ক্যারিবীয় সাগরে সন্দেহভাজন নৌকায় হামলায় অন্তত সাতাশি জনের মৃত্যুর পর ওয়াশিংটনে প্রশ্নের ঝড়। যাদের হত্যা করা হলো, তাদের পরিচয় সম্পর্কে আমেরিকার গোয়েন্দারা আসলে কতটা নিশ্চিত ছিল—এই প্রশ্নেই ঘনীভূত বিতর্ক।
গোপন ভবন, প্রকাশ্য বিতর্ক
ফ্লোরিডার কি ওয়েস্টের প্রান্তে তালঘেরা একটি বেজ রঙা ভবন বাইরে থেকে সাদামাটা। কিন্তু ভেতরে বসেই ক্যারিবীয় ও লাতিন আমেরিকাজুড়ে মাদক পাচারের গোয়েন্দা ছবি জোড়া লাগানো হয়। এই যৌথ আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও ফেডারেল সংস্থার তথ্য একত্র করে সন্দেহভাজন নৌকা শনাক্ত করে। বছরের পর বছর নীরবে কাজ করা এই কাঠামো হঠাৎ আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে নৌকায় বোমা হামলার সিদ্ধান্ত ঘিরে।

হামলার সিদ্ধান্তে তথ্যের ভরসা
রাডার, নজরদারি বিমান আর রেডিও কথোপকথনের সংকেত ধরে নৌকার গতিপথ ধরা হয়। সঙ্গে যোগ হয় মাঠপর্যায়ের মানবসূত্রের ইঙ্গিত। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—নৌকায় কারা ছিল, তা কি হামলার আগে নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব? অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বলছেন, আটক না করা পর্যন্ত যাত্রীদের নাম জানা প্রায় অসম্ভব। অনেক সময় আচরণ ও গতিবিধির ছক মিলিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সন্দেহ বনাম নিশ্চিততা
ড্রোন আর সংকেত নজরদারির যুগে কতটা প্রমাণে প্রাণঘাতী হামলা চালানো হবে, সেটিই আসল বিতর্ক। অতীতে বেসামরিক ক্ষতির আশঙ্কায় কঠোর মানদণ্ড আরোপ করা হয়েছিল। সমালোচকদের আশঙ্কা, বর্তমান নীতিতে সেই সতর্কতা শিথিল। দ্রুতগামী শক্তিশালী ইঞ্জিনের নৌকা দেখলেই সেটিকে ‘যথেষ্ট’ প্রমাণ ধরা হচ্ছে কি না—এ প্রশ্ন ঘুরছে পেন্টাগন থেকে কংগ্রেস পর্যন্ত।

মিত্রদের অস্বস্তি ও কংগ্রেসের চাপ
আন্তর্জাতিক আইন ভাঙার আশঙ্কায় মিত্রদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কংগ্রেসের উভয় দলে দাবি উঠেছে, হামলার পূর্ণ ভিডিও প্রকাশ করা হোক। প্রশাসনের যুক্তি, এতে গোয়েন্দা পদ্ধতি ফাঁস হতে পারে। ফলে স্বচ্ছতার দাবি আর নিরাপত্তার যুক্তির টানাপোড়েন আরও বেড়েছে।
ঝাপসা সত্যের মুখোমুখি
যে অভিযানের ভিত্তি ‘স্পষ্ট তথ্য’ বলা হচ্ছে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার ছবিই যেন আরও অস্পষ্ট। নৌকা হামলায় নিহতদের পরিচয় নিয়ে নিশ্চিততার অভাবই আজ আমেরিকার মাদকযুদ্ধের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















