০২:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
এয়ার ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা সংকট: অনুমতি ছাড়াই আট ফ্লাইট পরিচালনার ঘটনায় বড়সড় অনিয়মের স্বীকারোক্তি অ্যামাজনের রেকর্ড বিনিয়োগ: ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে ৩৫ বিলিয়ন ডলার ঢালছে টেক জায়ান্ট আদানি এন্টারপ্রাইজের ২.৮ বিলিয়ন ডলারের রাইটস ইস্যুতে ব্যাপক সাড়া, চাহিদা ছাড়াল বরাদ্দ স্পেনে চীনা ইভি ঢেউ: ইউরোপে বিওয়াইডির নতুন ঘাঁটি চীনা প্রতিষ্ঠান পুডুর রোবট কুকুরের মাধ্যমে নতুন প্রবৃদ্ধির পথে অগ্রসরতা এশিয়ার ধনী বিনিয়োগকারীদের ক্রিপ্টোতে ক্রমবর্ধমান আস্থা টোকিও বিশ্বের সবচেয়ে দামী বিলাসবহুল হোটেলগুলোর শহর চীনের নতুন ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি কি ওপেকের জন্য উদ্বেগের কারণ? যুক্তরাষ্ট্রে মান্দারিনসহ চীনা ভাষা শিক্ষায় জোর দেওয়ার আহ্বান থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সংঘাত তীব্র: কূটনৈতিক ভাঙন, ল্যান্ডমাইন, সামরিক হামলা, রাজনৈতিক চাপ ও সীমান্ত নিরাপত্তার ৫ বড় কারণ

এয়ার ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা সংকট: অনুমতি ছাড়াই আট ফ্লাইট পরিচালনার ঘটনায় বড়সড় অনিয়মের স্বীকারোক্তি

এয়ার ইন্ডিয়ার একটি এয়ারবাস এ–৩২০ বিমান আটটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট ও একটি টেস্ট ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বার্ষিক ‘এয়ারওয়ার্দিনেস রিভিউ সার্টিফিকেট’ (এআরসি) ছাড়া। অভ্যন্তরীণ তদন্তে সামনে এসেছে মারাত্মক প্রক্রিয়াগত ব্যর্থতা, নথিপত্র যাচাইয়ে অবহেলা এবং ‘কমপ্লায়েন্স কালচারে’ বড় ফাঁক। ভারতের বিমান পরিবহন খাতের অস্থিরতার মধ্যেই নতুন করে এ ঘটনা নিয়ে বাড়ছে প্রশ্ন।


এয়ারবাস পরিচালনায় অনুমতির ঘাটতি

এয়ার ইন্ডিয়ার তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, নভেম্বর ২৪ ও ২৫ তারিখে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই ও হায়দরাবাদ রুটে বিমানটি যাত্রী বহন করে। এ সময় বিমানটির এআরসি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল, যা সচরাচর নিরাপত্তা যাচাই শেষে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) কর্তৃক প্রদান করা হয়।

তদন্তে উঠে আসে, ইঞ্জিনিয়ার ও পাইলটরা নিয়মমতো নথিপত্র যাচাই করেননি। জরুরি তথ্য সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছায়নি, ফলে সময়ে হস্তক্ষেপের সুযোগও হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ ‘প্রক্রিয়াগত শৃঙ্খলা, যোগাযোগ ও কমপ্লায়েন্স সংস্কৃতি’ দ্রুত শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে।


বারবার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ

এয়ার ইন্ডিয়ার ওপর সাম্প্রতিককালে নিরাপত্তা নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ বেড়েছে। জুন মাসে বোয়িং ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনায় ২৬০ জন নিহত হওয়ার পর এয়ারলাইনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে বড় প্রশ্ন ওঠে। জরুরি সরঞ্জাম না বদলানো, ইঞ্জিন পার্টস সময়মতো প্রতিস্থাপন না করা, এমনকি নথি জালিয়াতির মতো ঘটনাও নজরে আসে।

নভেম্বরের এই ঘটনাকে এয়ার ইন্ডিয়া ‘দুঃখজনক’ বলে জানিয়েছে। কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ডিজিসিএ বিমানটি গ্রাউন্ডেড করে তদন্ত শুরু করেছে।


ইঞ্জিন পরিবর্তন, নথি যাচাই—সবকিছুতেই অগোছালো অবস্থা

এআরসি ছাড়াই বিমানটি একটি টেস্ট ফ্লাইটেও আকাশে ওঠে। রিপোর্টে বলা হয়, ইঞ্জিন পরিবর্তনের পর বিমান ছাড়পত্র দেওয়া হলেও বিশেষ ফ্লাইট পারমিট নেওয়া হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অনবোর্ড নথি পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তী যাত্রীবাহী ফ্লাইটগুলোর আগেও কেউ নথি যাচাই করেননি।

পাইলটদের ক্ষেত্রেও একই অবহেলা দেখা গেছে। আটটি ফ্লাইট পরিচালনার সময় তাঁরা নিয়মমাফিক কাগজপত্র যাচাই করেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। ফলে এ ঘটনা ‘বহুস্তরীয় সাংগঠনিক ঘাটতির’ ফল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।


বিমান খাতে অস্থিরতা, কঠোর নজরদারির ইঙ্গিত

ইন্ডিগো সম্প্রতি হাজারো ফ্লাইট বাতিল করায় দেশের বিমান খাত চাপের মুখে পড়েছে। এককভাবে ইন্ডিগো ও এয়ার ইন্ডিয়ার বাজার দখল ৯০ শতাংশেরও বেশি, ফলে তাদের কমপ্লায়েন্স ব্যর্থতা সামগ্রিক খাতকে অচল করে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।

এআরসি ভঙ্গের জরিমানা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ডিজিসিএ ও এয়ারবাস এই ঘটনায় মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি নিজ উদ্যোগে জানিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে কমপ্লায়েন্স আরও শক্তিশালী করবে।


কঠোর সতর্কবার্তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশনস) মনীশ উপ্পল ১ ডিসেম্বর সব পাইলটকে ইমেইলে কঠোরভাবে নথিপত্র যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। তিনি জানান, নীতি লঙ্ঘন করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, প্রতিষ্ঠানটি এখন এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চায় যেখানে অপারেশনাল সুবিধার চেয়ে নিয়ম-নীতি ও নিরাপত্তা হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

#এয়ারইন্ডিয়া #বিমাননিরাপত্তা #এভিয়েশনসংকট #ভারতবিমানখাত #ফ্লাইটঅনিয়ম #ডিজিসিএ #এয়ারবাসA320 #কমপ্লায়েন্সসংস্কৃতি #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

এয়ার ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা সংকট: অনুমতি ছাড়াই আট ফ্লাইট পরিচালনার ঘটনায় বড়সড় অনিয়মের স্বীকারোক্তি

এয়ার ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা সংকট: অনুমতি ছাড়াই আট ফ্লাইট পরিচালনার ঘটনায় বড়সড় অনিয়মের স্বীকারোক্তি

০১:২০:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

এয়ার ইন্ডিয়ার একটি এয়ারবাস এ–৩২০ বিমান আটটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট ও একটি টেস্ট ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বার্ষিক ‘এয়ারওয়ার্দিনেস রিভিউ সার্টিফিকেট’ (এআরসি) ছাড়া। অভ্যন্তরীণ তদন্তে সামনে এসেছে মারাত্মক প্রক্রিয়াগত ব্যর্থতা, নথিপত্র যাচাইয়ে অবহেলা এবং ‘কমপ্লায়েন্স কালচারে’ বড় ফাঁক। ভারতের বিমান পরিবহন খাতের অস্থিরতার মধ্যেই নতুন করে এ ঘটনা নিয়ে বাড়ছে প্রশ্ন।


এয়ারবাস পরিচালনায় অনুমতির ঘাটতি

এয়ার ইন্ডিয়ার তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, নভেম্বর ২৪ ও ২৫ তারিখে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই ও হায়দরাবাদ রুটে বিমানটি যাত্রী বহন করে। এ সময় বিমানটির এআরসি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল, যা সচরাচর নিরাপত্তা যাচাই শেষে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) কর্তৃক প্রদান করা হয়।

তদন্তে উঠে আসে, ইঞ্জিনিয়ার ও পাইলটরা নিয়মমতো নথিপত্র যাচাই করেননি। জরুরি তথ্য সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছায়নি, ফলে সময়ে হস্তক্ষেপের সুযোগও হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ ‘প্রক্রিয়াগত শৃঙ্খলা, যোগাযোগ ও কমপ্লায়েন্স সংস্কৃতি’ দ্রুত শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে।


বারবার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ

এয়ার ইন্ডিয়ার ওপর সাম্প্রতিককালে নিরাপত্তা নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ বেড়েছে। জুন মাসে বোয়িং ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনায় ২৬০ জন নিহত হওয়ার পর এয়ারলাইনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে বড় প্রশ্ন ওঠে। জরুরি সরঞ্জাম না বদলানো, ইঞ্জিন পার্টস সময়মতো প্রতিস্থাপন না করা, এমনকি নথি জালিয়াতির মতো ঘটনাও নজরে আসে।

নভেম্বরের এই ঘটনাকে এয়ার ইন্ডিয়া ‘দুঃখজনক’ বলে জানিয়েছে। কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ডিজিসিএ বিমানটি গ্রাউন্ডেড করে তদন্ত শুরু করেছে।


ইঞ্জিন পরিবর্তন, নথি যাচাই—সবকিছুতেই অগোছালো অবস্থা

এআরসি ছাড়াই বিমানটি একটি টেস্ট ফ্লাইটেও আকাশে ওঠে। রিপোর্টে বলা হয়, ইঞ্জিন পরিবর্তনের পর বিমান ছাড়পত্র দেওয়া হলেও বিশেষ ফ্লাইট পারমিট নেওয়া হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অনবোর্ড নথি পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তী যাত্রীবাহী ফ্লাইটগুলোর আগেও কেউ নথি যাচাই করেননি।

পাইলটদের ক্ষেত্রেও একই অবহেলা দেখা গেছে। আটটি ফ্লাইট পরিচালনার সময় তাঁরা নিয়মমাফিক কাগজপত্র যাচাই করেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। ফলে এ ঘটনা ‘বহুস্তরীয় সাংগঠনিক ঘাটতির’ ফল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।


বিমান খাতে অস্থিরতা, কঠোর নজরদারির ইঙ্গিত

ইন্ডিগো সম্প্রতি হাজারো ফ্লাইট বাতিল করায় দেশের বিমান খাত চাপের মুখে পড়েছে। এককভাবে ইন্ডিগো ও এয়ার ইন্ডিয়ার বাজার দখল ৯০ শতাংশেরও বেশি, ফলে তাদের কমপ্লায়েন্স ব্যর্থতা সামগ্রিক খাতকে অচল করে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।

এআরসি ভঙ্গের জরিমানা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ডিজিসিএ ও এয়ারবাস এই ঘটনায় মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি নিজ উদ্যোগে জানিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে কমপ্লায়েন্স আরও শক্তিশালী করবে।


কঠোর সতর্কবার্তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশনস) মনীশ উপ্পল ১ ডিসেম্বর সব পাইলটকে ইমেইলে কঠোরভাবে নথিপত্র যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। তিনি জানান, নীতি লঙ্ঘন করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, প্রতিষ্ঠানটি এখন এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চায় যেখানে অপারেশনাল সুবিধার চেয়ে নিয়ম-নীতি ও নিরাপত্তা হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

#এয়ারইন্ডিয়া #বিমাননিরাপত্তা #এভিয়েশনসংকট #ভারতবিমানখাত #ফ্লাইটঅনিয়ম #ডিজিসিএ #এয়ারবাসA320 #কমপ্লায়েন্সসংস্কৃতি #সারাক্ষণরিপোর্ট