০২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
দুবাইয়ের বেসরকারি স্কুলে শুক্রবার নতুন সময়সূচি, সাড়ে এগারোটায় ছুটি ময়মনসিংহে গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি থেকে লাফ, আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু পঞ্চগড়ে নিখোঁজ পুলিশ কনস্টেবলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হাটহাজারীতে গভীর রাতে হামলা দিবালোকে কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন ক্রিপ্টো বাজারে ধস কেন থামছে না সংস্কৃতির সংকটেই কি আটকে ভবিষ্যৎ প্রাচীন মিসরের ডিএনএ খুলে দিল নতুন ইতিহাসের দরজা, পিরামিড যুগে পশ্চিম এশিয়ার ছাপ প্রাচীন ডিএনএ বদলে দিল ইতিহাস প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটন ধারণা ভেঙে নতুন সত্যের মুখোমুখি বিচি হেড নারী বিএনপি নেতার তালাবদ্ধ ঘরে পেট্রল আগুন, ঘুমন্ত শিশুর দগ্ধ মৃত্যুতে স্তব্ধ লক্ষ্মীপুর আরব উদার চিন্তার দীর্ঘ ছায়া ও তার পরিণতি

বন্ডি বিচ হামলার পর অস্ট্রেলিয়ায় অস্ত্র আইন নিয়ে ঐকমত্যে ফাটল, রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্র

অস্ট্রেলিয়ায় বন্ডি বিচে ইহুদি উৎসবে ভয়াবহ হামলার পর দেশটির কঠোর অস্ত্র আইনের প্রশ্নে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ঐকমত্য ভাঙতে শুরু করেছে। হামলার পর প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজি আরও কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানালেও ডানপন্থী জনতাবাদী দল ও রক্ষণশীল রাজনীতিকদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছেন তিনি। ফলে ১৯৯৬ সালের পোর্ট আর্থারের গণহত্যার পর যে জাতীয় ঐক্য দেখা গিয়েছিল, বর্তমান বাস্তবতায় তা আর স্পষ্ট নয় ।

হামলার পর বদলে যাওয়া রাজনৈতিক বাস্তবতা

১৯৯৬ সালে তাসমানিয়ায় ৩৫ জন নিহত হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম কঠোর অস্ত্র আইন কার্যকর করেছিল। কিন্তু প্রায় তিন দশক পর বন্ডি বিচে ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় সেই ঐক্য আর দৃশ্যমান নয়। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাইমন জ্যাকম্যানের মতে, এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের বদলে রাজনীতিতে অনাস্থা ও অসন্তোষই বেশি স্পষ্ট।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নাকি ঘৃণাজনিত অপরাধ

হামলার পর থেকে বিরোধী রক্ষণশীল রাজনীতিক ও কিছু ইহুদি নেতা সরকারের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছেন। তাদের দাবি, অস্ত্র আইন নয়, বরং ঘৃণাজনিত অপরাধ দমনে কঠোর হওয়াই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। তবে আলবানিজি সরকার বলছে, তারা উভয় দিকেই ব্যবস্থা নেবে এবং ঘৃণাভাষণের বিরুদ্ধে নতুন পদক্ষেপের কথাও ঘোষণা করেছে।

লাইসেন্স ব্যবস্থার ফাঁকফোকর

হামলাকারী সাজিদ আকরাম বৈধভাবে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক ছিলেন। অথচ তার পরিবারের একজন সদস্যের বিরুদ্ধে আগেই উগ্রবাদী সংশ্লিষ্টতার তথ্য ছিল। এই ঘটনা অস্ত্র লাইসেন্স প্রদান ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য বিনিময়ের দুর্বলতা স্পষ্ট করেছে। সরকার বলছে, এই ফাঁকফোকর বন্ধ করতেই নতুন সংস্কার জরুরি।

সরকারের প্রস্তাবিত সংস্কার

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, একজন ব্যক্তি কতটি অস্ত্র রাখতে পারবেন এবং কোন ধরনের অস্ত্র বৈধ হবে তা সীমিত করা হবে। জাতীয় অস্ত্র নিবন্ধন চালু, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পটভূমি যাচাই জোরদার, নিয়মিত লাইসেন্স পর্যালোচনা এবং নাগরিকত্ব বাধ্যতামূলক করার কথাও বলেছেন তিনি। পাশাপাশি অবৈধ ও অতিরিক্ত অস্ত্র সরকারিভাবে ফেরত কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বাজার থেকে সরানো যায়।

জনতাবাদীদের প্রতিরোধ ও মেরুকরণ

ডানপন্থী জনতাবাদী দল ওয়ান নেশন এই সংস্কারের বিরোধিতা করে মাঠে নেমেছে। তাদের দাবি, সমস্যা অস্ত্রে নয়, বরং অস্ত্রধারীর মানসিকতায়। এই অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, জনতাবাদী শক্তির উত্থান ভবিষ্যতে অস্ত্র আইন নিয়ে দ্বিদলীয় সমঝোতার সম্ভাবনা আরও দুর্বল করবে।

জনমত কী বলছে

জরিপ বলছে, অধিকাংশ অস্ট্রেলীয় নাগরিক এখনও কঠোর অস্ত্র আইনের পক্ষে। তবু গ্রামীণ এলাকা ও শিকারি গোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তাদের আশঙ্কা, নতুন আইন কৃষক ও বৈধ অস্ত্রধারীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।

মোটের ওপর বন্ডি বিচ হামলা শুধু একটি নিরাপত্তা সংকট নয়, বরং অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে গভীর বিভাজনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। সরকার এই বিভাজন সামাল দিতে পারে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন ।

জনপ্রিয় সংবাদ

দুবাইয়ের বেসরকারি স্কুলে শুক্রবার নতুন সময়সূচি, সাড়ে এগারোটায় ছুটি

বন্ডি বিচ হামলার পর অস্ট্রেলিয়ায় অস্ত্র আইন নিয়ে ঐকমত্যে ফাটল, রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্র

১২:৩৭:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

অস্ট্রেলিয়ায় বন্ডি বিচে ইহুদি উৎসবে ভয়াবহ হামলার পর দেশটির কঠোর অস্ত্র আইনের প্রশ্নে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ঐকমত্য ভাঙতে শুরু করেছে। হামলার পর প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজি আরও কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানালেও ডানপন্থী জনতাবাদী দল ও রক্ষণশীল রাজনীতিকদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছেন তিনি। ফলে ১৯৯৬ সালের পোর্ট আর্থারের গণহত্যার পর যে জাতীয় ঐক্য দেখা গিয়েছিল, বর্তমান বাস্তবতায় তা আর স্পষ্ট নয় ।

হামলার পর বদলে যাওয়া রাজনৈতিক বাস্তবতা

১৯৯৬ সালে তাসমানিয়ায় ৩৫ জন নিহত হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম কঠোর অস্ত্র আইন কার্যকর করেছিল। কিন্তু প্রায় তিন দশক পর বন্ডি বিচে ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় সেই ঐক্য আর দৃশ্যমান নয়। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাইমন জ্যাকম্যানের মতে, এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের বদলে রাজনীতিতে অনাস্থা ও অসন্তোষই বেশি স্পষ্ট।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নাকি ঘৃণাজনিত অপরাধ

হামলার পর থেকে বিরোধী রক্ষণশীল রাজনীতিক ও কিছু ইহুদি নেতা সরকারের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছেন। তাদের দাবি, অস্ত্র আইন নয়, বরং ঘৃণাজনিত অপরাধ দমনে কঠোর হওয়াই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। তবে আলবানিজি সরকার বলছে, তারা উভয় দিকেই ব্যবস্থা নেবে এবং ঘৃণাভাষণের বিরুদ্ধে নতুন পদক্ষেপের কথাও ঘোষণা করেছে।

লাইসেন্স ব্যবস্থার ফাঁকফোকর

হামলাকারী সাজিদ আকরাম বৈধভাবে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক ছিলেন। অথচ তার পরিবারের একজন সদস্যের বিরুদ্ধে আগেই উগ্রবাদী সংশ্লিষ্টতার তথ্য ছিল। এই ঘটনা অস্ত্র লাইসেন্স প্রদান ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য বিনিময়ের দুর্বলতা স্পষ্ট করেছে। সরকার বলছে, এই ফাঁকফোকর বন্ধ করতেই নতুন সংস্কার জরুরি।

সরকারের প্রস্তাবিত সংস্কার

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, একজন ব্যক্তি কতটি অস্ত্র রাখতে পারবেন এবং কোন ধরনের অস্ত্র বৈধ হবে তা সীমিত করা হবে। জাতীয় অস্ত্র নিবন্ধন চালু, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পটভূমি যাচাই জোরদার, নিয়মিত লাইসেন্স পর্যালোচনা এবং নাগরিকত্ব বাধ্যতামূলক করার কথাও বলেছেন তিনি। পাশাপাশি অবৈধ ও অতিরিক্ত অস্ত্র সরকারিভাবে ফেরত কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বাজার থেকে সরানো যায়।

জনতাবাদীদের প্রতিরোধ ও মেরুকরণ

ডানপন্থী জনতাবাদী দল ওয়ান নেশন এই সংস্কারের বিরোধিতা করে মাঠে নেমেছে। তাদের দাবি, সমস্যা অস্ত্রে নয়, বরং অস্ত্রধারীর মানসিকতায়। এই অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, জনতাবাদী শক্তির উত্থান ভবিষ্যতে অস্ত্র আইন নিয়ে দ্বিদলীয় সমঝোতার সম্ভাবনা আরও দুর্বল করবে।

জনমত কী বলছে

জরিপ বলছে, অধিকাংশ অস্ট্রেলীয় নাগরিক এখনও কঠোর অস্ত্র আইনের পক্ষে। তবু গ্রামীণ এলাকা ও শিকারি গোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তাদের আশঙ্কা, নতুন আইন কৃষক ও বৈধ অস্ত্রধারীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।

মোটের ওপর বন্ডি বিচ হামলা শুধু একটি নিরাপত্তা সংকট নয়, বরং অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে গভীর বিভাজনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। সরকার এই বিভাজন সামাল দিতে পারে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন ।