ইউরোপের সতর্ক বার্তা
ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সতর্ক করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ত্বরিত শান্তি পরিকল্পনায় যেন তিনি হুড়োহুড়ি করে এগিয়ে না যান। তাদের আশঙ্কা, দ্রুত সমঝোতার চাপে পড়ে ইউক্রেন যদি ভূখণ্ড ছাড়তে রাজি হয়, তবে তা ভবিষ্যতে রাশিয়া ও অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রকে আরও আগ্রাসী পদক্ষেপের সাহস দিতে পারে। একই সঙ্গে কিছু রাজধানী মনে করছে, ওয়াশিংটনের সময়সূচি মাঠের বাস্তবতার চেয়ে মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্যালেন্ডার দ্বারা বেশি প্রভাবিত হতে পারে।
কয়েকটি বড় ইউরোপীয় রাষ্ট্রের নেতারা নেপথ্যে কিয়েভকে বলছেন, যেকোনো আলোচনায় যাওয়ার আগে শক্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিত করা জরুরি। তাদের যুক্তি, শুধু গুলিবিনিময় বন্ধ হলেই চলবে না; ভবিষ্যতে রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা যেন আবার দ্রুত জড়ো হয়ে আক্রমণ চালাতে না পারে, সেই প্রাতিষ্ঠানিক বন্দোবস্তও চাই। এ জন্যই ইউরোপ নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্প, গোলাবারুদ মজুত এবং যৌথ বাজেট পুনর্মূল্যায়ন করছে।
রাশিয়া প্রশ্নে ইউরোপের ভেতরের দ্বন্দ্ব
ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী সম্ভাব্য অচলাবস্থা বা আংশিক শান্তি নিয়ে ইউরোপের ভেতরে বিভাজনও স্পষ্ট হচ্ছে। সামনের সারির দেশগুলো কঠোর শর্তে নিষেধাজ্ঞা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলছে; অন্যদিকে কিছু রাষ্ট্র পরোক্ষে ইঙ্গিত দিচ্ছে—যদি যুদ্ধ থামাতে হয়, তবে কিছু নমনীয়তা মেনে নিতেও তারা প্রস্তুত। এ অবস্থায় আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, কিয়েভ যদি মিত্রদের চাপ ও যুদ্ধক্ষয়িষ্ণু বাস্তবতার মধ্যে নিজেকে কোণঠাসা বোধ করে, তবে ইউক্রেনের ভেতরেই জনসমর্থন কমতে পারে।
তবু ইউরোপীয় নেতারা জানেন, কিয়েভের আসল ভরসা তাদের টানা অর্থ ও অস্ত্র সহায়তায়। তাই ২০২৬ সালের পর পর্যন্ত সহায়তা টেকসই করতে প্রতিরক্ষা বাজেট, শিল্পায়ন ও যৌথ তহবিল নিয়ে নতুন করে হিসাব কষা হচ্ছে। ইউক্রেনের জন্য বার্তাটা দুই দিক থেকে—একদিকে, তাকে এমন কোনো চুক্তিতে ঢুকতে হবে না যা তাকে দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিতে ফেলে; অন্যদিকে, জনগণকে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা ও সীমিত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের বাস্তবতার জন্যও প্রস্তুত করতে হবে। এই দুয়ের টানাপোড়েনই এখন ইউরোপের বৃহত্তম স্থলযুদ্ধের পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















