০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
মেটার ‘বিশ্বস্ত’ সংস্থার সহায়তায় আমি নিজেই একটি প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন চালিয়েছি কক্সবাজারে পর্যটকের চাপ, সেবা ব্যবস্থায় চাপ বাড়ছে রাজবংশের হাতে গড়া লিংইন মন্দির শুধু দর্শনের জন্য জন্য নয় সরাসরি ইতিহাস পাঠ বন্য প্রাণীর চলাচলে জীবনরেখা ক্যানোপি সেতু, সুনগাই পিনে নতুন আশার গল্প ঘূর্ণিঝড় দিত্বাহর ধ্বংসযজ্ঞের পর শ্রীলঙ্কার পাশে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ চীনা ঐতিহ্যেই ব্র্যান্ডের নতুন গল্প, বদলাচ্ছে বিপণনের ভাষা দুর্যোগের আগেই পাশে দাঁড়ায় যে মানবতার শক্তি, মালয়েশিয়ায় ইউনাইটেড শিখসের নীরব সেবা থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে উত্তেজনা থামাতে কুয়ালালামপুর বৈঠকের দিকে তাকিয়ে জাপানের পারমাণবিক প্রত্যাবর্তন ফুকুশিমার পনেরো বছর পর আবার চালু হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম কেন্দ্র প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আঘাত: মাইকেল মিলার

মেটার ‘বিশ্বস্ত’ সংস্থার সহায়তায় আমি নিজেই একটি প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন চালিয়েছি

মেটা নিজেই তাদের অভ্যন্তরীণ নথিতে স্বীকার করেছে যে এই ব্যবস্থায় ব্যাপক অপব্যবহার চলছে এবং বহু ক্ষেত্রেই তারা তা সহ্য করেছে। এর ফল হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের ডলার আয় করছে।

নভেম্বর মাসে এক সপ্তাহ ধরে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে এমন সব বিজ্ঞাপন দেখা গেছে, যেখানে একটি কম্পিউটারের সামনে বসা এক ব্যক্তির ওপর নগদ অর্থ ও ক্রিপ্টোকারেন্সির বৃষ্টি হচ্ছে। ওই বিজ্ঞাপনগুলো দর্শকদের জিজ্ঞেস করছিল, তারা কি তাদের টাকার ওপর সাপ্তাহিক ১০ শতাংশ মুনাফা চান। এই হিসাবে বার্ষিক মুনাফার হার দাঁড়ায় ১৪ হাজার শতাংশেরও বেশি, যা বাস্তবসম্মত নয়।

এই বিজ্ঞাপনগুলো মূলত মেটার নীতিমালা পরীক্ষা করছিল, বিশেষ করে দ্রুত ধনী হওয়ার প্রতিশ্রুতিমূলক প্রচারণার বিরুদ্ধে থাকা নিয়মগুলো। তবু বিজ্ঞাপনগুলো চলেছে। মেটা নিজেই যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত ও ব্রাজিলের ২০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারীর ফিডে এসব বিজ্ঞাপন দেখা গেছে।

আমি বিষয়টি জানি, কারণ এই বিজ্ঞাপনগুলো আমি নিজেই তৈরি করেছি। সেগুলো চালিয়েছি এমন বিজ্ঞাপনী সংস্থার সহায়তায়, যেগুলোর নাম প্রকাশ্যে মেটার অফিসিয়াল ‘পার্টনার ডিরেক্টরি’-তে তালিকাভুক্ত ছিল। ওই ডিরেক্টরিতে এসব সংস্থাকে মেটার ‘বিশ্বস্ত বিশেষজ্ঞ’ এবং ‘ব্যাজড পার্টনার’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ বাস্তবে এসব সংস্থার কিছু কিছু নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন চালাতে আগ্রহী ব্যবসার খোঁজে সক্রিয়ভাবে কাজ করে।

এই সংস্থাগুলোর কেউ কেউ গ্রাহকদের বাড়তি সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা দাবি করে, এমন বিশেষ বিজ্ঞাপন অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার দিতে পারবে, যেগুলো মেটার নজরদারি ব্যবস্থায় কিছুটা ছাড় পায়। এসব অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেয় বড় বড় চীনা বিজ্ঞাপনী সংস্থা, যারা চীনে মেটার বিজ্ঞাপন ব্যবসার মূল ভিত্তি। প্রযুক্তি জায়ান্টটির কাছ থেকে তারা বিশেষ সুরক্ষা ভোগ করে।

চীন সরকার তাদের নাগরিকদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ পশ্চিমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিলেও, বিদেশে ওই প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে চীনা ব্যবসার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বড় অংশীদার সংস্থাগুলো প্রায়ই মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করে, যারা চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে পরিচালিত হয় এবং অনেক সময় মেটার ঘোষিত নিয়ম ভেঙে ফেলে।

REVEALED: Meta running fraud and scam adverts generates $16 billion – 10% of total annual Facebook revenue - AML Intelligence

মেটা নিজেই ভেতরে ভেতরে স্বীকার করেছে যে এই ব্যবস্থায় ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে এবং বহু ক্ষেত্রেই তারা তা মেনে নিয়েছে। এর বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর বিপুল রাজস্ব অর্জন করছে। এই বিষয়টি নিয়ে রিপোর্টিংয়ের অংশ হিসেবে আমি নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলাম, একজন বিজ্ঞাপনদাতার পক্ষে মেটার প্রতারণা-বিরোধী নীতিমালা এড়িয়ে যাওয়া কতটা সহজ।

আমার কোনো ইচ্ছাই ছিল না কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কিংবা রয়টার্স প্রতিবেদকদের জন্য নির্ধারিত কঠোর নীতিমালা ভঙ্গ করার। আমি সবকিছুতেই স্বচ্ছ ছিলাম। নিজের আসল নাম ব্যবহার করেছি এবং স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে আমি নিষিদ্ধ ক্রিপ্টোকারেন্সি বিজ্ঞাপন চালাতে চাই।

শুরুতে আমি একটি খুবই সাধারণ ও দুর্বল ওয়েবসাইট তৈরি করি এবং একটি ক্রিপ্টো থিমের প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলি। নাম দিই ‘জেফ হরভিটজ রিসার্চ’। এরপর আমি এমন একটি সংস্থা খুঁজতে শুরু করি, যারা আমাকে বিজ্ঞাপন চালাতে সহায়তা করবে।

অনলাইন মার্কেটাররা যেখানে কালোবাজারি পণ্য বিক্রির কৌশল নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে, এমন সন্দেহজনক ডিজিটাল ফোরামে সংস্থার অ্যাকাউন্ট পাওয়া আমাকে অবাক করেনি। কিন্তু মেটার নিজস্ব পার্টনার ডিরেক্টরিতে, যেখানে বলা হয়েছে সংস্থাগুলোকে তাদের দক্ষতার জন্য যাচাই করা হয়েছে, সেখানে এসব সংস্থাকে বিক্রির জন্য পাওয়া সত্যিই বিস্ময়কর ছিল।

আরও অবাক হয়েছি এই দেখে যে, একবার যখন আমি ভুয়া বিজ্ঞাপন চালাতে রাজি এমন সংস্থা পেয়ে গেলাম, তখন মেটার নিজস্ব সিস্টেমই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন উন্নত করার প্রস্তাব দিতে শুরু করল।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমার অনুসন্ধানে ভিয়েতনামভিত্তিক মেটা পার্টনার ব্লুফোকাস এজেন্সির সন্ধান পাই। তারা মেটার সঙ্গে বিশ্বস্ত সম্পর্কের কথা প্রচার করে, তবে সম্ভাব্য গ্রাহকদের জানায় যে তারা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের নিয়ম এড়িয়ে চলার উপায় জানে। ব্লুফোকাসের একজন প্রতিনিধি, যিনি নিজেকে ইসাবেল ট্রান বলে পরিচয় দেন, টেক্সট বার্তায় রয়টার্সকে জানান যে তাদের প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন চালায় না।

WhatsApp Business: Meta's AI & Verification Update | Digital Experience

তবে একদিন পরেই ব্লুফোকাসের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি আমাকে বার্তা পাঠায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরিতে সহায়তার জন্য ৫০০ মার্কিন ডলার প্রস্তাব করা হয়। আমি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি এবং এরপর ব্লুফোকাসের কাছ থেকে আর কোনো বার্তা পাইনি।

মেটার মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন বলেন, মেটার নীতিমালা অনুযায়ী চীনা অংশীদার সংস্থাগুলো, যাদের কেবল নিজস্ব বাজারে কাজ করার কথা, তারা বিদেশি পুনর্বিক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে না। কারণ, অন্যান্য দেশগুলোতে মেটা সাধারণত সরাসরি স্থানীয় সংস্থার সঙ্গে কাজ করে।

রয়টার্স যখন মেটাকে প্রমাণ দেখায় যে তাদের বিজ্ঞাপন নীতিমালা ভাঙার প্রস্তাব দেওয়া সংস্থাগুলোকেও ‘ব্যাজড পার্টনার’ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তখন মেটা তাদের পার্টনার ডিরেক্টরি মুছে ফেলে। একই সঙ্গে জানায়, এসব অংশীদার এবং পুরো কর্মসূচি পর্যালোচনার আওতায় আনা হচ্ছে।

ব্লুফোকাস ছাড়াও আমি হংকংভিত্তিক গ্রিন অরেঞ্জ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করি, যেটিও দ্বিতীয় স্তরের ‘ব্যাজড’ পুনর্বিক্রেতা। পাশাপাশি আমি এস্তোনিয়াভিত্তিক ইউপ্রোসের সঙ্গেও কথা বলি, যারা মেটার ডিরেক্টরিতে তালিকাভুক্ত নয়, তবে অনলাইনে সুরক্ষিত মেটা বিজ্ঞাপন অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার পাওয়ার সুযোগের প্রচার করে।

টেক্সট বার্তার মাধ্যমে এসব পুনর্বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলে তারা সবাই এনক্রিপটেড যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলতে চায়। টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের ওপর তারা জোর দেয়। শুরুতেই তিনটি সংস্থাই জানতে চায়, আমি কি মেটার বিজ্ঞাপন নীতিমালা মানতে চাই।

আমি তাদের জানাই যে আমি নিয়ম মানতে চাই না এবং আমার বিজ্ঞাপনের লেখা পাঠাই। কোনো সংস্থাই এতে আপত্তি জানায়নি।

গ্রিন অরেঞ্জ ও ইউপ্রোস মন্তব্যের জন্য পাঠানো অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেটার ‘বিশ্বস্ত’ সংস্থার সহায়তায় আমি নিজেই একটি প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন চালিয়েছি

মেটার ‘বিশ্বস্ত’ সংস্থার সহায়তায় আমি নিজেই একটি প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন চালিয়েছি

০৮:০০:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

মেটা নিজেই তাদের অভ্যন্তরীণ নথিতে স্বীকার করেছে যে এই ব্যবস্থায় ব্যাপক অপব্যবহার চলছে এবং বহু ক্ষেত্রেই তারা তা সহ্য করেছে। এর ফল হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের ডলার আয় করছে।

নভেম্বর মাসে এক সপ্তাহ ধরে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে এমন সব বিজ্ঞাপন দেখা গেছে, যেখানে একটি কম্পিউটারের সামনে বসা এক ব্যক্তির ওপর নগদ অর্থ ও ক্রিপ্টোকারেন্সির বৃষ্টি হচ্ছে। ওই বিজ্ঞাপনগুলো দর্শকদের জিজ্ঞেস করছিল, তারা কি তাদের টাকার ওপর সাপ্তাহিক ১০ শতাংশ মুনাফা চান। এই হিসাবে বার্ষিক মুনাফার হার দাঁড়ায় ১৪ হাজার শতাংশেরও বেশি, যা বাস্তবসম্মত নয়।

এই বিজ্ঞাপনগুলো মূলত মেটার নীতিমালা পরীক্ষা করছিল, বিশেষ করে দ্রুত ধনী হওয়ার প্রতিশ্রুতিমূলক প্রচারণার বিরুদ্ধে থাকা নিয়মগুলো। তবু বিজ্ঞাপনগুলো চলেছে। মেটা নিজেই যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত ও ব্রাজিলের ২০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারীর ফিডে এসব বিজ্ঞাপন দেখা গেছে।

আমি বিষয়টি জানি, কারণ এই বিজ্ঞাপনগুলো আমি নিজেই তৈরি করেছি। সেগুলো চালিয়েছি এমন বিজ্ঞাপনী সংস্থার সহায়তায়, যেগুলোর নাম প্রকাশ্যে মেটার অফিসিয়াল ‘পার্টনার ডিরেক্টরি’-তে তালিকাভুক্ত ছিল। ওই ডিরেক্টরিতে এসব সংস্থাকে মেটার ‘বিশ্বস্ত বিশেষজ্ঞ’ এবং ‘ব্যাজড পার্টনার’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ বাস্তবে এসব সংস্থার কিছু কিছু নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন চালাতে আগ্রহী ব্যবসার খোঁজে সক্রিয়ভাবে কাজ করে।

এই সংস্থাগুলোর কেউ কেউ গ্রাহকদের বাড়তি সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা দাবি করে, এমন বিশেষ বিজ্ঞাপন অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার দিতে পারবে, যেগুলো মেটার নজরদারি ব্যবস্থায় কিছুটা ছাড় পায়। এসব অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেয় বড় বড় চীনা বিজ্ঞাপনী সংস্থা, যারা চীনে মেটার বিজ্ঞাপন ব্যবসার মূল ভিত্তি। প্রযুক্তি জায়ান্টটির কাছ থেকে তারা বিশেষ সুরক্ষা ভোগ করে।

চীন সরকার তাদের নাগরিকদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ পশ্চিমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিলেও, বিদেশে ওই প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে চীনা ব্যবসার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বড় অংশীদার সংস্থাগুলো প্রায়ই মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করে, যারা চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে পরিচালিত হয় এবং অনেক সময় মেটার ঘোষিত নিয়ম ভেঙে ফেলে।

REVEALED: Meta running fraud and scam adverts generates $16 billion – 10% of total annual Facebook revenue - AML Intelligence

মেটা নিজেই ভেতরে ভেতরে স্বীকার করেছে যে এই ব্যবস্থায় ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে এবং বহু ক্ষেত্রেই তারা তা মেনে নিয়েছে। এর বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর বিপুল রাজস্ব অর্জন করছে। এই বিষয়টি নিয়ে রিপোর্টিংয়ের অংশ হিসেবে আমি নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলাম, একজন বিজ্ঞাপনদাতার পক্ষে মেটার প্রতারণা-বিরোধী নীতিমালা এড়িয়ে যাওয়া কতটা সহজ।

আমার কোনো ইচ্ছাই ছিল না কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কিংবা রয়টার্স প্রতিবেদকদের জন্য নির্ধারিত কঠোর নীতিমালা ভঙ্গ করার। আমি সবকিছুতেই স্বচ্ছ ছিলাম। নিজের আসল নাম ব্যবহার করেছি এবং স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে আমি নিষিদ্ধ ক্রিপ্টোকারেন্সি বিজ্ঞাপন চালাতে চাই।

শুরুতে আমি একটি খুবই সাধারণ ও দুর্বল ওয়েবসাইট তৈরি করি এবং একটি ক্রিপ্টো থিমের প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলি। নাম দিই ‘জেফ হরভিটজ রিসার্চ’। এরপর আমি এমন একটি সংস্থা খুঁজতে শুরু করি, যারা আমাকে বিজ্ঞাপন চালাতে সহায়তা করবে।

অনলাইন মার্কেটাররা যেখানে কালোবাজারি পণ্য বিক্রির কৌশল নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে, এমন সন্দেহজনক ডিজিটাল ফোরামে সংস্থার অ্যাকাউন্ট পাওয়া আমাকে অবাক করেনি। কিন্তু মেটার নিজস্ব পার্টনার ডিরেক্টরিতে, যেখানে বলা হয়েছে সংস্থাগুলোকে তাদের দক্ষতার জন্য যাচাই করা হয়েছে, সেখানে এসব সংস্থাকে বিক্রির জন্য পাওয়া সত্যিই বিস্ময়কর ছিল।

আরও অবাক হয়েছি এই দেখে যে, একবার যখন আমি ভুয়া বিজ্ঞাপন চালাতে রাজি এমন সংস্থা পেয়ে গেলাম, তখন মেটার নিজস্ব সিস্টেমই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন উন্নত করার প্রস্তাব দিতে শুরু করল।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমার অনুসন্ধানে ভিয়েতনামভিত্তিক মেটা পার্টনার ব্লুফোকাস এজেন্সির সন্ধান পাই। তারা মেটার সঙ্গে বিশ্বস্ত সম্পর্কের কথা প্রচার করে, তবে সম্ভাব্য গ্রাহকদের জানায় যে তারা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের নিয়ম এড়িয়ে চলার উপায় জানে। ব্লুফোকাসের একজন প্রতিনিধি, যিনি নিজেকে ইসাবেল ট্রান বলে পরিচয় দেন, টেক্সট বার্তায় রয়টার্সকে জানান যে তাদের প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন চালায় না।

WhatsApp Business: Meta's AI & Verification Update | Digital Experience

তবে একদিন পরেই ব্লুফোকাসের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি আমাকে বার্তা পাঠায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরিতে সহায়তার জন্য ৫০০ মার্কিন ডলার প্রস্তাব করা হয়। আমি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি এবং এরপর ব্লুফোকাসের কাছ থেকে আর কোনো বার্তা পাইনি।

মেটার মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন বলেন, মেটার নীতিমালা অনুযায়ী চীনা অংশীদার সংস্থাগুলো, যাদের কেবল নিজস্ব বাজারে কাজ করার কথা, তারা বিদেশি পুনর্বিক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে না। কারণ, অন্যান্য দেশগুলোতে মেটা সাধারণত সরাসরি স্থানীয় সংস্থার সঙ্গে কাজ করে।

রয়টার্স যখন মেটাকে প্রমাণ দেখায় যে তাদের বিজ্ঞাপন নীতিমালা ভাঙার প্রস্তাব দেওয়া সংস্থাগুলোকেও ‘ব্যাজড পার্টনার’ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তখন মেটা তাদের পার্টনার ডিরেক্টরি মুছে ফেলে। একই সঙ্গে জানায়, এসব অংশীদার এবং পুরো কর্মসূচি পর্যালোচনার আওতায় আনা হচ্ছে।

ব্লুফোকাস ছাড়াও আমি হংকংভিত্তিক গ্রিন অরেঞ্জ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করি, যেটিও দ্বিতীয় স্তরের ‘ব্যাজড’ পুনর্বিক্রেতা। পাশাপাশি আমি এস্তোনিয়াভিত্তিক ইউপ্রোসের সঙ্গেও কথা বলি, যারা মেটার ডিরেক্টরিতে তালিকাভুক্ত নয়, তবে অনলাইনে সুরক্ষিত মেটা বিজ্ঞাপন অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার পাওয়ার সুযোগের প্রচার করে।

টেক্সট বার্তার মাধ্যমে এসব পুনর্বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলে তারা সবাই এনক্রিপটেড যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলতে চায়। টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের ওপর তারা জোর দেয়। শুরুতেই তিনটি সংস্থাই জানতে চায়, আমি কি মেটার বিজ্ঞাপন নীতিমালা মানতে চাই।

আমি তাদের জানাই যে আমি নিয়ম মানতে চাই না এবং আমার বিজ্ঞাপনের লেখা পাঠাই। কোনো সংস্থাই এতে আপত্তি জানায়নি।

গ্রিন অরেঞ্জ ও ইউপ্রোস মন্তব্যের জন্য পাঠানো অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি।