বাংলাদেশের স্পিনিং শিল্পে নেমে এসেছে নজিরবিহীন সংকট। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে, এবং এক লাখেরও বেশি শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। পরিস্থিতি সামলাতে জরুরি সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন শিল্প নেতারা, নইলে আরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সালমা গ্রুপের সিইও আজহার আলী শ্রমিক, কর্মচারী ও স্পিনিং সেক্টরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষে একাধিক প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমাদের আন্তর্জাতিক মানের সক্ষমতা ও দক্ষ জনশক্তি রয়েছে। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নিজেদের অধিকার রক্ষায় আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।”
প্রতিনিধিরা জানান, অ্যাপারেল শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকওয়ার্ড লিংক হিসেবে স্পিনিং সেক্টরটি কয়েক বছর ধরেই চাপের মুখে আছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী ধাক্কা, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট ও জ্বালানি–বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে এবং প্রতিযোগিতা কমে গেছে। ফলে বহু কারখানা বন্ধের মুখে পৌঁছেছে।
দীর্ঘস্থায়ী সংকটে মিলগুলোর প্রায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ রেখেছে; বাকি কারখানাগুলোও সীমিত কাঁচামাল ও বাড়তি ব্যয়ের কারণে মাত্র ৫০–৬০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। বক্তারা সতর্ক করেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে আরও কারখানা বন্ধ হবে এবং কয়েক লাখ মানুষের জীবিকা ঝুঁকিতে পড়বে।

খাতটি সরকারের কাছে যে পাঁচটি মূল প্রস্তাব পেশ করেছে তা হলো:
রপ্তানি প্রণোদনা পুনর্বহাল ও বৃদ্ধি
আগে পোশাক খাতে দেওয়া ৫ শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনা ১.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল। নেতারা পুরোনো হার পুনর্বহালের দাবি জানান এবং দেশীয় সুতো ব্যবহারকারী রপ্তানিকারকদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা চালুর প্রস্তাব করেন। আমদানি করা সুতোতে ১০ শতাংশ সেফগার্ড শুল্ক আরোপের আহ্বানও জানান তারা।
জ্বালানি বিল রিবেট
জ্বালানির দাম তিন দফায় সর্বোচ্চ ৩৫০ শতাংশ বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। রপ্তানিমুখী সব কারখানার জন্য কমপক্ষে দুই বছরের ৩০ শতাংশ গ্যাস–বিদ্যুৎ বিল রিবেট দাবি করা হয়েছে।

অ্যান্টি–ডাম্পিং ও সেফগার্ড শুল্ক
শিল্প প্রতিনিধিদের মতে, বিদেশি ভর্তুকিযুক্ত সুতো দেশীয় বাজারে স্থানীয় উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে ঢুকছে। তাই অ্যান্টি–ডাম্পিং বা সেফগার্ড শুল্ক আরোপে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার KPPI-এর সাম্প্রতিক সেফগার্ড সিদ্ধান্তের উল্লেখ করা হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (EDF) পুনরায় চালু
প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের EDF সুবিধা পুনরায় দুই বছরের জন্য চালুর দাবি করেছে স্পিনিং সেক্টর, যাতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পগুলো পুনরুদ্ধার করতে পারে।
কাঁচামাল উৎস নিশ্চিতকরণ ও বিশেষ সহায়তা

রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর কমপক্ষে ৭০ শতাংশ কাঁচামাল দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুনর্ব্যবহৃত ও টেকসই সুতোতে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ প্রণোদনা এবং যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণের জন্য ৫ শতাংশ সুদে ১০ বছরের ঋণের দাবি জানানো হয়েছে।
আমদানি সক্ষমতা বৃদ্ধি
টাকার অবমূল্যায়নে কাঁচামাল আমদানির সক্ষমতা প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। ফলে কারখানাগুলো পূর্ণ উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে আমদানির সীমা বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শ্রমিক প্রতিনিধিত্বকারী মোহাম্মদ শাহিনুল হক বলেন, স্পিনিং সেক্টর বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে যাতে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে না যায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















