়। অনেক যত্নদাতা নিজস্ব সময় বের করতে না পেরে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, কারণ তাদের একই সঙ্গে কাজ, পরিবার, সামাজিক দায়িত্ব এবং অসুস্থ মানুষের দেখাশোনা সামলাতে হয়।

Archangels নামের একটি সংগঠনের প্রধান আলেক্সান্দ্রা ড্রেন বলেন, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর একটি হলো caregiving। তাঁর ভাষায়, মানুষ যখন পরিবার, সন্তান, কাজ এবং অসুস্থ প্রিয়জনের প্রতি দায়িত্ব একসঙ্গে বহন করে, তখন তারা ভেঙে পড়ার মুখে চলে যায়। উজ্জ্বল উৎসবের মৌসুম সেই ভেঙে পড়ার অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তোলে—অনেকে উৎসবে যোগ দিতে পারেন না বা যোগ দিলেও অন্তরের দুঃখ লুকিয়ে রাখতে হয়। যাদের প্রিয়জন মৃত্যুর পথে, মৌসুমের আনন্দ তাদের শোককে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে যত্নদাতারা প্রথমেই শরীরের যত্ন নেওয়ার দিকে নজর দেন। পর্যাপ্ত ঘুম, ভালো খাবার ও নিয়মিত ব্যায়াম তাদের শক্তি জোগায়। তবে মানসিক কৌশলই সবচেয়ে কার্যকর হয়ে ওঠে। অনেকেই প্রতিদিনের অনুভূতি লিখে রাখেন, কারও সঙ্গে কথা বলেন, অথবা হাসির কিছু দেখেন, যেন মন কিছুটা হালকা হয়। কেউ ধ্যান করেন, প্রার্থনায় মনোযোগ দেন। কৃতজ্ঞতার চর্চাও অনেককে টিকিয়ে রাখে—অ্যালিসন গিলবার্ট যেমন মনে করতেন, যতদিন সময় আছে, সেটিই একটি প্রাপ্তি। Dominick Perrotta নিজেকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিতেন, নেতিবাচক চিন্তা তাকে কোনো সাহায্য করছে না। লেখক ডিয়ার্ড্রে ফ্যাগান বুঝেছিলেন, ভবিষ্যৎ বা অতীত নিয়ে বেশি ভাবলে মন আরও ভারী হয়ে ওঠে; একেকটি মিনিট ধরে জীবন সামলাতে পারলেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আসে।

অনেক যত্নদাতা বলেন, নিজের অনুভূতি চেপে রাখা সবচেয়ে ক্ষতিকর। সান ডিয়েগোর মাই ওয়েস্টন আগে খুব ব্যক্তিগত মানুষ ছিলেন, কিন্তু বাবা-মায়ের কঠিন অসুস্থতার সময় তিনি বুঝেছেন—সত্যি কথা বলা তাকে শক্তি দেয়। অপরিচিত কেউ জিজ্ঞেস করলেও তিনি জানান যে তাঁর বাবা মৃত্যুপথযাত্রী। প্রতিক্রিয়া কখনও অস্বস্তিকর হলেও বেশিরভাগ সময় মানুষ তাঁর কথা শোনে, জানতে চায়, যা তাঁকে মানসিকভাবে সাহস জোগায়। সন্তানদের সঙ্গেও তিনি খোলামেলা কথা বলেন, যাতে তারাও পরিস্থিতি বুঝতে পারে।

ওহাইওর টেকা থম্পসন পাঁচ বছর ধরে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত মা এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থ সঙ্গীর দেখভাল করছেন। বিরতির সুযোগ খুবই কম। তাই তিনি নিজের চাপ বুঝতে ছোট ছোট বিরতি নেন, যাকে তিনি বলেন “capacity check-in”। কোনো কঠিন পরিস্থিতির পর গাড়ি নিয়ে একটু ঘুরে এসে বা পাশের দোকানে গিয়ে বন্ধুর সঙ্গে একটু কথা বলেই তিনি মন হালকা করেন। তাঁর ভাষায়, caregiving প্রতিদিন অল্প অল্প করে শোক বয়ে আনে, আর এই ছোট বিরতিগুলো সেই শোকের মুখোমুখি হতে সাহায্য করে।

অসুস্থ মানুষের দুঃখ, ভয় বা রাগ খুব সহজেই যত্নদাতার উপর স্থানান্তরিত হয়। ক্যাথরিন ডানকান নিজের শ্বাশুড়ির মৃত্যুর সময় দেখেছিলেন, শ্বাশুড়ির আতঙ্ক তিনিও নিজের মধ্যে টেনে নিচ্ছেন। পরে একজন হোলিস্টিক চিকিৎসকের কাছ থেকে তিনি শিখেছিলেন মানসিক সীমানা তৈরি করতে—একটি অদৃশ্য সুরক্ষা বলয়ের মতো কল্পনা, যা অন্যের ভারী আবেগ নিজের ভেতরে ঢুকতে দেয় না। এতে তিনি স্থির থাকতে পেরেছিলেন এবং মৃত্যুপথযাত্রী মানুষটির কাছে আরও শান্ত ও সহানুভূতিশীলভাবে থাকতে পেরেছিলেন।

অনেক যত্নদাতা caregiving-কে জীবনের এক পবিত্র সময় বলে মনে করেন। ইন্ডিয়া ডানকান তাঁর স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর নিজের সব সামাজিক কার্যক্রম বাদ দিয়ে পুরো সময়টাই তাঁর যত্নে ব্যয় করেছিলেন। চাপ এতটাই তীব্র ছিল যে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু তিনি নিজেকে বোঝাতেন—তিনি এক আধ্যাত্মিক যাত্রার অংশ, যেখানে জীবনের শেষ মুহূর্তে স্বামীকে সমর্থন করা তাঁর অস্তিত্বের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্বামীর মৃত্যুর সময়ও তিনি প্রার্থনা ও মন্ত্রপাঠে নিমগ্ন ছিলেন। এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে শোক সামলাতে সাহায্য করেছে।

আমার নিজের caregiving অভিজ্ঞতা শুরু হয়েছিল বাবার স্ট্রোকের পর। তাঁকে হারানোর পর এখন মায়ের গুরুতর অসুস্থতার সময়ে আমি তাঁর পাশে রয়েছি। প্রতিদিনের ছোট ছোট ইতিবাচক মুহূর্ত আমাকে এগিয়ে রাখে—বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথন, একটি ভালো দিন, কিংবা একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ। সঙ্গীর সঙ্গে caregiving-এর বাইরে অন্য বিষয়ে কথা বলাও আমাকে ভারসাম্য দেয়। আর আছে আমার কুকুর স্কাউট, যার সঙ্গে সময় কাটালে মন নরম হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি শক্তি পাই এই ভেবে—আমি সেই ধরনের সন্তান হয়েছি, যেটি হতে চেয়েছিলাম। কঠিন দিন আসে, কখনও বাইরে গিয়ে কাঁদতে হয় বা গভীর শ্বাস নিতে হয়। কিন্তু মায়ের পাশে থেকে তাঁকে সাহায্য করতে পারা—এই অনুভূতিই আমাকে অনুতাপহীন রাখে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

হোয়াইট হাউসের শোভা: ছুটির মৌসুমে ‘ঘর’ সাজানো

যত্নদাতাদের নিজেদের যত্ন নেওয়ার লড়াই

১১:৫৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রিয়জনের যত্ন নেওয়া অনেকের কাছে একদিকে দায়িত্ব, অন্যদিকে বিশেষ এক সৌভাগ্য। তবে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ বা মৃত্যুপথযাত্রী কারও পাশে থাকা মানে অবিরাম চাপ, ভয়, শোক ও অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করা। ছুটির মৌসুম এলে সেই চাপ আরও বেড়ে যায়। অনেক যত্নদাতা নিজস্ব সময় বের করতে না পেরে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, কারণ তাদের একই সঙ্গে কাজ, পরিবার, সামাজিক দায়িত্ব এবং অসুস্থ মানুষের দেখাশোনা সামলাতে হয়।

Archangels নামের একটি সংগঠনের প্রধান আলেক্সান্দ্রা ড্রেন বলেন, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর একটি হলো caregiving। তাঁর ভাষায়, মানুষ যখন পরিবার, সন্তান, কাজ এবং অসুস্থ প্রিয়জনের প্রতি দায়িত্ব একসঙ্গে বহন করে, তখন তারা ভেঙে পড়ার মুখে চলে যায়। উজ্জ্বল উৎসবের মৌসুম সেই ভেঙে পড়ার অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তোলে—অনেকে উৎসবে যোগ দিতে পারেন না বা যোগ দিলেও অন্তরের দুঃখ লুকিয়ে রাখতে হয়। যাদের প্রিয়জন মৃত্যুর পথে, মৌসুমের আনন্দ তাদের শোককে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে যত্নদাতারা প্রথমেই শরীরের যত্ন নেওয়ার দিকে নজর দেন। পর্যাপ্ত ঘুম, ভালো খাবার ও নিয়মিত ব্যায়াম তাদের শক্তি জোগায়। তবে মানসিক কৌশলই সবচেয়ে কার্যকর হয়ে ওঠে। অনেকেই প্রতিদিনের অনুভূতি লিখে রাখেন, কারও সঙ্গে কথা বলেন, অথবা হাসির কিছু দেখেন, যেন মন কিছুটা হালকা হয়। কেউ ধ্যান করেন, প্রার্থনায় মনোযোগ দেন। কৃতজ্ঞতার চর্চাও অনেককে টিকিয়ে রাখে—অ্যালিসন গিলবার্ট যেমন মনে করতেন, যতদিন সময় আছে, সেটিই একটি প্রাপ্তি। Dominick Perrotta নিজেকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিতেন, নেতিবাচক চিন্তা তাকে কোনো সাহায্য করছে না। লেখক ডিয়ার্ড্রে ফ্যাগান বুঝেছিলেন, ভবিষ্যৎ বা অতীত নিয়ে বেশি ভাবলে মন আরও ভারী হয়ে ওঠে; একেকটি মিনিট ধরে জীবন সামলাতে পারলেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আসে।

অনেক যত্নদাতা বলেন, নিজের অনুভূতি চেপে রাখা সবচেয়ে ক্ষতিকর। সান ডিয়েগোর মাই ওয়েস্টন আগে খুব ব্যক্তিগত মানুষ ছিলেন, কিন্তু বাবা-মায়ের কঠিন অসুস্থতার সময় তিনি বুঝেছেন—সত্যি কথা বলা তাকে শক্তি দেয়। অপরিচিত কেউ জিজ্ঞেস করলেও তিনি জানান যে তাঁর বাবা মৃত্যুপথযাত্রী। প্রতিক্রিয়া কখনও অস্বস্তিকর হলেও বেশিরভাগ সময় মানুষ তাঁর কথা শোনে, জানতে চায়, যা তাঁকে মানসিকভাবে সাহস জোগায়। সন্তানদের সঙ্গেও তিনি খোলামেলা কথা বলেন, যাতে তারাও পরিস্থিতি বুঝতে পারে।

ওহাইওর টেকা থম্পসন পাঁচ বছর ধরে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত মা এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থ সঙ্গীর দেখভাল করছেন। বিরতির সুযোগ খুবই কম। তাই তিনি নিজের চাপ বুঝতে ছোট ছোট বিরতি নেন, যাকে তিনি বলেন “capacity check-in”। কোনো কঠিন পরিস্থিতির পর গাড়ি নিয়ে একটু ঘুরে এসে বা পাশের দোকানে গিয়ে বন্ধুর সঙ্গে একটু কথা বলেই তিনি মন হালকা করেন। তাঁর ভাষায়, caregiving প্রতিদিন অল্প অল্প করে শোক বয়ে আনে, আর এই ছোট বিরতিগুলো সেই শোকের মুখোমুখি হতে সাহায্য করে।

অসুস্থ মানুষের দুঃখ, ভয় বা রাগ খুব সহজেই যত্নদাতার উপর স্থানান্তরিত হয়। ক্যাথরিন ডানকান নিজের শ্বাশুড়ির মৃত্যুর সময় দেখেছিলেন, শ্বাশুড়ির আতঙ্ক তিনিও নিজের মধ্যে টেনে নিচ্ছেন। পরে একজন হোলিস্টিক চিকিৎসকের কাছ থেকে তিনি শিখেছিলেন মানসিক সীমানা তৈরি করতে—একটি অদৃশ্য সুরক্ষা বলয়ের মতো কল্পনা, যা অন্যের ভারী আবেগ নিজের ভেতরে ঢুকতে দেয় না। এতে তিনি স্থির থাকতে পেরেছিলেন এবং মৃত্যুপথযাত্রী মানুষটির কাছে আরও শান্ত ও সহানুভূতিশীলভাবে থাকতে পেরেছিলেন।

অনেক যত্নদাতা caregiving-কে জীবনের এক পবিত্র সময় বলে মনে করেন। ইন্ডিয়া ডানকান তাঁর স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর নিজের সব সামাজিক কার্যক্রম বাদ দিয়ে পুরো সময়টাই তাঁর যত্নে ব্যয় করেছিলেন। চাপ এতটাই তীব্র ছিল যে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু তিনি নিজেকে বোঝাতেন—তিনি এক আধ্যাত্মিক যাত্রার অংশ, যেখানে জীবনের শেষ মুহূর্তে স্বামীকে সমর্থন করা তাঁর অস্তিত্বের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্বামীর মৃত্যুর সময়ও তিনি প্রার্থনা ও মন্ত্রপাঠে নিমগ্ন ছিলেন। এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে শোক সামলাতে সাহায্য করেছে।

আমার নিজের caregiving অভিজ্ঞতা শুরু হয়েছিল বাবার স্ট্রোকের পর। তাঁকে হারানোর পর এখন মায়ের গুরুতর অসুস্থতার সময়ে আমি তাঁর পাশে রয়েছি। প্রতিদিনের ছোট ছোট ইতিবাচক মুহূর্ত আমাকে এগিয়ে রাখে—বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথন, একটি ভালো দিন, কিংবা একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ। সঙ্গীর সঙ্গে caregiving-এর বাইরে অন্য বিষয়ে কথা বলাও আমাকে ভারসাম্য দেয়। আর আছে আমার কুকুর স্কাউট, যার সঙ্গে সময় কাটালে মন নরম হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি শক্তি পাই এই ভেবে—আমি সেই ধরনের সন্তান হয়েছি, যেটি হতে চেয়েছিলাম। কঠিন দিন আসে, কখনও বাইরে গিয়ে কাঁদতে হয় বা গভীর শ্বাস নিতে হয়। কিন্তু মায়ের পাশে থেকে তাঁকে সাহায্য করতে পারা—এই অনুভূতিই আমাকে অনুতাপহীন রাখে।