পৃথিবীর কক্ষপথে দ্রুত বাড়তে থাকা স্যাটেলাইটের ভিড় এবার হুমকিতে ফেলছে মহাকাশ দূরবীক্ষণ। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী বছরগুলোতে আকাশ এতটাই ভিড়ে ঠাসা হয়ে পড়বে যে মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো দূরবীক্ষণ যন্ত্রও স্যাটেলাইটের আলো-দাগ থেকে রক্ষা পাবে না।
স্যাটেলাইটের দৌড়—গবেষণার সামনে নতুন সংকট
মহাকাশে টেলিস্কোপ পাঠানোর বড় কারণ হলো পরিষ্কার “ভিউ” পাওয়া। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অস্থিরতা না থাকায় মহাকাশে তারার আলো স্থির দেখা যায়। কিন্তু এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্যাটেলাইটের সংখ্যা।
২০১৮ সালে যেখানে মোট স্যাটেলাইট ছিল প্রায় ২,০০০, এখন শুধু স্পেসএক্সের স্টারলিংক নেটওয়ার্কেই রয়েছে ৯,০০০–এর বেশি স্যাটেলাইট। কোম্পানিটি ভবিষ্যতে ৪২,০০০ স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠানোর অনুমতি চেয়েছে। পাশাপাশি OneWeb, Amazon, Qianfan, Guowang—সবাই তাদের নিজস্ব “মেগা কনস্টেলেশন” তৈরি করছে। নাসার অনুমান—২০৪০ সালের মধ্যে নিম্ন-কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা পৌঁছাতে পারে ৫ লাখে।
হুমকির মুখে হাবল, SPHEREx, ARRHIKHS ও Xuntian
নাসার গবেষক আলেহান্দ্রো বোরলাফের টিম বিভিন্ন স্যাটেলাইট প্রকল্পের ফাইলিং বিশ্লেষণ করে চারটি গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ দূরবীক্ষণের ওপর এর প্রভাব মেপেছে।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও SPHEREx ইতোমধ্যে কক্ষপথে রয়েছে। আগামী বছর চীনের Xuntian এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপের ARRHIKHS মহাকাশে যাবে।
সিমুলেশনে দেখা গেছে—
• হাবলের ৩৩% ছবিতে স্যাটেলাইটের আলোর দাগ পড়বে।
• SPHEREx-এর ৯৬% ছবিতে গড়ে ৫–৬টি দাগ থাকবে।
• ARRAKIHS-এর ছবিতে দাগের সংখ্যা গড়ে ৬৯টি।
• Xuntian-এর প্রতিটি ছবিতে থাকতে পারে গড়ে ৯২টি স্যাটেলাইট দাগ।
অর্থাৎ ভবিষ্যতের আকাশ হবে এতটাই ব্যস্ত যে গবেষণা ছবিগুলো পরিষ্কার রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

প্রতিকার কতটা সম্ভব?
স্পেসএক্স তাদের স্যাটেলাইট কম প্রতিফলক করতে চেষ্টা করলেও সফলতা খুব সীমিত। উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে স্যাটেলাইট বড় হচ্ছে—ফলে উজ্জ্বলতাও বাড়ছে।
অন্যদিকে খণ্ড খণ্ড সমাধান হিসেবে—
• কক্ষপথতথ্য পেলে গবেষকেরা সময় মিলিয়ে ছবি তুলতে পারেন
• দূরে পাঠানো টেলিস্কোপ যেমন জেমস ওয়েব—এদের ওপর স্যাটেলাইটের প্রভাব পড়ে না
কিন্তু সবার পক্ষে এত দূরে পাঠানো সম্ভব নয়। কাছাকাছি কক্ষপথে থাকার সুবিধা রয়েছে—কম ব্যয়, দ্রুত ডেটা ডাউনলোড এবং পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সুরক্ষা।
আন্তর্জাতিক সমন্বয়ই শেষ ভরসা
বোরলাফ মনে করেন, কূটনীতি ও নিয়ম ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। ওজোন রক্ষায় মন্ট্রিল প্রোটোকলের মতো উদ্যোগ প্রয়োজন। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে International Astronomical Union-এর “Dark and Quiet Sky” সুরক্ষা কেন্দ্র, যাদের কাজ স্যাটেলাইট কোম্পানি ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে সমন্বয় আনা।
কিন্তু বাণিজ্যিক মহাকাশ দৌড় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা সমাধানকে আরও কঠিন করে তুলছে।
#মহাকাশ #স্যাটেলাইট #হাবলটেলিস্কোপ #SPHEREx #ARRAKIHS #Xuntian #SpaceX #Starlink #জ্যোতির্বিজ্ঞান #মহাকাশগবেষণা #DarkSky #SpaceRace #NASA #ESA #ChinaSpace #ScienceNews #SarkahonReport #BanglaNews
Sarakhon Report 



















