ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় ভারতীয় মিশনের বাইরে বিক্ষোভ এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীর ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার দিল্লির সাউথ ব্লকে যৌথ সচিব বি শ্যামের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে একটি আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি এবং ভারতীয় মিশনের আশপাশে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরির ঘোষণায় ভারতের তীব্র উদ্বেগ স্পষ্টভাবে জানানো হয়।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন
এই ঘটনাকে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আরেকটি নিম্নবিন্দু হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বছর শিক্ষার্থী নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং আগস্টে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক চাপে রয়েছে। সাম্প্রতিক দিনে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের আশপাশে বিক্ষোভের পরিকল্পনার তথ্য সামনে আসায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কূটনৈতিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থিত সব বিদেশি মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। ভারত আশা করছে, বাংলাদেশ সরকার এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
উসকানিমূলক বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনা
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর সাম্প্রতিক বক্তব্য এই তলবের অন্যতম কারণ। ঢাকায় এক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ চাইলে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে আশ্রয় দিতে পারে এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব। এই বক্তব্যকে ভারতের পক্ষ থেকে উসকানিমূলক ও বিপজ্জনক হিসেবে দেখা হয়েছে।
ওসমান হাদীকে ঘিরে অভিযোগ ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া
উক্ত বক্তব্যটি দেওয়া হয় ইনকিলাব মঞ্চের এক অনুষ্ঠানে, যার নেতা শরীফ ওসমান হাদী সম্প্রতি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। এই ঘটনাকে ঘিরে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক নেতা পরোক্ষভাবে ভারতের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দিলেও কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। ভারত এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
অতীত প্রেক্ষাপট ও ভারতের অবস্থান
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, অতীতে বাংলাদেশের কিছু সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম উপেক্ষা করলেও শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ভারত স্পষ্ট করেছে, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কার্যক্রমে তার ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি এবং ভবিষ্যতেও দেওয়া হবে না।
সংখ্যালঘু ও চরমপন্থা নিয়ে উদ্বেগ
গত এক বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন এবং চরমপন্থী শক্তির পুনরুত্থান নিয়েও উদ্বেগ জানিয়ে আসছে ভারত। এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আস্থার সংকট আরও গভীর করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকায় ভারতীয় মিশনের নিরাপত্তা ইস্যু দুই দেশের সম্পর্কের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে, যা আগামী দিনে কূটনৈতিক সম্পর্কের গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















