১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে বাইবেলের বৈশ্বিক যাত্রা, লক্ষ্য দুই হাজার তেত্রিশ ক্যানসারের পথ ধরেই আলঝেইমারের নতুন চিকিৎসা দিগন্ত নাইরোবির শহরের পাশে বুনো আফ্রিকা: এক দিনে সাফারির অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা যশোরে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত ঝালকাঠিতে হাদির গ্রামের বাড়িতে লুটপাট ‘হাদির ওপর হামলাকারী শিবিরের লোক’—রিজভীর বক্তব্য ভিত্তিহীন: ডিএমপি কমিশনার ইসরায়েলমুখী বিশাল ইভানজেলিকাল মিশন: ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা হাদির ওপর হামলা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ: মির্জা আব্বাস যাত্রাবাড়িতে বাসচাপায় বৃদ্ধার মৃত্যু গাজায় যুদ্ধের শেষ তিন মাসে নবজাতকের মৃত্যু বেড়েছে ভয়াবহভাবে

হিন্দুস্থান টাইমস: বিএনপি ভারতের প্রতি অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম সাধারণ নির্বাচন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এই ঘোষণা স্পষ্ট করেছে যে তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে। তবে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না, কারণ নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রবণতা বলছে, সর্বাধিক আসন পেতে পারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি); তাদের পরেই থাকতে পারে জামায়াতে ইসলামী। শেখ হাসিনা সরকারের সময় নিষিদ্ধ থাকা জামায়াত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর আবার সক্রিয় হয়েছে। ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারগুলোর ইসলামপন্থী ও উগ্রপন্থী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রত্যাহার করায় এই পুনরুজ্জীবন সহজ হয়েছে।

২০২৪ সালের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন ছাত্রনেতার উদ্যোগে গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) এখনো কার্যকর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচকেরা দাবি করেন, নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করাসহ তাঁর কিছু সিদ্ধান্ত ছাত্রদের রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছিল। বাস্তবতা হলো, এনসিপি বিএনপি ও জামায়াত—উভয়ের তুলনায় দুর্বল ফল করারই সম্ভাবনা রাখে।

নির্বাচনের পাশাপাশি ভোটাররা ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে একটি গণভোটে অংশ নেবেন। রাজনৈতিক দলগুলো ও অন্তর্বর্তী সরকার মিলে চূড়ান্ত করা এই ঘোষণায় সংবিধানিক, নির্বাচনী ও প্রশাসনিক সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের সীমা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদার এবং মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ। তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সময়সূচি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বক্তব্য, তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন ‘ন্যায্য ও স্বাভাবিক পরিবেশ’ নিশ্চিত করতে পারবে না। দলটি আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও, শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশ দেশ ছেড়ে যাওয়ায় রাজপথে তারা কতটা শক্তি দেখাতে পারবে, তা অনিশ্চিত। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসন দলটির জনসমর্থন ক্ষুণ্ন করেছে, যদিও তাদের একটি নিবেদিত কর্মীভিত্তি এখনো রয়েছে।

ব্যাপক সহিংসতায় ক্ষতবিক্ষত দেশের জন্য এই নির্বাচন এক ধরনের সান্ত্বনা হয়ে উঠতে পারে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। সমাজে বিভাজনও গভীর। তবু অনেকের মতে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার এসব সমস্যা মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনায় বেশি সক্ষম হবে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ সমালোচকদের কাছে এমন ক্ষেত্রেও হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, যা নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।

তবে নির্বাচন ঘোষণাটি ভারতের জন্যও এক ধরনের দ্বিধা তৈরি করেছে। ভারত বরাবরই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানাতে হলেও, দিল্লিকে ভাবতে হবে আরও ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রশ্নে তারা কতটা অনড় থাকবে। একই সঙ্গে ঢাকার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবিও উঠেছে। ২০২৪ সালের সহিংসতা নিয়ে একটি ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর এ বিষয়ে ‘পর্যালোচনা চলছে’ বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

এদিকে ঢাকায় সম্ভাব্য বিএনপি-নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তুতি নেওয়া ভারতের জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে। বিশেষত ভারতের প্রতি বিএনপির অতীত বৈরিতা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহে সমর্থন জোগানো শক্তির সঙ্গে দলটির আগের যোগাযোগের ইতিহাস বিবেচনায় রেখে। যদিও বিএনপি নেতারা ভারতের প্রতি অবস্থানে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা নতুন সূচনার আশা জাগায়। তবু সতর্ক থাকার কারণও কম নয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো অতীতে আওয়ামী লীগকে ‘ভারতঘেঁষা’ বলে অভিযুক্ত করেছে; ফলে ভারতবিরোধী অবস্থান এখনো ভোটের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। নির্বাচনের মাধ্যমে যদি উগ্র রাজনৈতিক শক্তি আরও শক্তিশালী হয়, তবে তা নয়াদিল্লির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে বাইবেলের বৈশ্বিক যাত্রা, লক্ষ্য দুই হাজার তেত্রিশ

হিন্দুস্থান টাইমস: বিএনপি ভারতের প্রতি অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে

০১:০২:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম সাধারণ নির্বাচন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এই ঘোষণা স্পষ্ট করেছে যে তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে। তবে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না, কারণ নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রবণতা বলছে, সর্বাধিক আসন পেতে পারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি); তাদের পরেই থাকতে পারে জামায়াতে ইসলামী। শেখ হাসিনা সরকারের সময় নিষিদ্ধ থাকা জামায়াত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর আবার সক্রিয় হয়েছে। ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারগুলোর ইসলামপন্থী ও উগ্রপন্থী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রত্যাহার করায় এই পুনরুজ্জীবন সহজ হয়েছে।

২০২৪ সালের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন ছাত্রনেতার উদ্যোগে গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) এখনো কার্যকর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচকেরা দাবি করেন, নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করাসহ তাঁর কিছু সিদ্ধান্ত ছাত্রদের রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছিল। বাস্তবতা হলো, এনসিপি বিএনপি ও জামায়াত—উভয়ের তুলনায় দুর্বল ফল করারই সম্ভাবনা রাখে।

নির্বাচনের পাশাপাশি ভোটাররা ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে একটি গণভোটে অংশ নেবেন। রাজনৈতিক দলগুলো ও অন্তর্বর্তী সরকার মিলে চূড়ান্ত করা এই ঘোষণায় সংবিধানিক, নির্বাচনী ও প্রশাসনিক সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের সীমা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদার এবং মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ। তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সময়সূচি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের বক্তব্য, তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন ‘ন্যায্য ও স্বাভাবিক পরিবেশ’ নিশ্চিত করতে পারবে না। দলটি আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও, শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশ দেশ ছেড়ে যাওয়ায় রাজপথে তারা কতটা শক্তি দেখাতে পারবে, তা অনিশ্চিত। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসন দলটির জনসমর্থন ক্ষুণ্ন করেছে, যদিও তাদের একটি নিবেদিত কর্মীভিত্তি এখনো রয়েছে।

ব্যাপক সহিংসতায় ক্ষতবিক্ষত দেশের জন্য এই নির্বাচন এক ধরনের সান্ত্বনা হয়ে উঠতে পারে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। সমাজে বিভাজনও গভীর। তবু অনেকের মতে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার এসব সমস্যা মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনায় বেশি সক্ষম হবে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ সমালোচকদের কাছে এমন ক্ষেত্রেও হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, যা নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।

তবে নির্বাচন ঘোষণাটি ভারতের জন্যও এক ধরনের দ্বিধা তৈরি করেছে। ভারত বরাবরই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানাতে হলেও, দিল্লিকে ভাবতে হবে আরও ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রশ্নে তারা কতটা অনড় থাকবে। একই সঙ্গে ঢাকার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবিও উঠেছে। ২০২৪ সালের সহিংসতা নিয়ে একটি ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর এ বিষয়ে ‘পর্যালোচনা চলছে’ বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

এদিকে ঢাকায় সম্ভাব্য বিএনপি-নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তুতি নেওয়া ভারতের জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে। বিশেষত ভারতের প্রতি বিএনপির অতীত বৈরিতা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহে সমর্থন জোগানো শক্তির সঙ্গে দলটির আগের যোগাযোগের ইতিহাস বিবেচনায় রেখে। যদিও বিএনপি নেতারা ভারতের প্রতি অবস্থানে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা নতুন সূচনার আশা জাগায়। তবু সতর্ক থাকার কারণও কম নয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো অতীতে আওয়ামী লীগকে ‘ভারতঘেঁষা’ বলে অভিযুক্ত করেছে; ফলে ভারতবিরোধী অবস্থান এখনো ভোটের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। নির্বাচনের মাধ্যমে যদি উগ্র রাজনৈতিক শক্তি আরও শক্তিশালী হয়, তবে তা নয়াদিল্লির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে।