এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গত ১২ বছরে প্রায় ২৭০ কোটি মানুষ চরম পানি অনিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবে পরিবেশের দ্রুত অবনতি ও পানি খাতে বড় বিনিয়োগ ঘাটতি এই অর্জনকে আবারও ঝুঁকির মুখে ফেলছে—এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) নতুন প্রতিবেদনে এমন সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।
এডিবি সোমবার ‘এশিয়ান ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডব্লিউডিও) ২০২৫’ প্রকাশ করে।
পানি নিরাপত্তায় অর্জন ও নতুন ঝুঁকি
প্রতিবেদন বলছে, ২০১৩ সাল থেকে রাজনৈতিক অঙ্গীকার, লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ ও সুশাসন কাঠামোর উন্নতি বিশাল অগ্রগতি এনেছে। কিন্তু নদী, জলাভূমি, বন ও ভূগর্ভস্থ পানির দ্রুত অবনতি ভবিষ্যতের পানি নিরাপত্তাকে হুমকি দিচ্ছে।
ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও লবণাক্ততা যুক্ত হওয়ায় পানি সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। বিশ্বের মোট বন্যার ৪১ শতাংশই এই অঞ্চলে ঘটে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।
কত অর্থ প্রয়োজন
এডব্লিউডিওর হিসাব অনুযায়ী, ২০৪০ সাল পর্যন্ত শুধু পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার—প্রতি বছর ২৫০ বিলিয়ন ডলার—বিনিয়োগ প্রয়োজন। বর্তমান ব্যয় এই প্রয়োজনের ৪০ শতাংশেরও কম, ফলে প্রতিবছর ১৫০ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
এডিবির পানি ও নগর উন্নয়ন বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর নোরিও সাইতো বলেন, এশিয়ার পানি পরিস্থিতিতে একদিকে বিশাল অগ্রগতি, অন্যদিকে বাড়তি ঝুঁকি—এ দুটি বাস্তবতা একসঙ্গে বিদ্যমান। তিনি বলেন, “পানি নিরাপত্তা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই প্রকৃতি রক্ষা, দুর্যোগ–সহনশীলতা বাড়ানো, সুশাসন জোরদার ও উদ্ভাবনী অর্থায়ন জরুরি।”
পাঁচ দিক দিয়ে পানি নিরাপত্তা মূল্যায়ন
এডব্লিউডিও পানি নিরাপত্তাকে পাঁচটি দিক দিয়ে মূল্যায়ন করে—
• গ্রাম ও শহরে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন
• কৃষিসহ অর্থনৈতিক খাতে পানি ব্যবহারের সক্ষমতা
• নদী ও প্রাকৃতিক জলতন্ত্রের স্বাস্থ্য
• খরা, বন্যা, ঝড়সহ দুর্যোগ মোকাবিলা সক্ষমতা

বিভিন্ন দেশের অগ্রগতি
ভারতের গ্রামে ৮৪ কোটি মানুষের ওয়াশ সেবা উন্নত হয়েছে, মূলত সরকারি কর্মসূচির কারণে।
চীনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, রাডার প্রযুক্তি ও জরুরি সাড়া ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়েছে।
কম্বোডিয়া ও লাওস নিরাপদ পানির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে।
তাজিকিস্তানে জাতিসংঘের উদ্যোগে খরা–ঝুঁকি কমেছে এবং বন্যা–ঝড় ব্যবস্থাপনা উন্নত হয়েছে।
প্রকৃতি রক্ষা ও সুশাসন জরুরি
অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে প্রকৃতিকে পানি ব্যবস্থাপনার অংশ করতে হবে। এজন্য নদীস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জলাধার সুরক্ষা জোরদার করা উচিত।
স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতা ও সম্পদ দিলে পানি ব্যবস্থাপনা কার্যকর হবে। নারীদের ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত না করলে বিনিয়োগ সফল হতে পারে না।
অর্থায়নে ঘাটতি কীভাবে দূর হবে
ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্সের মাধ্যমে সরকারি–বেসরকারি অর্থ একত্র করে প্রকল্প ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। পানি খাতের দক্ষতা ও স্থায়িত্ব বাড়লে বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়বে।
সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সহায়তা
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার সহায়তায় প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে প্রতি তিন থেকে ছয় বছর পর এডিবি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। জাপান, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থায়নে এ বছরের সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















