০৭:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
ওবামাকেয়ার ভর্তুকি শেষ হতে যাচ্ছে, সিনেটে দুই দলই সমাধান আনতে ব্যর্থ ওকলাহোমা সিটির দুনিয়া কাঁপানো দৌড়: এনবিএ ইতিহাসের সেরা দল কি থান্ডারই মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ‘নির্ণায়ক’, নরওয়েতে পৌঁছে মন্তব্য মারিয়া করিনা মাচাদোর মার্কিন জাহাজ জব্দে চরম চাপে মাদুরো, ভেনিজুয়েলায় নতুন সঙ্কটের ছায়া নাটোর সতর্কবার্তা: রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য আমরা জাপানের নোবোরিতো ল্যাবের গোপন যুদ্ধাস্ত্র উন্মোচন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ‘ছায়া প্রস্তুতি’ নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী মোদি-ট্রাম্প আলোচনায় বাণিজ্য অগ্রগতি ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতি ঝলমলে বিন্দি ও শাড়ি-অনুপ্রাণিত লুকে টাইলার ভারত সফর; হাতে সেলাই করা পোশাক উপহার ‘টুইন’ ন্যান্সি ত্যাগীর যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি আরও কড়া: ভেনেজুয়েলার উপকূলে আরও ট্যাংকার জব্দের প্রস্তুতি কংগ্রেস বৈঠকে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, শশী থারুর সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও প্রকট

কেয়ারু অ্যান্ড কোম্পানির রেকর্ড মুনাফা

২০২৪–২৫ অর্থবছরে কেয়ারু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ নিট মুনাফা অর্জন করেছে। কিন্তু একই সময়ে প্রতিষ্ঠানের পুরোনো ও লোকসানী চিনি ইউনিট আবারও বড় ক্ষতি দেখিয়েছে, যা পুরো ব্যবসাকে পিছিয়ে দিচ্ছে।

কোম্পানির সার্বিক অবস্থা

প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১২৯.৪৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ১১২.০৭ কোটি টাকা থেকে বেশি। সরকারের কোষাগারে প্রতিষ্ঠানটির অবদান ১৪০.৩৬ কোটি টাকাই রয়ে গেছে, যা গত বছরের সঙ্গে প্রায় সমান।

কোম্পানির আধুনিক ব্যবসাগুলো—বিশেষ করে ডিস্টিলারি ইউনিট—মুনাফার বড় উৎস হিসেবে কাজ করছে। কর্মকর্তা পর্যায়ের একজন জানিয়েছেন, ডিস্টিলারি ইউনিটই এখন মূল আর্থিক ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

কিন্তু চিনি ইউনিটের অবস্থা

চিনি কারখানা আগের মতোই বড় ধরনের লোকসান দেখিয়েছে। এবারে লোকসান হয়েছে ৬২.৩৫ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে এই ইউনিট একই সমস্যায় ভুগছে।

চিনির দাম আরও বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা

চিনি ইউনিট কেন বারবার লোকসান করছে

প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নথি, কর্মী, কর্মকর্তা এবং কৃষকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে চলা কয়েকটি মূল সমস্যা—

পুরোনো ও নিম্নমানের আখের জাত

কারখানায় যে আখ সরবরাহ হয়, তার বেশিরভাগই পুরোনো জাতের। এসব আখ থেকে সুগার রিকভারি কম হয়। ফলে বেশি খরচে কম চিনি উৎপাদিত হচ্ছে।

আখ চাষ কমে যাওয়া

কৃষকরা দেরিতে মূল্য পাওয়া, সেচের খরচ বেড়ে যাওয়া এবং অনিশ্চিত লাভের কারণে আখ চাষ কমিয়ে দিচ্ছেন। এতে সরবরাহ কমে গেছে, ফলে উৎপাদন ও মান—দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পুরোনো যন্ত্রপাতি

কারখানার যন্ত্রপাতির বড় অংশই বহু পুরোনো। বারবার মেরামত করতে হয়, উৎপাদন কমে যায়, খরচ বাড়ে।

ভারতীয় 'চোরাই' চিনিতে সয়লাব বাজার

বাজার প্রতিযোগিতা ও সস্তা আমদানি

বাজারে আমদানি করা সস্তা ও ভেজাল চিনি বেশি বিক্রি হচ্ছে। ফলে স্থানীয় চিনি কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে, যা আয় কমিয়ে দিচ্ছে।

লোকসান ঠেকাতে আধুনিকায়নের উদ্যোগ

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব্বিক হাসান বলেছেন, ডিস্টিলারি ইউনিটের কারণে এবার রেকর্ড মুনাফা এসেছে। তবে চিনি ইউনিট এখনো ‘লো রিকভারি, নিম্নমানের আখ এবং পুরোনো যন্ত্রপাতি’র কারণে বোঝা হয়ে আছে।

তিনি জানান, ১০২.২১ কোটি টাকার বিএমআরআই আধুনিকায়ন প্রকল্প প্রায় শেষের পথে।

তার ভাষায়, নতুন অটোমেটেড প্লান্ট চালু হলে চিনি ইউনিটের লোকসান অনেকটাই কমে আসবে।

বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব রশিদুল হাসান বলেছেন, উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চ ফলনশীল আখের জাত আনার জন্য সরকার কাজ করছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, মূল চ্যালেঞ্জ হলো চিনি ইউনিটকে লাভের মুখ দেখানো, এবং সে লক্ষ্যেই সব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

কারখানার দুই শ্রমিক জানান, আধুনিকায়ন ও অটোমেশন চালু হলে উৎপাদন বাড়বে এবং সিস্টেম লস কমে যাবে।

আদিলুর রহমান খান পেলেন শিল্প মন্ত্রণালয়

কৃষকদের দাবি—উন্নত জাত ও ন্যায্য দাম

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, মিলের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি মাঠেও সংস্কার জরুরি।

আখচাষি মনিরুজ্জামান বলেন, উচ্চ-সুগার জাত সম্প্রসারণ, উন্নত বীজ ও সার ব্যবহার জরুরি।

আরেক কৃষক শামীম আলী বলেন, ন্যায্য দাম ও সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করলে কৃষকরা আবার আখচাষে ফিরবেন।

কোন কোন ইউনিট লাভবান হয়েছে

২০২৪–২৫ অর্থবছরে কেয়ারু অ্যান্ড কোম্পানির ছয়টি ইউনিটের মধ্যে পাঁচটিই মুনাফা করেছে—

ডিস্টিলারি ইউনিট আয় করেছে ১৯০.২৬ কোটি টাকা।

জৈব সার কারখানা লাভ করেছে ৭৮.৩৬ লাখ টাকা।

আজ টাকা দিবস!

কমার্শিয়াল ফার্মের আয় ৩৬.০৯ লাখ টাকা।

এক্সপেরিমেন্টাল ফার্ম আয় করেছে ৩০ লাখ টাকার বেশি।

ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনিট আয় করেছে ৫.২০ লাখ টাকা।

শুধু চিনি ইউনিটই লোকসান করেছে ৬২.৩৫ কোটি টাকা।

চিনি ইউনিটের বড় ক্ষতির পরেও প্রতিষ্ঠানের মোট মুনাফা এবার রেকর্ড ছুঁয়েছে। আগের বছরের ১১২.০৭ কোটি টাকার মুনাফা ছাড়িয়ে এই বছরের ১২৯.৪৪ কোটি টাকা দেখাচ্ছে কেয়ারুর ধারাবাহিক অগ্রগতি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ওবামাকেয়ার ভর্তুকি শেষ হতে যাচ্ছে, সিনেটে দুই দলই সমাধান আনতে ব্যর্থ

কেয়ারু অ্যান্ড কোম্পানির রেকর্ড মুনাফা

০৪:২৮:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

২০২৪–২৫ অর্থবছরে কেয়ারু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ নিট মুনাফা অর্জন করেছে। কিন্তু একই সময়ে প্রতিষ্ঠানের পুরোনো ও লোকসানী চিনি ইউনিট আবারও বড় ক্ষতি দেখিয়েছে, যা পুরো ব্যবসাকে পিছিয়ে দিচ্ছে।

কোম্পানির সার্বিক অবস্থা

প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১২৯.৪৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ১১২.০৭ কোটি টাকা থেকে বেশি। সরকারের কোষাগারে প্রতিষ্ঠানটির অবদান ১৪০.৩৬ কোটি টাকাই রয়ে গেছে, যা গত বছরের সঙ্গে প্রায় সমান।

কোম্পানির আধুনিক ব্যবসাগুলো—বিশেষ করে ডিস্টিলারি ইউনিট—মুনাফার বড় উৎস হিসেবে কাজ করছে। কর্মকর্তা পর্যায়ের একজন জানিয়েছেন, ডিস্টিলারি ইউনিটই এখন মূল আর্থিক ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

কিন্তু চিনি ইউনিটের অবস্থা

চিনি কারখানা আগের মতোই বড় ধরনের লোকসান দেখিয়েছে। এবারে লোকসান হয়েছে ৬২.৩৫ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে এই ইউনিট একই সমস্যায় ভুগছে।

চিনির দাম আরও বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা

চিনি ইউনিট কেন বারবার লোকসান করছে

প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নথি, কর্মী, কর্মকর্তা এবং কৃষকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে চলা কয়েকটি মূল সমস্যা—

পুরোনো ও নিম্নমানের আখের জাত

কারখানায় যে আখ সরবরাহ হয়, তার বেশিরভাগই পুরোনো জাতের। এসব আখ থেকে সুগার রিকভারি কম হয়। ফলে বেশি খরচে কম চিনি উৎপাদিত হচ্ছে।

আখ চাষ কমে যাওয়া

কৃষকরা দেরিতে মূল্য পাওয়া, সেচের খরচ বেড়ে যাওয়া এবং অনিশ্চিত লাভের কারণে আখ চাষ কমিয়ে দিচ্ছেন। এতে সরবরাহ কমে গেছে, ফলে উৎপাদন ও মান—দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পুরোনো যন্ত্রপাতি

কারখানার যন্ত্রপাতির বড় অংশই বহু পুরোনো। বারবার মেরামত করতে হয়, উৎপাদন কমে যায়, খরচ বাড়ে।

ভারতীয় 'চোরাই' চিনিতে সয়লাব বাজার

বাজার প্রতিযোগিতা ও সস্তা আমদানি

বাজারে আমদানি করা সস্তা ও ভেজাল চিনি বেশি বিক্রি হচ্ছে। ফলে স্থানীয় চিনি কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে, যা আয় কমিয়ে দিচ্ছে।

লোকসান ঠেকাতে আধুনিকায়নের উদ্যোগ

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব্বিক হাসান বলেছেন, ডিস্টিলারি ইউনিটের কারণে এবার রেকর্ড মুনাফা এসেছে। তবে চিনি ইউনিট এখনো ‘লো রিকভারি, নিম্নমানের আখ এবং পুরোনো যন্ত্রপাতি’র কারণে বোঝা হয়ে আছে।

তিনি জানান, ১০২.২১ কোটি টাকার বিএমআরআই আধুনিকায়ন প্রকল্প প্রায় শেষের পথে।

তার ভাষায়, নতুন অটোমেটেড প্লান্ট চালু হলে চিনি ইউনিটের লোকসান অনেকটাই কমে আসবে।

বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব রশিদুল হাসান বলেছেন, উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চ ফলনশীল আখের জাত আনার জন্য সরকার কাজ করছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, মূল চ্যালেঞ্জ হলো চিনি ইউনিটকে লাভের মুখ দেখানো, এবং সে লক্ষ্যেই সব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

কারখানার দুই শ্রমিক জানান, আধুনিকায়ন ও অটোমেশন চালু হলে উৎপাদন বাড়বে এবং সিস্টেম লস কমে যাবে।

আদিলুর রহমান খান পেলেন শিল্প মন্ত্রণালয়

কৃষকদের দাবি—উন্নত জাত ও ন্যায্য দাম

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, মিলের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি মাঠেও সংস্কার জরুরি।

আখচাষি মনিরুজ্জামান বলেন, উচ্চ-সুগার জাত সম্প্রসারণ, উন্নত বীজ ও সার ব্যবহার জরুরি।

আরেক কৃষক শামীম আলী বলেন, ন্যায্য দাম ও সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করলে কৃষকরা আবার আখচাষে ফিরবেন।

কোন কোন ইউনিট লাভবান হয়েছে

২০২৪–২৫ অর্থবছরে কেয়ারু অ্যান্ড কোম্পানির ছয়টি ইউনিটের মধ্যে পাঁচটিই মুনাফা করেছে—

ডিস্টিলারি ইউনিট আয় করেছে ১৯০.২৬ কোটি টাকা।

জৈব সার কারখানা লাভ করেছে ৭৮.৩৬ লাখ টাকা।

আজ টাকা দিবস!

কমার্শিয়াল ফার্মের আয় ৩৬.০৯ লাখ টাকা।

এক্সপেরিমেন্টাল ফার্ম আয় করেছে ৩০ লাখ টাকার বেশি।

ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনিট আয় করেছে ৫.২০ লাখ টাকা।

শুধু চিনি ইউনিটই লোকসান করেছে ৬২.৩৫ কোটি টাকা।

চিনি ইউনিটের বড় ক্ষতির পরেও প্রতিষ্ঠানের মোট মুনাফা এবার রেকর্ড ছুঁয়েছে। আগের বছরের ১১২.০৭ কোটি টাকার মুনাফা ছাড়িয়ে এই বছরের ১২৯.৪৪ কোটি টাকা দেখাচ্ছে কেয়ারুর ধারাবাহিক অগ্রগতি।