রাশিয়া ভারত–রাশিয়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আগ্রহ জানিয়েছে। দেশটি ভারতের পণ্য ও সেবা আমদানি বাড়াতে চায়, যাতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও ভারসাম্যপূর্ণ, দীর্ঘমেয়াদি এবং পারস্পরিক লাভজনক হয়। নয়া দিল্লিতে ভারতীয় মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনা হয়।
রাশিয়ার উচ্চপর্যায়ের আলোচনা ও ভারতের সঙ্গে অগ্রগতি
নয়া দিল্লিতে সফররত রাশিয়ার প্রথম উপ–প্রধানমন্ত্রী দেনিস মন্তুরভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে বৈঠক করেন।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তরের উপ–প্রধান ম্যাক্সিম ওরেশকিন বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে ভারত–রাশিয়া বিজনেস ফোরামে যোগ দেন। এ বছরের ফোরামের মূল থিম ছিল—‘সেল টু রাশিয়া’।
২০৩০ সালের লক্ষ্য: বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা
দুই দেশ বর্তমানে প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করে। লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে এটিকে বাড়িয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।
রাশিয়ার প্রতিনিধিরা জানান, তারা ভারত থেকে আরও বেশি পণ্য ও সেবা আমদানি করতে আগ্রহী, যাতে বাণিজ্য ভারসাম্যপূর্ণ হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক শক্তিশালী হয়।

ভারতের বর্তমান বাণিজ্য ঘাটতি
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে রাশিয়ায় ভারতের রপ্তানি ছিল মাত্র ৪.৯ বিলিয়ন ডলারের কম। বিপরীতে আমদানি হয়েছে ৬৩.৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
প্রধানত জ্বালানি তেল আমদানির কারণেই ৫৯ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
আসন্ন ভারত–রাশিয়া সম্মেলনকে সামনে রেখে আলোচনা
অর্থমন্ত্রণালয় জানায়, সীতারামন ও মন্তুরভ ২৩তম ভারত–রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে (৫ ডিসেম্বর ২০২৫) শক্তিশালী অগ্রগতির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
রাশিয়ার উপ–প্রধানমন্ত্রী ভারতকে আসন্ন ব্রিকস সভাপতিত্বে পূর্ণ সমর্থনও দেন।
নতুন সম্ভাবনা: কোন খাতে রপ্তানি বাড়াতে চায় ভারত
বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী এবং দুই দেশ বাণিজ্যকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করতে কাজ করছে। তিনি জানান, ভারতীয় রপ্তানির জন্য ভোক্তা পণ্য, খাদ্য, গাড়ি, ট্র্যাক্টর, ভারী যানবাহন, ইলেকট্রনিক্স, শিল্প উপকরণ ও টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন খাতে বড় সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি ভারত–রাশিয়া সম্পর্ককে ‘সুখ–দুঃখের সাথী’ হিসেবেও উল্লেখ করেন।
রাশিয়ার মন্তব্য: ভারতের আমদানির অংশ অত্যন্ত কম
ম্যাক্সিম ওরেশকিন বলেন, রাশিয়ার মোট আমদানির মধ্যে ভারতের অংশ এখনো ২ শতাংশেরও কম, যা দুই দেশের প্রকৃত সম্ভাবনাকে প্রতিফলিত করে না।
তিনি জানান, দুই দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্যের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে, বিশেষত ভারতীয় রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে। তিনি ভোক্তা পণ্য, কৃষিপণ্য, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, টেলিকম, ইলেকট্রনিক্স, শিল্প উপকরণ ও দক্ষ জনশক্তি চলাচলকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করেন।

পূর্বের লক্ষ্য অর্জন ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ
গয়াল স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ও ভ্লাদিমির পুতিন প্রথম শীর্ষ বৈঠকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের লক্ষ্য স্থির করেছিলেন—যা ইতোমধ্যেই দ্বিগুণের বেশি অর্জিত হয়েছে। তবে এখন বাণিজ্য কাঠামোকে ভারসাম্যপূর্ণ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
রপ্তানি বাড়াতে নীতি সহজ করার প্রয়োজনীয়তা
এক বৈঠকে বাণিজ্য সচিব রাজেশ আগরওয়াল জানান, রাশিয়ায় রপ্তানি বাড়াতে হলে ব্যবসা–বাণিজ্যের নিয়ম ও প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। তিনি সম্প্রতি মস্কো সফরে ভারতীয় রপ্তানিকারক ও রুশ শিল্প প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন—দুই পক্ষই বিনিয়োগে আগ্রহী, তবে প্রয়োজন আরও সরল নীতি ও দ্রুত অনুমোদন।
#ভারতরাশিয়াবাণিজ্য #রাশিয়াবিনিয়োগ #দ্বিপাক্ষিকসম্পর্ক #অর্থনীতি #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















