মিতিগা কারাগারে নির্যাতনের অভিযোগ, প্রথম হাজিরা দ্য হেগে
লিবিয়ার বহুল আলোচিত মিতিগা কারাগারে ব্যাপক নির্যাতন ও নির্যাতনমূলক আটক পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা খালেদ মোহাম্মদ আল হিশরি দ্য হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত–আইসিসির বিচারকদের সামনে প্রথমবারের মতো হাজির হয়েছেন। ৪৭ বছর বয়সী এই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রসিকিউটরদের দাবি, পশ্চিম লিবিয়ার এ কারাগারে হাজার হাজার বন্দিকে দীর্ঘ সময় ধরে অমানবিক পরিবেশে আটকে রাখা হয়েছিল, যাদের অনেকেই বৈদ্যুতিক শক, মারধর ও যৌন সহিংসতার শিকার হন। আদালতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আল হিশরি বিচারকদের উদ্দেশে কেবল বলেন, তিনি মুক্তি চান; বিচারকরা জানান, জামিন বা শর্তসাপেক্ষ মুক্তির আবেদন লিখিতভাবে দাখিল করতে হবে।

এই শুনানিকে লিবিয়ায় ২০১১ সালের গণ–অভ্যুত্থানের পর সংঘটিত অপরাধ নিয়ে আইসিসির দীর্ঘ অনুসন্ধানের একটি মোড় ঘোরানো ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত এক দশকে আদালত একাধিক লিবীয় সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করলেও আল হিশরি হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বাস্তবে আইসিসির হেফাজতে এলেন। তিনি জার্মানিতে গ্রেপ্তার হন এবং সেখান থেকে সম্প্রতি দ্য হেগের কারাগারে স্থানান্তরিত হন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ঘটনা দেখাচ্ছে যে, বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা থাকলে বিদেশে থাকা বা শক্তিশালী গোষ্ঠীর ছায়া পাওয়া সন্দেহভাজনকেও আন্তর্জাতিক বিচারের সামনে আনা সম্ভব। তবে এখনও লিবিয়ায় আইসিসির নয়টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঝুলে আছে, আর দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষমাণ বহু ভুক্তভোগীর কাছে বিচার কার্যক্রমের গতি ধীর মনে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিচারের সীমা, ভুক্তভোগীর প্রত্যাশা
এখন আদালতের বিচারকদের সামনে প্রশ্ন—আল হিশরিকে পুরো বিচার প্রক্রিয়া জুড়ে কারাগারে রাখা হবে, নাকি কঠোর শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হবে। আগামী বছরের মে মাসে অভিযোগ গঠনের শুনানি হওয়ার কথা থাকায়, বাস্তবিক বিচার শুরু হতে ২০২৬ সালের শেষ দিক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। আইনবিশেষজ্ঞদের মতে, লিবিয়ার টুকরো টুকরো নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে কমাণ্ড শৃঙ্খল প্রমাণ করা আইসিসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে, কারণ সরকারি বাহিনী, মিলিশিয়া ও বিভিন্ন সশস্ত্র জোটের ভূমিকা সেখানে প্রায়ই একে অন্যের সঙ্গে মিশে থাকে। একই সঙ্গে বিষয়টি রাজনৈতিকভাবেও স্পর্শকাতর; মিতিগা কারাগারকে ঘিরে ট্রিপোলির প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর নাম বারবার উঠেছে, ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা সব সময় নিশ্চিত নয়।

ভুক্তভোগী ও প্রাক্তন বন্দিদের দৃষ্টিতে মামলা নিয়ে আশা–নিরাশা মিলেমিশে আছে। কেউ কেউ মনে করেন, আন্তর্জাতিক আদালতে এ ধরনের হাজিরা তাদের কষ্টকে স্বীকৃতি দেয় এবং বহু বছর গোপনে চাপা থাকা নির্যাতনের গল্প বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার সুযোগ এনে দেয়। অন্যদের শঙ্কা, দ্য হেগে একটি মাত্র বড় বিচার দিয়ে লিবিয়ার ভেতরের দায়মুক্তির সংস্কৃতিতে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না—বিশেষ করে যখন স্থানীয় আদালত দুর্বল এবং সাক্ষী–ভুক্তভোগীদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থাও সীমিত। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থার পাশাপাশি লিবিয়ায় বাস্তব সংস্কার দরকার—কারাগারে স্বচ্ছ নজরদারি, নির্যাতন ও গুমের তদন্ত, এবং যারা সামনে এসে সাক্ষ্য দেবেন তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থাকে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করা জরুরি। তাদের মতে, ইউরোপ ও অঞ্চলের দেশগুলো যদি গ্রেপ্তার, প্রমাণ সংগ্রহ ও ভুক্তভোগী সহায়তায় ধারাবাহিকভাবে সহযোগিতা করে, তবে এ মামলা বিচ্ছিন্ন নজির হয়ে না থেকে লিবিয়ার যুদ্ধাপরাধের বিস্তৃত জবাবদিহির পথও খুলে দিতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















