নির্বাচনের প্রাক্কালে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা আব্বাস। তাঁর দাবি, এটি একটি বড় ষড়যন্ত্রের ছোট অংশ, যার আরও দিক সামনে আসবে।
ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ও ধারাবাহিক হামলার প্রসঙ্গ
শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, এটি কোনো একক ঘটনা নয়। এর আগে চট্টগ্রামে এরশাদ উল্লাহর ওপর হামলা হয়েছে, এবার ঢাকায় হাদির ওপর হামলা। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার ইঙ্গিত মিলছে। তিনি বলেন, সামনে আরও ষড়যন্ত্র প্রকাশ পাবে।
প্রতিবাদ সমাবেশ ও দাবিদাওয়া
হাদি ও এরশাদ উল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং দ্রুত বিচার দাবিতে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ সিটি ইউনিট এই সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে মির্জা আব্বাস বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। তিনি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং সতর্ক করেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের শক্ত জবাব দিতে হবে।
পরিকল্পিত হামলার দাবি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দাবি করেন, হামলাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, দুপুর দুইটার দিকে হাদিকে গুলি করা হয় এবং আধা ঘণ্টার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে একত্রিত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আহ্বান দেখা যায়। এতে প্রমাণ হয়, পুরো ঘটনাই সাজানো।
হাদির অবস্থা ও নির্বাচনী প্রেক্ষাপট
১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার একদিন পর ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। নির্বাচন কমিশন ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন নির্ধারণ করেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন; তাঁর মাথায় গুলির আঘাত লেগেছে। তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
আগের হামলার উদাহরণ
এর আগে গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রচারণার সময় বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও গুলিবিদ্ধ হন।
ঢামেকে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ও অভিযোগ
মির্জা আব্বাস জানান, আহত হাদিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে তিনি আক্রমণাত্মক স্লোগানের মুখে পড়েন। তাঁর দাবি, ওই স্লোগানকারীরা হাদির সমর্থক নন; তারা অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা। তিনি অভিযোগ করেন, চিকিৎসা ব্যাহত করে হাদির মৃত্যু কামনার উদ্দেশ্যেই এসব করা হয়েছিল।
ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা
হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ওসমান হাদি তাঁর কাছে সন্তানের মতো। গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তাঁর মতে, এটি গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ।
গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি
তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক, তিনি কারও মৃত্যু কামনা করেন না। তবে সহিংসতা ও উসকানির সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করতে হবে। হাদির ওপর হামলাকারীদের দ্রুত আটক এবং নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানান তিনি।
নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রসঙ্গে মন্তব্য
ওসমান হাদিকে সাহসী রাজপথের কর্মী আখ্যা দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, তিনি তাঁর শত্রু নন, প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি আশা প্রকাশ করেন, হাদি দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হবেন।
মিছিল ও কর্মসূচির সমাপ্তি
সমাবেশ শেষে নয়াপল্টন থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিজয়নগর ও ফকিরাপুল ঘুরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















