০৩:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪১) নির্বাচন নিয়ে ভারতের ‘নসিহতে’ বাংলাদেশের তীব্র প্রতিক্রিয়া কেন? স্যাচুরেটেড চর্বি নিয়ে বিতর্ক: স্বাস্থ্যঝুঁকি নাকি ভুল বোঝাবুঝি জরিপ: জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট একের পর এক দেশে রাজনীতি ওলটপালট করছে জুলাইযোদ্ধাদের মৃত্যু ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সামান্তা শারমিন ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২৪০ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ১ রাজধানীর আবাসিক হোটেল থেকে জাতীয় পার্টির নেতার মরদেহ উদ্ধার জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেই স্বাভাবিক জীবন চলবে: পুলিশকে নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের বরিশালে তিন ঘণ্টায় তিন লাশ, আতঙ্কে নগরী ও আশপাশের এলাকা এনসিপি নেত্রী জান্নাতারা রুমির মৃত্যু: সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশের প্রাথমিক তথ্য

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান, বিনা পারিশ্রমিকে সৃষ্টিশীল শ্রম ও নতুন সংকট

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই আজ প্রযুক্তি দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত শক্তি। লেখা, ছবি, গান, কোড—সব কিছুই মুহূর্তে তৈরি করে দিচ্ছে এই প্রযুক্তি। কিন্তু এই বিস্ময়ের আড়ালে জমে উঠছে গভীর এক সংকট। এআই যেসব তথ্য আর সৃষ্টিশীল কাজের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে থাকা মানুষগুলো পাচ্ছেন না ন্যায্য স্বীকৃতি বা পারিশ্রমিক। এই বৈষম্যই এখন বিশ্বজুড়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।

এআইয়ের অদৃশ্য শ্রমিকরা
এআই মডেলগুলো তৈরি হয়েছে অসংখ্য লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী, সংগীতশিল্পী, আলোকচিত্রী ও প্রোগ্রামারের কাজের ওপর ভর করে। এই সৃষ্টিশীল মানুষদের কাজ প্রকাশ্যে থাকলেও তাদের অনুমতি ছাড়াই সেই কনটেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে প্রশিক্ষণের কাজে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল মুনাফা করলেও এই মানুষগুলো রয়ে গেছেন অদৃশ্য শ্রমিক হিসেবেই। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে সৃষ্টিশীল মহলে।

প্রতিবাদের বিস্তার
এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে জোরালো প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। হাজার হাজার অভিনেতা, লেখক ও সংগীতশিল্পী একত্র হয়ে সতর্ক করেছেন যে অনুমতি ছাড়া এআই প্রশিক্ষণ তাদের জীবিকা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বড় বড় সংবাদমাধ্যম, প্রকাশনা সংস্থা ও বিনোদন প্রতিষ্ঠানও আইনি পথে হাঁটছে। মামলা আর অভিযোগে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এই দ্বন্দ্ব শুধু অর্থনৈতিক নয়, নৈতিকও।

বাজার বনাম জনস্বার্থ
এই সংকট মোকাবিলায় দুটি পথ নিয়ে আলোচনা চলছে। একদিকে রয়েছে কপিরাইট আইন আরও কঠোর করার প্রস্তাব। অন্যদিকে আছে সৃষ্টিশীল জ্ঞানকে জনসম্পদ হিসেবে দেখার ধারণা। অনেক বিশ্লেষকের মতে, তথ্য ও জ্ঞান এমন এক সম্পদ যা পুরোপুরি ব্যক্তিমালিকানায় বেঁধে রাখা যায় না। ডিজিটাল যুগে এর নকল খরচ প্রায় শূন্য, তাই শুধু বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে বৈষম্য বাড়ে।

সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন
এ কারণে নতুন করে জোর পাচ্ছে সরকারি সহায়তার ধারণা। যেমনভাবে সড়ক, গবেষণা বা গণমাধ্যমে রাষ্ট্র বিনিয়োগ করে, তেমনভাবেই সৃষ্টিশীল কাজের পেছনেও স্থায়ী অর্থায়ন দরকার। এতে একদিকে শিল্পীরা আর্থিক নিরাপত্তা পাবেন, অন্যদিকে সমাজ পাবে বৈচিত্র্যময় ও সাহসী সৃষ্টিকর্ম। ইতিহাস বলছে, এমন মডেল থেকে বিশ্বমানের কাজ জন্ম নিয়েছে এবং জনগণই হয়েছে তার মূল উপকারভোগী।

এআই যুগে নতুন সামাজিক চুক্তি
এআই যত বেশি মানবসৃষ্ট কনটেন্ট ব্যবহার করছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে যে শিল্প ও সংস্কৃতির মূল্য বেড়েছে নতুন মাত্রায়। অথচ অনেক দেশে শিল্পীদের জন্য সরকারি সহায়তা কমছে। এই বৈপরীত্য দূর করতে হলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের একটি অংশ সৃষ্টিশীল খাতে ফেরত দেওয়ার কথাও আলোচনায় আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই যুগে সমাজকে নতুন এক ভারসাম্যের দিকে যেতে হবে, যেখানে প্রযুক্তির সুবিধা যেমন থাকবে, তেমনি সৃষ্টিশীল মানুষের ন্যায্য অধিকারও নিশ্চিত হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪১)

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান, বিনা পারিশ্রমিকে সৃষ্টিশীল শ্রম ও নতুন সংকট

০৪:৩৭:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই আজ প্রযুক্তি দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত শক্তি। লেখা, ছবি, গান, কোড—সব কিছুই মুহূর্তে তৈরি করে দিচ্ছে এই প্রযুক্তি। কিন্তু এই বিস্ময়ের আড়ালে জমে উঠছে গভীর এক সংকট। এআই যেসব তথ্য আর সৃষ্টিশীল কাজের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে থাকা মানুষগুলো পাচ্ছেন না ন্যায্য স্বীকৃতি বা পারিশ্রমিক। এই বৈষম্যই এখন বিশ্বজুড়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।

এআইয়ের অদৃশ্য শ্রমিকরা
এআই মডেলগুলো তৈরি হয়েছে অসংখ্য লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী, সংগীতশিল্পী, আলোকচিত্রী ও প্রোগ্রামারের কাজের ওপর ভর করে। এই সৃষ্টিশীল মানুষদের কাজ প্রকাশ্যে থাকলেও তাদের অনুমতি ছাড়াই সেই কনটেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে প্রশিক্ষণের কাজে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল মুনাফা করলেও এই মানুষগুলো রয়ে গেছেন অদৃশ্য শ্রমিক হিসেবেই। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে সৃষ্টিশীল মহলে।

প্রতিবাদের বিস্তার
এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে জোরালো প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। হাজার হাজার অভিনেতা, লেখক ও সংগীতশিল্পী একত্র হয়ে সতর্ক করেছেন যে অনুমতি ছাড়া এআই প্রশিক্ষণ তাদের জীবিকা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বড় বড় সংবাদমাধ্যম, প্রকাশনা সংস্থা ও বিনোদন প্রতিষ্ঠানও আইনি পথে হাঁটছে। মামলা আর অভিযোগে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এই দ্বন্দ্ব শুধু অর্থনৈতিক নয়, নৈতিকও।

বাজার বনাম জনস্বার্থ
এই সংকট মোকাবিলায় দুটি পথ নিয়ে আলোচনা চলছে। একদিকে রয়েছে কপিরাইট আইন আরও কঠোর করার প্রস্তাব। অন্যদিকে আছে সৃষ্টিশীল জ্ঞানকে জনসম্পদ হিসেবে দেখার ধারণা। অনেক বিশ্লেষকের মতে, তথ্য ও জ্ঞান এমন এক সম্পদ যা পুরোপুরি ব্যক্তিমালিকানায় বেঁধে রাখা যায় না। ডিজিটাল যুগে এর নকল খরচ প্রায় শূন্য, তাই শুধু বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে বৈষম্য বাড়ে।

সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন
এ কারণে নতুন করে জোর পাচ্ছে সরকারি সহায়তার ধারণা। যেমনভাবে সড়ক, গবেষণা বা গণমাধ্যমে রাষ্ট্র বিনিয়োগ করে, তেমনভাবেই সৃষ্টিশীল কাজের পেছনেও স্থায়ী অর্থায়ন দরকার। এতে একদিকে শিল্পীরা আর্থিক নিরাপত্তা পাবেন, অন্যদিকে সমাজ পাবে বৈচিত্র্যময় ও সাহসী সৃষ্টিকর্ম। ইতিহাস বলছে, এমন মডেল থেকে বিশ্বমানের কাজ জন্ম নিয়েছে এবং জনগণই হয়েছে তার মূল উপকারভোগী।

এআই যুগে নতুন সামাজিক চুক্তি
এআই যত বেশি মানবসৃষ্ট কনটেন্ট ব্যবহার করছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে যে শিল্প ও সংস্কৃতির মূল্য বেড়েছে নতুন মাত্রায়। অথচ অনেক দেশে শিল্পীদের জন্য সরকারি সহায়তা কমছে। এই বৈপরীত্য দূর করতে হলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের একটি অংশ সৃষ্টিশীল খাতে ফেরত দেওয়ার কথাও আলোচনায় আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই যুগে সমাজকে নতুন এক ভারসাম্যের দিকে যেতে হবে, যেখানে প্রযুক্তির সুবিধা যেমন থাকবে, তেমনি সৃষ্টিশীল মানুষের ন্যায্য অধিকারও নিশ্চিত হবে।