প্রায় একশ বছর পর আবারও সৌদি আরবের মরুভূমিতে ফিরে এল ‘উটপাখি’ নামে পরিচিত বিরল এক প্রজাতির পাখি। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান রয়্যাল রিজার্ভে লাল-ঘাড় উটপাখি পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে দেশটির প্রাকৃতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচিতে যুক্ত হলো নতুন এক মাইলফলক।
এক সময় আরব উপদ্বীপজুড়ে বিস্তৃত ছিল আরবীয় উটপাখি। তবে বিশ শতকের শুরুতেই অতিরিক্ত শিকার ও আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এই প্রজাতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেই শূন্যতা পূরণে এবার তাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী জিনগত আত্মীয় লাল-ঘাড় উটপাখিকে বেছে নেওয়া হয়েছে, যা মরু পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম এবং জৈবিক দিক থেকেও প্রায় একই রকম।
প্রাথমিকভাবে পাঁচটি লাল-ঘাড় উটপাখিকে রিজার্ভ এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বোর্ড অনুমোদিত এই পুনঃবন্যায়ন কর্মসূচির লক্ষ্য হলো প্রায় চব্বিশ হাজার পাঁচশ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত স্থল ও সামুদ্রিক অঞ্চলের ঐতিহাসিক জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা। এই উটপাখি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে রিজার্ভে এখন পর্যন্ত বারোটি বিলুপ্ত বা হারিয়ে যাওয়া স্থানীয় প্রজাতি পুনঃপ্রবর্তন করা হলো, যেখানে মোট লক্ষ্য তেইশটি প্রজাতি ফিরিয়ে আনা।
প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান রয়্যাল রিজার্ভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু জালৌমিস বলেন, বড় আকারের তৃণভোজী ও উদ্ভিদভোজী প্রাণী ছাড়া মরু বাস্তুতন্ত্র কখনোই পূর্ণতা পায় না। তাঁর মতে, হারিয়ে যাওয়া প্রজাতি বা তাদের পরিবেশগত সমতুল্য প্রাণী ফিরে না এলে প্রকৃত পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। উটপাখির প্রত্যাবর্তন তাই সৌদি আরবের জাতীয় প্রজনন ও পুনরুদ্ধার কর্মসূচির জন্য একটি ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে।

এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে জাতীয় বন্যপ্রাণী কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজকীয় রিজার্ভের সহযোগিতায়। একই সঙ্গে এটি ভিশন দুই হাজার ত্রিশ ও সৌদি গ্রিন ইনিশিয়েটিভের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে, যেখানে দুই হাজার ত্রিশ সালের মধ্যে দেশের স্থল ও সমুদ্রের ত্রিশ শতাংশ সংরক্ষণের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণও এই পাখির ঐতিহাসিক উপস্থিতির কথা বলে। রিজার্ভ এলাকায় পাওয়া প্রাচীন বালুকাপাথরের শিলালিপিতে উটপাখির পাল ও শিকারের দৃশ্য খোদাই করা রয়েছে, যা এই অঞ্চলে তাদের গভীর শিকড়ের সাক্ষ্য দেয় এবং বর্তমান পুনরুদ্ধার কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
বর্তমানে বন্য লাল-ঘাড় উটপাখি চরম বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের কিছু অংশে এক হাজারেরও কম উটপাখি টিকে আছে। পরিবেশ প্রকৌশলী হিসেবে এই পাখির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা বীজ ছড়িয়ে দেওয়া, পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ এবং তৃণভূমির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান রয়্যাল রিজার্ভে আগ্নেয় শিলা অঞ্চল থেকে শুরু করে লোহিত সাগরের উপকূল পর্যন্ত বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্র রয়েছে। দেশের মোট ভূমির মাত্র এক শতাংশের একটু বেশি জায়গা জুড়ে হলেও এখানে সৌদি আরবে নথিভুক্ত অর্ধেকেরও বেশি প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ বাস করে।
#সৌদিআরব #উটপাখি #মরুভূমিরপ্রাণী #জীববৈচিত্র্য #প্রকৃতিপুনরুদ্ধার #ভিশনদুইহাজারত্রিশ #সৌদিগ্রিনইনিশিয়েটিভ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















