দ্রুত বদলে যাওয়া প্রযুক্তি, ভূরাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী প্রবাহ—সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষার কাঠামো পাল্টে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাকেও নিজেকে নতুনভাবে সাজাতে হবে—এমনই মত ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-চ্যান্সেলর ডিপ সাইনি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিদ মনে করেন, ভবিষ্যতের নেতৃত্ব নির্ভর করবে অভিযোজন ক্ষমতা, সহমর্মিতা এবং সামাজিক মূল্য সৃষ্টির ওপর।
বিদেশে পড়াশোনায় বাধা বাড়লেও সুযোগ থাকবে নতুনভাবে
ডিপ সাইনি বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়—বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের গতিশীলতার ওপর নতুন চাপ তৈরি হয়েছে। তিনি আশা করেন, বর্তমান বাধাগুলো স্থায়ী হবে না, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে যদি পরিবর্তন স্থায়ীভাবেই আসে।
ম্যাকগিল বর্তমানে নিয়ন্ত্রিত ভর্তি নীতি অনুসরণ করছে এবং উচ্চ–সাফল্যসম্পন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করছে, বিশেষত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য।
কীভাবে টিকে থাকবে আধুনিক বিজনেস স্কুল
১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ম্যাকগিলের ম্যানেজমেন্ট স্কুল বিশ্বে অন্যতম পুরোনো। ডিপ সাইনি বলেন, সময় ও সমাজের বাস্তব চাহিদার সঙ্গে মিল রেখেই টিকে থাকতে হয়।
পুরোনো ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ মডেল আর চলে না। আজকের নেতা মানে—সম্মতি তৈরি করা, বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক শক্তিতে দলকে অনুপ্রাণিত করা এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগোনো।
নেতা মানেই সেবক–নেতা: সামাজিক মূল্যই মূল
সাইনি বলেন, আজ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু শেয়ারহোল্ডার নয়—স্টেকহোল্ডার ভ্যালু তৈরি করতে চায়।
“লাভ এবং মূল্য এক জিনিস নয়। সমাজের জন্য মূল্য তৈরি করতে পারলে লাভ নিজে থেকেই আসে।”
ম্যাকগিলে তাঁরা একটি বিশেষ কোর্স চালান—“হ্যাপিনেস মিনস বিজনেস”—যেখানে শেখানো হয় নেতৃত্বে মানসিক অবস্থার প্রভাব এবং সহমর্মিতার গুরুত্ব।
এই যুগের ম্যানেজারকে হতে হবে উদ্ভাবনী, সীমার বাইরে চিন্তাশীল
সাইনি মনে করেন, অনেক ম্যানেজার শুধুমাত্র মডেল মুখস্থ করে রোবটের মতো কাজ করেন। এর পরিবর্তে প্রয়োজন সৃজনশীল চিন্তা, উদ্ভাবন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে শেখা।
ক্লাসরুমের পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতা—যেমন সফল সিইওদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা—ভবিষ্যতের ম্যানেজার গড়ে তোলে।
এআই নতুন যুগের টুল—মানুষকে আরও সৃজনশীল করে তুলবে
ডিপ সাইনি এআই–কে তুলনা করেন পারমাণবিক শক্তির সঙ্গে—“এটি পৃথিবী আলোকিত করতে পারে, আবার ধ্বংসও করতে পারে।”
তবে তিনি আশাবাদী—এআই মানুষের মস্তিষ্ককে সাধারণ কাজ থেকে মুক্ত করবে, বড় চিন্তা ও সৃজনশীলতায় আরও মনোযোগী হতে দেবে।
ভবিষ্যৎ শিক্ষা: ম্যানেজার নয়, নেতা তৈরির সময়
তাঁর মতে, ভবিষ্যতের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা আরও বেশি গুরুত্ব দেবে নেতৃত্ব, সহানুভূতি, সেবা, সৃজনশীলতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতাকে।
“ম্যানেজার সবসময় প্রয়োজন, কিন্তু আমাদের আরও বেশি নেতা দরকার—যারা মূল্য তৈরি করবে শুধু লাভ নয়, সমাজের জন্যও।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















