চীনের একটি শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন চীনা কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করে “বৈষম্যমূলক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ” অ্যান্টি-সাবসিডি তদন্ত বন্ধ করে। ব্রাসেলস যখন রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি পাওয়ার অভিযোগে চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি আরও জোরদার করছে, তখনই এই প্রতিক্রিয়া এসেছে।
ইইউ বৃহস্পতিবার নাকটেক নামের একটি চীনা সিকিউরিটি টেকনোলজি কোম্পানির বিরুদ্ধে গভীরতর ফরেন সাবসিডি রেগুলেশন (এফএসআর) তদন্ত শুরু করেছে। এর ঠিক কয়েক দিন আগে ইউরোপে চীন-নিবেশিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম টেমুর ডাবলিন হেডকোয়ার্টারে পৃথক আরেকটি এফএসআর তদন্তের অংশ হিসেবে অভিযান চালানো হয়।

চায়না চেম্বার অব কমার্স টু দ্য ইইউ (সিসিসিইইউ) এক বিবৃতিতে জানায়, ইউরোপিয়ান কমিশন যেভাবে চীনা বিনিয়োগকৃত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে “ক্রমাগত, লক্ষ্যভিত্তিক এবং অতিরিক্ত” তদন্ত চালাচ্ছে, তারা তার দৃঢ় বিরোধিতা করে। সংগঠনের ভাষ্য, ২০২৩ সালে চালু হওয়া এফএসআর এখন এমনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মূলত চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এককভাবে টার্গেট করছে—কারণ এখন পর্যন্ত অধিকাংশ তদন্তেই চীনা বা চীন-নিবেশিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জড়িত।
সিসিসিইইউ সতর্ক করে বলেছে, কমিশন যেন তাদের ইনভেস্টিগেটিভ পাওয়ারের অপব্যবহার না করে এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ না করে। তাদের মতে, ইইউ যে সংজ্ঞায় ফরেন সাবসিডি নির্ধারণ করছে তা অত্যন্ত বিস্তৃত এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সীমারেখাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
চীনের মিনিস্ট্রি অব কমার্স জানুয়ারি মাসে ছয় মাসব্যাপী একটি তদন্ত সম্পন্ন করে, যেখানে দেখা যায় ইইউর এফএসআর প্রয়োগ চীনা কোম্পানির জন্য বড় ধরনের ট্রেড ও ইনভেস্টমেন্ট প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে এবং প্রায় ২.১ বিলিয়ন ইউরো সরাসরি ও পরোক্ষ ক্ষতি হয়েছে।

ইইউর ভর্তুকি-নির্ভর প্রতিযোগিতার প্রশ্নে চীনকে লক্ষ্য করে তদন্ত বাড়ার প্রেক্ষাপটে ইউরোপে আরেকটি উদ্বেগও দেখা দিচ্ছে—চীনা পণ্যের স্রোতে ইউরোপিয়ান ইন্ডাস্ট্রি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে কি না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপিয়ান ইন্ডাস্ট্রি এখন “বাঁচা-মরার” মুহূর্তে দাঁড়িয়ে।
ইন্টারন্যাশনাল আইনসংস্থা আর্নল্ড অ্যান্ড পোর্টারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এফএসআর কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইউরোপিয়ান কমিশন যে চারটি গভীরতর তদন্ত শুরু করেছে, তার তিনটিতেই চীনা কোম্পানি জড়িত। আরও বলা হয়, কমিশন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার অনুযায়ী টেলিকমিউনিকেশনস, ক্লিন এনার্জি, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও সিকিউরিটি ইকুইপমেন্ট—এসব কৌশলগত খাতকে লক্ষ্য করে তদন্ত বেছে নিচ্ছে।
কিন্তু ইউরোপে কথিত অনুচিত প্রতিযোগিতার অন্য উদাহরণ—যেমন ইউরোপিয়ান প্রফেশনাল ফুটবল ক্লাবগুলোর কাতার ও ইউএই থেকে পাওয়া ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাকিং নিয়ে অভিযোগ—এসব বিষয়ে ইইউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সিসিসিইইউ-এর এ বছরের এক জরিপে ইইউতে কার্যরত ২০৫টি চীনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি জানিয়েছে যে তারা এফএসআর তদন্তের কারণে সরাসরি ব্যাঘাত, বাণিজ্যিক সুযোগ হারানো এবং অপারেশনাল রিস্কের মুখে পড়েছে। অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান মনে করে, এসব তদন্ত তাদের ব্যবসায়িক সুনাম ও বাজার-ধারণায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
নাকটেক জানিয়েছে, তারা ইউরোপিয়ান কমিশনের সঙ্গে তদন্তকাজে সহযোগিতা চালিয়ে যাবে, তবে নিজেদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















