তানজানিয়ার বিতর্কিত নির্বাচনে বেসামরিক নিহতের ঘটনা, দাতাদের চাপ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলেছে। পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান এখন বৈধতা সংকট মোকাবিলা এবং বিদেশি সহায়তা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে পড়েছেন।
৩ নভেম্বর দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেন সামিয়া সুলুহু হাসান। নির্বাচন শেষ হওয়ার তিন দিনের মধ্যেই দোদোমার সামরিক স্থাপনায় সীমিত উপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত হয় শপথ অনুষ্ঠান। নির্বাচনে তিনি পান ৯৭.৬% ভোট, যা বিরোধী দল ও বহু নাগরিক সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। তারা রাস্তায় নেমে ভোটছকচুরির অভিযোগ তোলে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা “শতাধিক” হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সমালোচকদের অভিযোগ, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা ছিল নামমাত্র। জনপ্রিয় বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসু রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আটক, আর লুহাগা এমপিনা টেকনিক্যাল কারণে বাদ পড়েন। নির্বাচন দিবসে সেনা-পুলিশ মোতায়েন, ইন্টারনেট বন্ধ, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের বাধা এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ—সব মিলিয়ে ভোটের পরিবেশ ছিল কঠোর দমনমূলক।
আফ্রিকান ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক মিশন রিপোর্টে জানায়, একাধিক কেন্দ্রে ব্যালট পেপার গোনা ও ভরাটের অনিয়ম ধরা পড়ে এবং ভোটার উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত কম।
গভীর সংকটে গণতন্ত্র ও সুশাসন
অর্থনীতি বিশ্লেষক ব্রাভিয়াস কাহিওজা বলেন, শাসকগোষ্ঠী জনগণের দাবিকে আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। সংবিধানে এখনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল চ্যালেঞ্জ করার আইনি বিধান নেই। দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া ও জবাবদিহির অভাবও নাগরিক ক্ষোভ বাড়িয়েছে।
তার ভাষায়, “তানজানিয়া আর আগের মতো থাকবে না। সংবিধান সংস্কার ও বৈষম্য মোকাবিলায় বড় পরিবর্তন আসতেই হবে।”
শপথের পর প্রথম ভাষণে হাসান সহিংসতার তদন্তে কমিশন গঠনের ঘোষণা দিলেও তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধী দল ও সিভিল সোসাইটির ‘ষড়যন্ত্রেই’ সহিংসতা বেড়েছে। কিন্তু সমালোচকদের ধারণা, শাসক দল সিসিএম-এর অভ্যন্তরেও অসন্তোষ বাড়ছে এবং অনেক নেতা এখন প্রকাশ্যে সরকারের পক্ষে অবস্থান নিতে সতর্ক।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি—তবু সামনে বড় ঝুঁকি
প্রথম মেয়াদে হাসানের নীতির কারণে জিডিপি, এফডিআই ও বেতন বৃদ্ধি—সব ক্ষেত্রেই উন্নতি দেখা গেছে। ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে ২৮% (১.৭২ বিলিয়ন ডলার) এবং আইএমএফ ৬% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়।
তবে সমস্যার মূল—তানজানিয়া ব্যাপকভাবে নির্ভর করে দাতাদের স্বল্পসুদে ঋণের ওপর। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সংকট গভীর হওয়ায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ২০২৫ সালের ফান্ডিং স্থগিতের সুপারিশ করেছে। একাধিক উন্নয়ন সহযোগীরও একই পথে হাঁটার আশঙ্কা রয়েছে।
বাহিরের সহায়তা কমলে অগ্রগতি থমকে যেতে পারে
হাসান স্বীকার করেন, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দাতা ঋণ পাওয়া কঠিন হতে পারে। তিনি অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন। তবে কাহিওজার মতে, শুধুমাত্র ঘরোয়া সম্পদ দিয়ে বড় প্রকল্প চলবে না—রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়।
তার মন্তব্য—“বিশ্বকে আশ্বস্ত করতে হবে যে তানজানিয়া পরিবর্তনে প্রস্তুত। রাজনৈতিক সংকট না কাটালে অর্থনীতি পথে ফিরবে না।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















