ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পনেরো বছর পর জাপান আবারও পারমাণবিক শক্তির পথে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দুই হাজার ছাব্বিশ সালের শুরুতেই দেশটির নিগাতা প্রদেশে অবস্থিত কাশিওয়াজাকি কারিওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় চালু হওয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। এই কেন্দ্র চালু হলে এটাই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, যা এক কোটিরও বেশি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম।
ফুকুশিমার ক্ষত আর নতুন বাস্তবতা
দুই হাজার এগারো সালের মার্চে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির পর ফুকুশিমা দাইইচি কেন্দ্রে পারমাণবিক দুর্ঘটনা জাপানকে গভীর ধাক্কা দেয়। সেই ঘটনার পর দেশটির সব পারমাণবিক চুল্লি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং কঠোর নিরাপত্তা কাঠামো চালু করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে জনমনে ভয় ও অনাস্থা থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং জ্বালানি নিরাপত্তার চাপ নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে।

কাশিওয়াজাকি কারিওয়ার পুনরারম্ভ
নিগাতা উপকূলে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি উনিশশো পঁচাশি সাল থেকে চালু থাকলেও বহু বছর বন্ধ ছিল। সাতটি চুল্লি নিয়ে গঠিত এই স্থাপনায় প্রথম ধাপে ছয় ও সাত নম্বর ইউনিট চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাদেশিক সরকারের অনুমোদনের পর ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়ানো হবে এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে।
নিরাপত্তা ও স্থানীয় সম্মতি
ফুকুশিমার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন্দ্রটিতে ব্যাপক নিরাপত্তা উন্নয়ন করা হয়েছে। উঁচু সমুদ্রপ্রাচীর, জরুরি বিদ্যুৎ জেনারেটর, অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে। তবুও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মতভেদ রয়ে গেছে। জরিপে দেখা গেছে, নিগাতা প্রদেশে সমর্থন ও বিরোধিতা প্রায় সমান হলেও কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় সমর্থন তুলনামূলক বেশি।
বিদ্যুৎ সংকট ও অর্থনৈতিক হিসাব
জাপানের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহের চাপ বেড়েছে। এই কেন্দ্র চালু হলে বিদ্যুতের দাম স্থিতিশীল হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমবে বলে সরকারের আশা। দুই হাজার পঞ্চাশ সালের কার্বন নিরপেক্ষ লক্ষ্য পূরণে পারমাণবিক শক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্বাস ফেরানোর লড়াই
পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর বিদ্যুৎ কোম্পানির ওপর মানুষের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই আস্থা ফেরাতে স্থানীয় উন্নয়ন তহবিল, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সরাসরি জনসংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্মীরা বলছেন, অতীতের অহংকার থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















