০৭:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারত রাজি না হলে বাংলাদেশের কিছুই করার নেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সিআইডির ট্রেনিং সেন্টার থেকে এসআইয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার রাজধানীর শেয়ারবাজারে মিশ্র প্রবণতা: ডিএসইর সূচক কমলেও সিএসইতে বৃদ্ধি আগামী ১২ ডিসেম্বর দেওয়ানবাগ শরীফে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন ‘পশুপাখিকেও এমন খাবার দেয় না’- যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিউ স্টার্ট চুক্তি নিয়ে রাশিয়া–যুক্তরাষ্ট্রে সময় সংকট চিনের রাডার লক-এ মার্কিন সমর্থন জাপানের ই-সিএনওয়াই চীনের সামাজিক সুরক্ষা ও ভোগব্যয় কাঠামোকে বদলে দিতে পারে ইউরোপীয় জোটের বিরুদ্ধে ইন্টেল, জারি রইল অ্যান্টিট্রাস্ট জরিমানা ফান্ডিং সংকটে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিভাগ ‘সারভাইভাল মোডে’

ময়মনসিংহের ডাক্তারের সঙ্গে স্বাস্থ্যের ডিজির কী হয়েছিলো

বাংলাদেশের ময়মনসিংহের একটি হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক বাহাসের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হবার পর ওই চিকিৎসককে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ওই চিকিৎসক বিবিসি বাংলার কাছে অভিযোগ করেছেন যে, মহাপরিচালক ‘তাচ্ছিল্যপূর্ণ’ দৃষ্টিতে পরপর তিনবার তার নাম জানতে চাওয়ায় তিনি অসম্মানিত বোধ করে ওমন ‘রিয়েকশন’ দেখিয়েছেন।

একই সঙ্গে তিনি স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, নিজেদের বঞ্চিত হওয়া ও চিকিৎসকদের হয়রানির নানা অভিযোগ তুলেছেন।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য মহাপরিচালকের সঙ্গে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে কয়েক দফা চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।

তার নাম্বারে দেয়া ফোন রিসিভ করা তার ব্যক্তিগত সহকারীকে কয়েক দফা অনুরোধ করে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ওদিকে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার সময় ওই চিকিৎসকের দৃঢ়তার প্রশংসা করছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে তার কথা বলার ধরণ শোভনীয় ছিলো না।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগেরই সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “চিকিৎসক ও ডিজির বাহাসের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপনা সংকটের করুন অবস্থার প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে সরকারি খাতের চিকিৎসকদের মধ্যে যে বঞ্চনা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ আছে এটি তারই বহিঃপ্রকাশ”।

সন্ধ্যার পরে অব্যাহতি পাওয়া ওই চিকিৎসক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তিনি ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন।

ঘটনাটি কী ঘটেছে, চিকিৎসক যা বলছেন

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা সরকারি চাকরি বিধিমালার পরিপন্থী উল্লেখ করে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ধনদেব বর্মণকে জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় শনিবার। ওই দিনই বিকেলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে।

তার কয়েক ঘণ্টা আগে ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে যাওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু জাফরের সঙ্গে তার বাহাসের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

মি. বর্মণ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের ইনচার্জ হিসেবে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি চলতি বছরের জুলাই মাসে আবাসিক সার্জন থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। আর এক বছর পরেই তার অবসরে প্রস্তুতিকালীণ ছুটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় মহাপরিচালক (ডিজি) মি. জাফর আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে যান। সেখানে চিকিৎসকের ব্যবহৃত টেবিল দেখে তিনি জানতে চান যে ওটিতে টেবিল কেন।

ক্যাজুয়ালটির ইনচার্জ মি. বর্মণ তাকে জানান যে টেবিল ডাক্তারদের লেখার জন্য। এ নিয়ে বাহাসের সময় ডিজি নিজেই তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে উদ্দেশ্যে করে বলেন “অ্যাই ভিডিও করো”।

এক পর্যায়ে ডিজি মি. বর্মণকে উদ্দেশ্য করে বলেন ‘হু আর ইউ’। এ সময় মি. বর্মণ এর প্রতিবাদ করেন।

ডিজি তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, কথাবার্তা হুঁশ করে বলবেন।” তিনি আরও বলেন, “যারা ডিজির সঙ্গে এমন ব্যবহার করে তারা রোগীর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে”।

মি বর্মণ বলেন, “আমি রোগীর সঙ্গে অনেক ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু যারা দায়িত্বে আছে তাদের সঙ্গে আমার ব্যবহার ভালো না।”

আরও কথার এক পর্যায়ে ডিজি মি. বর্মণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ” ….কিন্তু আপনি তো ব্যবহার শিখেন নাই”। মি. বর্মণ পাল্টা বলেন, “ঢাকায় তিন দিনের প্রশিক্ষণ করলাম; আপনার দুদিন আসার কথা ছিল, একদিনও আসেননি।”

এমন তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে মি. বর্মণ বলেন, “আমাকে সাসপেন্ড করেন, নো প্রবলেম”।

পরে তাকে ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে শনিবার বিকেলেই কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়।

বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে প্রচুর ভিড় লেগে থাকে রোগীদের

মি. বর্মণ পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “চাকরির শেষ বয়সে এসে গেছি। আমার বন্ধুরা অধ্যাপক হয়ে গেছে, আর আমাকে লেকচারারই থাকতে হয়েছে”।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ধনদেব বর্মণ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকদের জন্য টেবিল চাকরি জীবনের শুরু থেকে দেখে এসেছি। তারপরেও স্বাস্থ্য বিভাগের অভিভাবক হিসেবে ডিজি পরামর্শ দিলে বা সমালোচনা করলে মেনে নিতাম। কিন্তু তিনি আমার নাম শুনেই তাচ্ছিল্যভরা দৃষ্টিতে তিনবার নাম জানতে চেয়েছেন”।

“চাকরির শেষ পর্যায়ে এসে যদি সম্মান না পাই তাহলে সেটা মেনে নেয়া কঠিন। অনেক সংকট সামাল দিয়েছি সহকর্মীদের নিয়ে। অনেক কঠিন পরিস্থিতি সামলেছি। কখনো কাজে ফাঁকি দেইনি। সেজন্যই আমার রিয়েকশনটা বেশি ছিলো। ওনি সুন্দরভাবে বললে হয়তো ফলো করতাম,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. বর্মণ।

তার অভিযোগ সরকারি চিকিৎসকরা কিভাবে কোন পরিস্থিতিতে কাজ করে সেটি কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেয় না।

“এখানে সব জায়গায় দুর্নীতি। প্রমোশন প্রশিক্ষণ সবকিছুর জন্য নেতাদের ধরতে চায়। অনেক চিকিৎসক এসব কারণে চাকরি ছেড়েছেন। ২০১৩ সালে এমএস শেষ করে কিছুদিন আগে সহকারী অধ্যাপক হয়েছি। এখন অবসরের কাছে,” ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন তিনি।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েক দফা যোগাযোগ করেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে কথা বলা যায়নি। কিংবা তার বা তার কার্যালয় থেকে শনিবারের ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে কোন বিবৃতিও আসেনি।

শনিবারই ওই ঘটনার শেষ পর্যায়ে ডিজিকে অন্যদের বলতে দেখা যায় যে ‘ আমি তাকে খারাপ কিছু বলিনি’। তখন মি. বর্মণ ‘সরি স্যার’ বললে ডিজি বলেন সরি বলতে হবে না। এ সময় ডিজির মন্তব্য ছিলো ‘হি ইজ টোটালি আনফিট ফর দিস হসপিটাল’।

‘এটিই স্বাস্থ্য খাতের চিত্র’

চিকিৎসক ধনদেব বর্মণ ছাড়াও ওই হাসপাতালের আরও একজন চিকিৎসক সহ সরকারি চাকরিরত কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে যে ধারণা পাওয়া গেছে তা হলো- প্রমোশন ও প্রশিক্ষণ নিয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা খুবই ক্ষুব্ধ।

তাদের অভিযোগ, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতেও চিকিৎসকদেরই কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের কাছে ধর্ণা দিতে হয় এবং অনেক সময় এসব সুযোগের বিনিময়ে অর্থও দিতে হয়। এছাড়া অনেক চিকিৎসক এক যুগেও একটি প্রমোশন পাননি এমনও ঘটনাও অনেক বলে দাবি করেছেন তারা।

যদিও এসব অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ।

মি. আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ” ধরাধরি করে টাকা পয়সা দিয়ে প্রমোশন নেয়ার অভিযোগ এখানে অনেক পুরনো। প্রভাবশালীদের টাকা পয়সা দিয়ে ট্রেনিং করতে যেতে হয়। লোক ধরতে হয় পরীক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য। অনেক যন্ত্রপাতি কেনা হয় কিন্তু সেগুলো ফেলে রাখা হয়”।

তার অভিযোগ, স্বাস্থ্য বিভাগ নিজেই সরকারি চিকিৎসকদের ওউন করে না বলে সবকিছু তাদের নিজেকেই করতে হয়। ফলে চিকিৎসকদের মধ্যে বঞ্চনা আছে, যা ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে।

তার মতে, ডিজির সাথে চিকিৎসকের বাহাসের ঘটনাটি আকস্মিক ঘটনা হলেও এটিই আসলে দেশের স্বাস্থ্য খাতের মূল চিত্র।

“ওনি একজন সিনিয়র চিকিৎসক। তাই হয়তো প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু এই খাতে অব্যবস্থাপনার সংকট ভয়াবহ। স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন তাদের তো কোনো প্রমোশনই হয় না,” বলছিলেন মি. আহমেদ।

অধিদপ্তরের সাবেক এই পরিচালকের মতে, মানবসম্পদ, ঔষধ ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যবস্থাপনার সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

BBC News বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারত রাজি না হলে বাংলাদেশের কিছুই করার নেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ময়মনসিংহের ডাক্তারের সঙ্গে স্বাস্থ্যের ডিজির কী হয়েছিলো

১২:১৩:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের ময়মনসিংহের একটি হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক বাহাসের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হবার পর ওই চিকিৎসককে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ওই চিকিৎসক বিবিসি বাংলার কাছে অভিযোগ করেছেন যে, মহাপরিচালক ‘তাচ্ছিল্যপূর্ণ’ দৃষ্টিতে পরপর তিনবার তার নাম জানতে চাওয়ায় তিনি অসম্মানিত বোধ করে ওমন ‘রিয়েকশন’ দেখিয়েছেন।

একই সঙ্গে তিনি স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, নিজেদের বঞ্চিত হওয়া ও চিকিৎসকদের হয়রানির নানা অভিযোগ তুলেছেন।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য মহাপরিচালকের সঙ্গে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে কয়েক দফা চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।

তার নাম্বারে দেয়া ফোন রিসিভ করা তার ব্যক্তিগত সহকারীকে কয়েক দফা অনুরোধ করে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ওদিকে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার সময় ওই চিকিৎসকের দৃঢ়তার প্রশংসা করছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে তার কথা বলার ধরণ শোভনীয় ছিলো না।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগেরই সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “চিকিৎসক ও ডিজির বাহাসের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপনা সংকটের করুন অবস্থার প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে সরকারি খাতের চিকিৎসকদের মধ্যে যে বঞ্চনা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ আছে এটি তারই বহিঃপ্রকাশ”।

সন্ধ্যার পরে অব্যাহতি পাওয়া ওই চিকিৎসক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তিনি ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন।

ঘটনাটি কী ঘটেছে, চিকিৎসক যা বলছেন

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা সরকারি চাকরি বিধিমালার পরিপন্থী উল্লেখ করে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ধনদেব বর্মণকে জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় শনিবার। ওই দিনই বিকেলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে।

তার কয়েক ঘণ্টা আগে ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে যাওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু জাফরের সঙ্গে তার বাহাসের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

মি. বর্মণ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের ইনচার্জ হিসেবে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি চলতি বছরের জুলাই মাসে আবাসিক সার্জন থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। আর এক বছর পরেই তার অবসরে প্রস্তুতিকালীণ ছুটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় মহাপরিচালক (ডিজি) মি. জাফর আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে যান। সেখানে চিকিৎসকের ব্যবহৃত টেবিল দেখে তিনি জানতে চান যে ওটিতে টেবিল কেন।

ক্যাজুয়ালটির ইনচার্জ মি. বর্মণ তাকে জানান যে টেবিল ডাক্তারদের লেখার জন্য। এ নিয়ে বাহাসের সময় ডিজি নিজেই তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে উদ্দেশ্যে করে বলেন “অ্যাই ভিডিও করো”।

এক পর্যায়ে ডিজি মি. বর্মণকে উদ্দেশ্য করে বলেন ‘হু আর ইউ’। এ সময় মি. বর্মণ এর প্রতিবাদ করেন।

ডিজি তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, কথাবার্তা হুঁশ করে বলবেন।” তিনি আরও বলেন, “যারা ডিজির সঙ্গে এমন ব্যবহার করে তারা রোগীর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে”।

মি বর্মণ বলেন, “আমি রোগীর সঙ্গে অনেক ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু যারা দায়িত্বে আছে তাদের সঙ্গে আমার ব্যবহার ভালো না।”

আরও কথার এক পর্যায়ে ডিজি মি. বর্মণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ” ….কিন্তু আপনি তো ব্যবহার শিখেন নাই”। মি. বর্মণ পাল্টা বলেন, “ঢাকায় তিন দিনের প্রশিক্ষণ করলাম; আপনার দুদিন আসার কথা ছিল, একদিনও আসেননি।”

এমন তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে মি. বর্মণ বলেন, “আমাকে সাসপেন্ড করেন, নো প্রবলেম”।

পরে তাকে ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে শনিবার বিকেলেই কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়।

বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে প্রচুর ভিড় লেগে থাকে রোগীদের

মি. বর্মণ পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “চাকরির শেষ বয়সে এসে গেছি। আমার বন্ধুরা অধ্যাপক হয়ে গেছে, আর আমাকে লেকচারারই থাকতে হয়েছে”।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ধনদেব বর্মণ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকদের জন্য টেবিল চাকরি জীবনের শুরু থেকে দেখে এসেছি। তারপরেও স্বাস্থ্য বিভাগের অভিভাবক হিসেবে ডিজি পরামর্শ দিলে বা সমালোচনা করলে মেনে নিতাম। কিন্তু তিনি আমার নাম শুনেই তাচ্ছিল্যভরা দৃষ্টিতে তিনবার নাম জানতে চেয়েছেন”।

“চাকরির শেষ পর্যায়ে এসে যদি সম্মান না পাই তাহলে সেটা মেনে নেয়া কঠিন। অনেক সংকট সামাল দিয়েছি সহকর্মীদের নিয়ে। অনেক কঠিন পরিস্থিতি সামলেছি। কখনো কাজে ফাঁকি দেইনি। সেজন্যই আমার রিয়েকশনটা বেশি ছিলো। ওনি সুন্দরভাবে বললে হয়তো ফলো করতাম,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. বর্মণ।

তার অভিযোগ সরকারি চিকিৎসকরা কিভাবে কোন পরিস্থিতিতে কাজ করে সেটি কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেয় না।

“এখানে সব জায়গায় দুর্নীতি। প্রমোশন প্রশিক্ষণ সবকিছুর জন্য নেতাদের ধরতে চায়। অনেক চিকিৎসক এসব কারণে চাকরি ছেড়েছেন। ২০১৩ সালে এমএস শেষ করে কিছুদিন আগে সহকারী অধ্যাপক হয়েছি। এখন অবসরের কাছে,” ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন তিনি।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েক দফা যোগাযোগ করেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে কথা বলা যায়নি। কিংবা তার বা তার কার্যালয় থেকে শনিবারের ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে কোন বিবৃতিও আসেনি।

শনিবারই ওই ঘটনার শেষ পর্যায়ে ডিজিকে অন্যদের বলতে দেখা যায় যে ‘ আমি তাকে খারাপ কিছু বলিনি’। তখন মি. বর্মণ ‘সরি স্যার’ বললে ডিজি বলেন সরি বলতে হবে না। এ সময় ডিজির মন্তব্য ছিলো ‘হি ইজ টোটালি আনফিট ফর দিস হসপিটাল’।

‘এটিই স্বাস্থ্য খাতের চিত্র’

চিকিৎসক ধনদেব বর্মণ ছাড়াও ওই হাসপাতালের আরও একজন চিকিৎসক সহ সরকারি চাকরিরত কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে যে ধারণা পাওয়া গেছে তা হলো- প্রমোশন ও প্রশিক্ষণ নিয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা খুবই ক্ষুব্ধ।

তাদের অভিযোগ, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতেও চিকিৎসকদেরই কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের কাছে ধর্ণা দিতে হয় এবং অনেক সময় এসব সুযোগের বিনিময়ে অর্থও দিতে হয়। এছাড়া অনেক চিকিৎসক এক যুগেও একটি প্রমোশন পাননি এমনও ঘটনাও অনেক বলে দাবি করেছেন তারা।

যদিও এসব অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ।

মি. আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ” ধরাধরি করে টাকা পয়সা দিয়ে প্রমোশন নেয়ার অভিযোগ এখানে অনেক পুরনো। প্রভাবশালীদের টাকা পয়সা দিয়ে ট্রেনিং করতে যেতে হয়। লোক ধরতে হয় পরীক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য। অনেক যন্ত্রপাতি কেনা হয় কিন্তু সেগুলো ফেলে রাখা হয়”।

তার অভিযোগ, স্বাস্থ্য বিভাগ নিজেই সরকারি চিকিৎসকদের ওউন করে না বলে সবকিছু তাদের নিজেকেই করতে হয়। ফলে চিকিৎসকদের মধ্যে বঞ্চনা আছে, যা ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে।

তার মতে, ডিজির সাথে চিকিৎসকের বাহাসের ঘটনাটি আকস্মিক ঘটনা হলেও এটিই আসলে দেশের স্বাস্থ্য খাতের মূল চিত্র।

“ওনি একজন সিনিয়র চিকিৎসক। তাই হয়তো প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু এই খাতে অব্যবস্থাপনার সংকট ভয়াবহ। স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন তাদের তো কোনো প্রমোশনই হয় না,” বলছিলেন মি. আহমেদ।

অধিদপ্তরের সাবেক এই পরিচালকের মতে, মানবসম্পদ, ঔষধ ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যবস্থাপনার সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

BBC News বাংলা