উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার মরুভূমিতে ঘেরা বন্দিশিবিরে আজও নিঃশব্দে টিকে আছে আইএসের প্রভাব, যেখানে হাজারো নারী ও শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার অন্ধকারে আটকে।
আল হোল ও রোজ শিবিরের বাস্তবতা
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা আল হোল ও রোজ বন্দিশিবিরে এখন আইএস যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে সাতাশ হাজারের বেশি মানুষ বাস করছে। শিবির কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, এই দুই শিবিরের প্রায় ছয় দশমিক শূন্য শতাংশই শিশু, যাদের বেশিরভাগই জন্মের পর থেকেই বন্দি জীবনে বেড়ে উঠছে।

যুদ্ধের উত্তরাধিকার
এক সময় সিরিয়া ও ইরাকের বড় অংশ দখলে রেখে আইএস তাদের কঠোর মতাদর্শ চাপিয়ে দিয়েছিল। পরে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযানে আইএস পরাজিত হলেও, যোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে আটক রেখে তৈরি হয় এই শিবিরগুলো। কাছাকাছি কারাগারে এখনো আট হাজারের বেশি আইএস যোদ্ধা বন্দি।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া এবং সিরিয়ার নতুন সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের আলোচনা শিবিরগুলোতে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। কুর্দি প্রশাসনের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে, নতুন সরকার আইএসের বিরুদ্ধে কতটা কঠোর থাকবে তা নিয়ে। যদিও সরকার প্রকাশ্যে আইএসবিরোধী অবস্থান নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক জোটে যুক্ত হয়েছে, তবু সাম্প্রতিক হামলা প্রমাণ করছে আইএস এখনো সক্রিয়।

শিশুদের লক্ষ্য করে গোপন প্রচার
শিবির প্রশাসকদের অভিযোগ, আইএসের সক্রিয় সদস্যরা ভেতরে থেকেই শিশুদের উগ্র মতাদর্শে দীক্ষিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মায়েদের মাধ্যমেই এই চিন্তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ছে বলে তারা সতর্ক করেছেন। দীর্ঘদিন স্কুল, চিকিৎসা ও স্বাভাবিক পরিবেশের বাইরে বেড়ে ওঠা শিশুদের মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি গভীর হচ্ছে।
দুরবস্থা ও সহিংসতা
পানি, খাবার ও চিকিৎসা সহায়তা কমে যাওয়ায় শিবিরে অসন্তোষ, সহিংসতা ও পালানোর চেষ্টা বেড়েছে। অস্ত্র পাচার, গোপন পালানোর নেটওয়ার্ক এবং মাঝে মাঝে বিস্ফোরণের হুমকিও পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। শিবির কর্তৃপক্ষ বলছে, জনসংখ্যা কমানো ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।

ফেরার পথ বন্ধ
অনেক নারী ও শিশু নিজ নিজ দেশে ফিরতে চাইলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে বহু দেশ তাদের নিতে অনিচ্ছুক। ইরাক ও সিরিয়া ধীরে ধীরে নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও অগ্রগতি সীমিত। ফলে হাজারো পরিবার এখনো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অপেক্ষায়।



সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















