০৪:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নেটফ্লিক্সের নতুন অ্যাকশন সিরিজ ‘টাইগো’-তে প্রধান চরিত্রে লিসা আইফোন টিমে একের পর এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিদায়, অ্যাপলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ক্রেবন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আগাম বন্ধের পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে ইন্দোনেশিয়া গ্লাস ডিসপ্লে–যুক্ত মেকানিক্যাল কিবোর্ড অবশেষে বাজারে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে প্রেস অ্যাক্সেস নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের মামলা  তথ্য সঠিক হলে সাংবাদিক মানহানির দায়ে পড়বেন না: দিল্লি হাইকোর্ট চট্টগ্রামে ঝুলন্ত অবস্থায় সিইউ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার মস্কোর ‘ট্রায়াম্ফ’: কেন রুশ এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সবার চাহিদায় জুবাইদা ঢাকায় পৌঁছে সরাসরি এভারকেয়ারে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান বাংলাদেশে তিন নতুন গ্যাসকূপ: সরকারের অনুমোদনে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকার অনুসন্ধান পরিকল্পনা

বিয়ন্ড ব্যারেলস: ভারত ও রাশিয়া নতুন জ্বালানি-প্লেবুক তৈরি করছে

জ্বালানি খাতে দুই দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু বদলে যাচ্ছে। পরিষ্কার জ্বালানির বাড়তি চাহিদা ও নিরাপদ সাপ্লাই চেইন গঠনের প্রয়োজনীয়তা ভারত–রাশিয়া সম্পর্ককে নতুন এক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, শিল্পায়নের স্থানীয়ীকরণ, গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সাপ্লাই চেইন এবং আধুনিক যোগাযোগ করিডর।

ভারতের জ্বালানির চাহিদা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দশকে বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদা বৃদ্ধির একটি বড় অংশই আসবে ভারত থেকে। এরই মধ্যে ভারতের বিদ্যুৎ খাতেও বড় পরিবর্তন ঘটেছে, যার কেন্দ্রবিন্দু সৌর ও বায়ুশক্তিভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি।

২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ভারতের মোট স্থাপিত বিদ্যুৎ-উৎপাদন সক্ষমতা ৫০০ গিগাওয়াট অতিক্রম করেছে, যার ৫১ শতাংশের বেশি এসেছে অ-জীবাশ্ম উৎস থেকে। এই পরিবর্তন বিদ্যুৎ উৎপাদনেও স্পষ্ট। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটি ২৩৬ টেরাওয়াট-ঘণ্টা পরিষ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন রেকর্ড গড়েছে—মূলত সৌর, বায়ু ও ক্রমবর্ধমান জলবিদ্যুৎ ও পারমাণবিক উৎপাদনের কারণে।

তবুও নবায়নযোগ্য জ্বালানি একা ভারতের বেসলোড ও শিল্পখাতের জ্বালানি প্রয়োজন পূরণ করতে পারে না। তাই পারমাণবিক শক্তি অপরিহার্য—যা ২০৪৭ সালের মধ্যে ১০০ গিগাওয়াট ক্ষমতায় উন্নীত করার ভারতের লক্ষ্যেও প্রতিফলিত। এই প্রেক্ষাপটে ভারত–রাশিয়া বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা আবারও কৌশলগত গুরুত্ব পাচ্ছে।

ভারতের জন্য এ সহযোগিতা মানে জ্বালানি নিরাপত্তা, স্থিতিশীল নিম্ন-কার্বন সরবরাহ এবং দ্রুত ডিকার্বনাইজেশন। একই সঙ্গে এটি ভারতের খনিজ-সার্বভৌমত্ব অর্জনের পথও পাকা করছে, বিশেষত ইভি, ব্যাটারি ও পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি উৎপাদনে প্রয়োজনীয় রেয়ার আর্থ উপাদানে চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর ক্ষেত্রে। সম্প্রতি ৮১৫.৭ মিলিয়ন ডলারের রেয়ার আর্থ স্থায়ী চুম্বক উৎপাদন কর্মসূচি অনুমোদন এই লক্ষ্যকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।

শিল্প–যোগাযোগ অক্ষ
পরিচ্ছন্ন জ্বালানিভিত্তিক প্রযুক্তি—যেমন বায়ুচালিত টারবাইন, ইভি, ব্যাটারি স্টোরেজ, গ্রিড অবকাঠামো, তথা পারমাণবিক প্ল্যান্টের উপাদান—সবকিছুতেই লাগে বিপুল পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। বিশ্বের প্রায় ৬ শতাংশ রেয়ার আর্থ মজুদ নিয়ে ভারত এই খাতে সম্ভাবনাময় সরবরাহকারী হতে পারে।

২০২৫ সালের আগস্টে ভারত ও রাশিয়া রেয়ার আর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উত্তোলন, শিল্পায়ন ও খনিশিল্প অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদারের জন্য আন্তঃসরকার কমিশনের আওতায় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এতে রয়েছে প্রযুক্তি হস্তান্তর, আধুনিক খনি প্রযুক্তি এবং লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট ও রেয়ার আর্থ উপাদানসহ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও হাইটেক শিল্পে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজে সহযোগিতা।

পারমাণবিক খাতে, ডিসেম্বরের সম্মেলনে স্মল মডুলার রিঅ্যাক্টর (SMR) স্থাপন ও ভারতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উপাদানের স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই স্থানীয়ীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু রিঅ্যাক্টর নির্মাণ নয়—বরং ভারতের ভেতরেই সম্পূর্ণ পারমাণবিক শিল্প সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। এতে বিদেশ থেকে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য আরও শক্ত হবে।

পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে টিকে থাকতে সক্রিয় যোগাযোগ করিডরও জরুরি। দ্রুততর পরিবহনপথ ছাড়া ভারতের পারমাণবিক ও খনিজ আকাঙ্ক্ষা সাপ্লাই চেইনে বাধার মুখে পড়বে। পূর্ব মরিটাইম করিডর চালু হওয়া এবং ইন্টারন্যাশনাল নর্থ–সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরে অগ্রগতি—রাশিয়া, ভারত ও গ্লোবাল সাউথ–এর অংশীদারদের মধ্যে উপকরণ, প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ পরিবহনে কার্যকর পথ তৈরি করছে।

এই লজিস্টিক অবকাঠামো রিঅ্যাক্টর উপাদান, রেয়ার আর্থ খনিজ ও নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিপণ্য পরিবহনকে নিরবচ্ছিন্ন ও স্বল্পব্যয়ী করে তুলছে। ফলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো একীভূত, শক্তিশালী মূল্যশৃঙ্খলায় রূপ পাচ্ছে।

রাশিয়ার জন্যও এ সহযোগিতা কৌশলগত লাভ আনছে। বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা ও বাজার অস্থিরতার মধ্যে বেসামরিক প্রযুক্তি রপ্তানি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল আয় দেয়। পারমাণবিক প্ল্যান্ট নির্মাণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, খনিজ বিনিয়োগ—এসব বহু দশকের প্রতিশ্রুতি, স্বল্পমেয়াদি পণ্যবাণিজ্য নয়।

এ ছাড়া, ভারতকে কেন্দ্র করে রাশিয়া গ্লোবাল সাউথে নিজের উপস্থিতি বাড়াতে পারছে। বাংলাদেশের রূপপুর প্রকল্পে রুশ প্রযুক্তির সঙ্গে ভারতীয় সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় এমন একটি ‘ত্রিপক্ষীয় মডেল’ তৈরি করেছে, যা আফ্রিকায় সম্প্রসারণের কথাও দুই দেশ ভাবছে।

সবশেষে, ভারতের জ্বালানি রূপান্তর ও শিল্পায়নের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত হয়ে রাশিয়া এশিয়ায় এক কৌশলগত মিত্রকেই আরও দৃঢ় করছে।

বহুমেরু পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবস্থার পথে
এই পুরো পরিকল্পনার মূল চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন। খনিজ উত্তোলন পরিবেশবান্ধবভাবে করতে কঠোর নিয়মকানুন প্রয়োজন। রেয়ার আর্থ প্রক্রিয়াজাতকরণেও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পদক্ষেপ থাকে, যা দায়িত্বশীলভাবে পরিচালনা জরুরি। একইভাবে পারমাণবিক উপাদান স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে কঠোর মাননিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো অপরিহার্য।

রাশিয়া আন্তর্জাতিক জটিল পরিবেশে থাকলেও ভারত সবসময় স্বচ্ছতা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিধান এবং বৈশ্বিক অ-প্রসারণ নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) সঙ্গে চুক্তির আওতায় ভারতের বেসামরিক পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীন—যা রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে SMR ও স্থানীয় উৎপাদনে সহযোগিতা ভারতের দায়িত্বশীল পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ভূমিকা আরও শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করছে।

পাশাপাশি ভারত এখন খনিজ-সার্বভৌমত্বের দিকে এগোচ্ছে—যা শুধু জ্বালানি নয়, বরং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল নিশ্চিত করার বৃহত্তর কৌশল। ২০২৫ সালের নভেম্বরে সরকার ৮১৫.৭ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অনুমোদন করে দেশে ৬০০০ মেট্রিক টন বার্ষিক সক্ষমতার রেয়ার আর্থ স্থায়ী চুম্বক কারখানা স্থাপনে। ইভি মোটর, বায়ুচালিত টারবাইন ও উন্নত প্রযুক্তিতে এসব চুম্বক অপরিহার্য। পদক্ষেপটি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করছে।

পারমাণবিক সহযোগিতা ও খনিজ উৎপাদন—উভয়কে একত্রিত করে ভারত রাশিয়ার বৃহত্তর কৌশলিক উদ্যোগের স্থিতিশীল অংশীদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছে, একই সঙ্গে নিজের জ্বালানি ও কৌশলগত স্বয়ংসম্পূর্ণতাও সুরক্ষিত করছে।

শেষ ফলাফল স্পষ্ট—ভারত ও রাশিয়া এমন এক পরিচ্ছন্ন জ্বালানিভিত্তিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছে, যা দুই দেশের শিল্প-সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করছে। তারা গ্লোবাল সাউথের জন্য টেকসই ও স্বাধীন সাপ্লাই চেইন তৈরি করছে। এই সবুজ পথ এখন তাদের কৌশলগত অংশীদারত্বের মূল দিক হয়ে উঠছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নেটফ্লিক্সের নতুন অ্যাকশন সিরিজ ‘টাইগো’-তে প্রধান চরিত্রে লিসা

বিয়ন্ড ব্যারেলস: ভারত ও রাশিয়া নতুন জ্বালানি-প্লেবুক তৈরি করছে

০৩:২৪:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

জ্বালানি খাতে দুই দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু বদলে যাচ্ছে। পরিষ্কার জ্বালানির বাড়তি চাহিদা ও নিরাপদ সাপ্লাই চেইন গঠনের প্রয়োজনীয়তা ভারত–রাশিয়া সম্পর্ককে নতুন এক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, শিল্পায়নের স্থানীয়ীকরণ, গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সাপ্লাই চেইন এবং আধুনিক যোগাযোগ করিডর।

ভারতের জ্বালানির চাহিদা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দশকে বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদা বৃদ্ধির একটি বড় অংশই আসবে ভারত থেকে। এরই মধ্যে ভারতের বিদ্যুৎ খাতেও বড় পরিবর্তন ঘটেছে, যার কেন্দ্রবিন্দু সৌর ও বায়ুশক্তিভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি।

২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ভারতের মোট স্থাপিত বিদ্যুৎ-উৎপাদন সক্ষমতা ৫০০ গিগাওয়াট অতিক্রম করেছে, যার ৫১ শতাংশের বেশি এসেছে অ-জীবাশ্ম উৎস থেকে। এই পরিবর্তন বিদ্যুৎ উৎপাদনেও স্পষ্ট। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটি ২৩৬ টেরাওয়াট-ঘণ্টা পরিষ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন রেকর্ড গড়েছে—মূলত সৌর, বায়ু ও ক্রমবর্ধমান জলবিদ্যুৎ ও পারমাণবিক উৎপাদনের কারণে।

তবুও নবায়নযোগ্য জ্বালানি একা ভারতের বেসলোড ও শিল্পখাতের জ্বালানি প্রয়োজন পূরণ করতে পারে না। তাই পারমাণবিক শক্তি অপরিহার্য—যা ২০৪৭ সালের মধ্যে ১০০ গিগাওয়াট ক্ষমতায় উন্নীত করার ভারতের লক্ষ্যেও প্রতিফলিত। এই প্রেক্ষাপটে ভারত–রাশিয়া বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা আবারও কৌশলগত গুরুত্ব পাচ্ছে।

ভারতের জন্য এ সহযোগিতা মানে জ্বালানি নিরাপত্তা, স্থিতিশীল নিম্ন-কার্বন সরবরাহ এবং দ্রুত ডিকার্বনাইজেশন। একই সঙ্গে এটি ভারতের খনিজ-সার্বভৌমত্ব অর্জনের পথও পাকা করছে, বিশেষত ইভি, ব্যাটারি ও পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি উৎপাদনে প্রয়োজনীয় রেয়ার আর্থ উপাদানে চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর ক্ষেত্রে। সম্প্রতি ৮১৫.৭ মিলিয়ন ডলারের রেয়ার আর্থ স্থায়ী চুম্বক উৎপাদন কর্মসূচি অনুমোদন এই লক্ষ্যকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।

শিল্প–যোগাযোগ অক্ষ
পরিচ্ছন্ন জ্বালানিভিত্তিক প্রযুক্তি—যেমন বায়ুচালিত টারবাইন, ইভি, ব্যাটারি স্টোরেজ, গ্রিড অবকাঠামো, তথা পারমাণবিক প্ল্যান্টের উপাদান—সবকিছুতেই লাগে বিপুল পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। বিশ্বের প্রায় ৬ শতাংশ রেয়ার আর্থ মজুদ নিয়ে ভারত এই খাতে সম্ভাবনাময় সরবরাহকারী হতে পারে।

২০২৫ সালের আগস্টে ভারত ও রাশিয়া রেয়ার আর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উত্তোলন, শিল্পায়ন ও খনিশিল্প অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদারের জন্য আন্তঃসরকার কমিশনের আওতায় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এতে রয়েছে প্রযুক্তি হস্তান্তর, আধুনিক খনি প্রযুক্তি এবং লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট ও রেয়ার আর্থ উপাদানসহ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও হাইটেক শিল্পে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজে সহযোগিতা।

পারমাণবিক খাতে, ডিসেম্বরের সম্মেলনে স্মল মডুলার রিঅ্যাক্টর (SMR) স্থাপন ও ভারতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উপাদানের স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই স্থানীয়ীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু রিঅ্যাক্টর নির্মাণ নয়—বরং ভারতের ভেতরেই সম্পূর্ণ পারমাণবিক শিল্প সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। এতে বিদেশ থেকে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য আরও শক্ত হবে।

পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে টিকে থাকতে সক্রিয় যোগাযোগ করিডরও জরুরি। দ্রুততর পরিবহনপথ ছাড়া ভারতের পারমাণবিক ও খনিজ আকাঙ্ক্ষা সাপ্লাই চেইনে বাধার মুখে পড়বে। পূর্ব মরিটাইম করিডর চালু হওয়া এবং ইন্টারন্যাশনাল নর্থ–সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরে অগ্রগতি—রাশিয়া, ভারত ও গ্লোবাল সাউথ–এর অংশীদারদের মধ্যে উপকরণ, প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ পরিবহনে কার্যকর পথ তৈরি করছে।

এই লজিস্টিক অবকাঠামো রিঅ্যাক্টর উপাদান, রেয়ার আর্থ খনিজ ও নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিপণ্য পরিবহনকে নিরবচ্ছিন্ন ও স্বল্পব্যয়ী করে তুলছে। ফলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো একীভূত, শক্তিশালী মূল্যশৃঙ্খলায় রূপ পাচ্ছে।

রাশিয়ার জন্যও এ সহযোগিতা কৌশলগত লাভ আনছে। বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা ও বাজার অস্থিরতার মধ্যে বেসামরিক প্রযুক্তি রপ্তানি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল আয় দেয়। পারমাণবিক প্ল্যান্ট নির্মাণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, খনিজ বিনিয়োগ—এসব বহু দশকের প্রতিশ্রুতি, স্বল্পমেয়াদি পণ্যবাণিজ্য নয়।

এ ছাড়া, ভারতকে কেন্দ্র করে রাশিয়া গ্লোবাল সাউথে নিজের উপস্থিতি বাড়াতে পারছে। বাংলাদেশের রূপপুর প্রকল্পে রুশ প্রযুক্তির সঙ্গে ভারতীয় সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় এমন একটি ‘ত্রিপক্ষীয় মডেল’ তৈরি করেছে, যা আফ্রিকায় সম্প্রসারণের কথাও দুই দেশ ভাবছে।

সবশেষে, ভারতের জ্বালানি রূপান্তর ও শিল্পায়নের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত হয়ে রাশিয়া এশিয়ায় এক কৌশলগত মিত্রকেই আরও দৃঢ় করছে।

বহুমেরু পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবস্থার পথে
এই পুরো পরিকল্পনার মূল চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন। খনিজ উত্তোলন পরিবেশবান্ধবভাবে করতে কঠোর নিয়মকানুন প্রয়োজন। রেয়ার আর্থ প্রক্রিয়াজাতকরণেও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পদক্ষেপ থাকে, যা দায়িত্বশীলভাবে পরিচালনা জরুরি। একইভাবে পারমাণবিক উপাদান স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে কঠোর মাননিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো অপরিহার্য।

রাশিয়া আন্তর্জাতিক জটিল পরিবেশে থাকলেও ভারত সবসময় স্বচ্ছতা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিধান এবং বৈশ্বিক অ-প্রসারণ নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) সঙ্গে চুক্তির আওতায় ভারতের বেসামরিক পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীন—যা রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে SMR ও স্থানীয় উৎপাদনে সহযোগিতা ভারতের দায়িত্বশীল পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ভূমিকা আরও শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করছে।

পাশাপাশি ভারত এখন খনিজ-সার্বভৌমত্বের দিকে এগোচ্ছে—যা শুধু জ্বালানি নয়, বরং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল নিশ্চিত করার বৃহত্তর কৌশল। ২০২৫ সালের নভেম্বরে সরকার ৮১৫.৭ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অনুমোদন করে দেশে ৬০০০ মেট্রিক টন বার্ষিক সক্ষমতার রেয়ার আর্থ স্থায়ী চুম্বক কারখানা স্থাপনে। ইভি মোটর, বায়ুচালিত টারবাইন ও উন্নত প্রযুক্তিতে এসব চুম্বক অপরিহার্য। পদক্ষেপটি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করছে।

পারমাণবিক সহযোগিতা ও খনিজ উৎপাদন—উভয়কে একত্রিত করে ভারত রাশিয়ার বৃহত্তর কৌশলিক উদ্যোগের স্থিতিশীল অংশীদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছে, একই সঙ্গে নিজের জ্বালানি ও কৌশলগত স্বয়ংসম্পূর্ণতাও সুরক্ষিত করছে।

শেষ ফলাফল স্পষ্ট—ভারত ও রাশিয়া এমন এক পরিচ্ছন্ন জ্বালানিভিত্তিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছে, যা দুই দেশের শিল্প-সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করছে। তারা গ্লোবাল সাউথের জন্য টেকসই ও স্বাধীন সাপ্লাই চেইন তৈরি করছে। এই সবুজ পথ এখন তাদের কৌশলগত অংশীদারত্বের মূল দিক হয়ে উঠছে।