অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীর জন্য নতুন গোপনীয়তা ও কনটেন্ট ফিল্টার
বিশ্বজুড়ে শিশু-কিশোরদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে আইনকানুন কড়াকড়ি হওয়ায় রেডিট টিনএজার ব্যবহারকারীদের জন্য প্ল্যাটফর্মটিকে আরও নিয়ন্ত্রিত রূপে সাজাচ্ছে। নতুন নীতিতে ১৮ বছরের নিচের অ্যাকাউন্টগুলোর জন্য ব্যক্তিগত বার্তা ও চ্যাট রিকোয়েস্টের ওপর কঠোর ডিফল্ট সীমা থাকবে, যাতে অপরিচিতের সঙ্গে যোগাযোগ কমানো যায়। এ ছাড়া টিনদের জন্য বিজ্ঞাপনে আর ব্যক্তিগতকরণ করা প্রোফাইলিং থাকবে না এবং “সংবেদনশীল” ক্যাটাগরির বিজ্ঞাপন দেখানো হবে না। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে কনটেন্টে—অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীরা আর এনএসএফডব্লিউ বা “প্রাপ্তবয়স্ক” ট্যাগ দেওয়া কমিউনিটি ও পোস্টে প্রবেশ করতে পারবেন না, যা রেডিটকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো কড়া ফিল্টারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
![]()
এই পদক্ষেপের একটি বড় প্রেক্ষাপট আছে অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের নিচের শিশুদের সামাজিক মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ১০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া। রেডিট সেখানে নিজেদের ‘এজ অ্যাসিওরেন্স’ বা বয়স যাচাই পদ্ধতি আপডেট করছে, যাতে কম বয়সীদের প্রবেশ আটকে রাখা যায়। তবে বয়স যাচাই করতে তৃতীয় পক্ষের সেবা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অনুমান নাকি কেবল স্বঘোষিত জন্মতারিখ—কোন পথ বেছে নেবে, তা নিয়ে গোপনীয়তা অধিকারকর্মীরা উদ্বিগ্ন। প্রতিটি পদ্ধতিই আবার আলাদা ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে—অতিরিক্ত নজরদারি, ভুল শনাক্তকরণ বা সংবেদনশীল তরুণদের একেবারেই বাইরে ঠেলে দেওয়ার মতো সমস্যা।
অনলাইন কমিউনিটি, কিশোর ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের ভবিষ্যৎ
এই পরিবর্তন কিশোর ব্যবহারকারীদের জন্য রেডিটকে একদিকে নিরাপদ করে তুললেও অনেকের কাছে প্ল্যাটফর্মটিকে সংকীর্ণ লাগতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য, যৌনতা বা সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয় এমন অনেক সাবরেডিট, কঠোর ফিল্টারে “ম্যাচিউর” হিসেবে চিহ্নিত হয়ে টিনদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। শিশু অধিকারকর্মী ও কিছু শিক্ষক আবার মনে করেন, আত্মহনন প্ররোচনামূলক কনটেন্ট, গ্রাফিক ছবি বা টার্গেটেড বিজ্ঞাপন থেকে দূরে রাখা—এই ‘অতিরিক্ত সুরক্ষা’ আসলে অনেক দিন ধরে প্রয়োজন ছিল। অন্যদিকে, সমালোচকেরা আশঙ্কা করছেন, খুব বেশি বন্ধ গেট টিনদের কম নিয়ন্ত্রিত প্ল্যাটফর্মে ঠেলে দিতে পারে, যেখানে ভুয়া তথ্য ও শিকারিদের আচরণ আরও অদৃশ্য।

রেডিটের এ উদ্যোগে এখন চাপ বাড়ছে অন্য সামাজিক মাধ্যমগুলোর ওপরও, বিশেষ করে ইউরোপ ও এশিয়ায় যেখানে কিশোরদের জন্য আলাদা ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড ও ব্যবহারবিধি নিয়ে আইন প্রণয়নের আলোচনা চলছে। যদি দেখা যায়, কড়াকড়ি সত্ত্বেও প্ল্যাটফর্মের ট্রাফিক ও বিজ্ঞাপন আয় টিকে যায়, তাহলে নীতি-নির্ধারকদের হাতে যুক্তি থাকবে—ডিফল্টভাবেই প্রোফাইলিং কমানো, সুপারিশ অ্যালগরিদমকে নিরাপদ রাখা এবং হয়রানি রিপোর্ট করার প্রক্রিয়া আরও সহজ করা। এ মধ্যে বড় বড় কমিউনিটির মডারেটররা প্রস্তুত হচ্ছেন নতুন বাস্তবতার জন্য—কেন কিছু পোস্ট হঠাৎ গায়েব, কেন সতর্কতা বার্তা দেখা যাচ্ছে এবং কোন কনটেন্ট এখন বয়সসীমার আড়ালে—এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তাদেরই।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















