দাখলা উপকূলে দ্রুত গড়ে উঠছে মরক্কোর নতুন দাখলা অ্যাটলান্টিক বন্দর—যা দেশটির দক্ষিণাঞ্চল, সাহেল এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য গেমচেঞ্জার হতে চলেছে। ১.৬ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পটি ২০৩০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হলেও এর লক্ষ্য আরও সুদূরপ্রসারী—আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি, শিল্পোন্নয়ন এবং সবুজ জ্বালানির বিশ্ববাজারে মরক্কোর অবস্থান শক্তিশালী করা।
দাখলা: আফ্রিকা-সাহেলের বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ার লক্ষ্য
কাসাব্লাঙ্কা থেকে ১,৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে দাখলার নির্জন উপকূলে চলছে তীব্র নির্মাণকাজ।
বন্দরটির পরিচালক নিসরিন ইয়াউজি বলেন, দাখলা বন্দর হবে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন মডেলের ‘মূল ভিত্তি’।
তিনি জানান, এই বন্দর আফ্রিকার বাজারের সঙ্গে সংযোগ বাড়াবে এবং সাহেল অঞ্চলের দেশগুলো—মালি, নাইজার ও বুর্কিনা ফাসোর জন্য নতুন বৈদেশিক বাণিজ্য পথ খুলে দেবে। আমেরিকাসহ বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করতেও এটি এক গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক করিডর হিসেবে কাজ করবে।
ট্যাঙ্গার মেডের সফলতার ধারাবাহিকতায় মরক্কো এখন দক্ষিণাঞ্চলের লজিস্টিক ভারসাম্য আনতে দাখলাকে একটি বৃহৎ বাণিজ্য হাবে রূপ দিতে চায়।
গভীর সমুদ্রবন্দর ও কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা
দ্বীপে নির্মিত এই গভীর সমুদ্রবন্দরটি ১.৩ কিলোমিটার সেতুর মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় কনটেইনার জাহাজ, মেরামত সুবিধা ও মাছ ধরার নৌকা পরিচালনা—সবই থাকবে এই বন্দরে।
নির্মাণ পর্যায়ে এখন প্রায় ১,৮০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রকল্প সম্পন্ন হলে নতুন শিল্প-কারখানায় আরও ২০,০০০ চাকরি সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সবুজ হাইড্রোজেন রপ্তানির গেটওয়ে
মরক্কো সবুজ জ্বালানির বৈশ্বিক কেন্দ্র হতে চায়, আর দাখলা বন্দর সেই স্বপ্নের প্রধান ভিত্তি।
সূর্য ও বাতাস থেকে শক্তি উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ, বিশাল খালি জমি এবং ইউরোপের নিকটবর্তীতা—সব মিলিয়ে দাখলা অঞ্চলে ৩২ বিলিয়ন ডলারের পাঁচটি বড় সবুজ হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, জার্মানি, আবুধাবি, চীন, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা এই প্রকল্পে যুক্ত। সৌদি কোম্পানি ACWA Power সবুজ স্টিল উৎপাদনের কর্মসূচিও হাতে নিচ্ছে।
প্রথম ধাপের নির্মাণ সরকারি তহবিলে চলছে। দ্বিতীয় ধাপে আন্তর্জাতিক কোম্পানির মাধ্যমে টার্মিনাল ও যান্ত্রিক সুবিধা পরিচালনার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। ২০২৭ সালে এ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দাখলা বন্দর দিয়ে পূর্ণমাত্রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হবে—যে বছর মরক্কো স্পেন ও পর্তুগালের সঙ্গে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে।
দাখলা যে অঞ্চলে অবস্থিত, সেই পশ্চিম সাহারা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্ক রয়েছে। তবে বন্দর পরিচালক ইয়াউজি বলেন, এসব নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। ইতিমধ্যে বহু আন্তর্জাতিক কোম্পানি এখানে কাজ করছে এবং আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে বলে তিনি আশা করেন।
“দাখলা অ্যাটলান্টিক বন্দর হলো আফ্রিকার জন্য একটি প্রবেশদ্বার,”—বলেছেন ইয়াউজি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

























