বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বের ভার যেন আর সন্তানের কাঁধে না পড়ে—এই ভাবনাই এখন অনেক আমেরিকান পরিবারকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাবা-মায়ের দেখভালের কঠিন অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বেবি বুমার ও জেনারেশন এক্স প্রজন্ম আগেভাগেই জীবন ও বার্ধক্য পরিকল্পনায় মনোযোগী হচ্ছে। ঘর গুছিয়ে নেওয়া, আইনি কাগজপত্র সাজানো, ভবিষ্যৎ চিকিৎসা ও দেখভালের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই জানিয়ে রাখা—সব মিলিয়ে সন্তানদের ওপর বোঝা কমানোর চেষ্টা স্পষ্ট হয়ে উঠছে
অভিজ্ঞতার ভার থেকেই প্রস্তুতির শুরু
ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেজেন্টনে বসবাসকারী ছিয়াত্তর বছরের জসলিন কম্বস নিজের বাবা-মায়ের দীর্ঘ বার্ধক্যকালীন দেখভালের অভিজ্ঞতা আজও ভুলতে পারেননি। নব্বই পেরোনো বাবা-মায়ের যত্ন, তাঁদের রেখে যাওয়া জিনিসপত্র সামলানো, আর্থিক ও মানসিক চাপ—সবকিছু মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটি ছিল অত্যন্ত কঠিন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি নিজের উইল ও ট্রাস্ট সাজিয়েছেন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নির দায়িত্ব নির্ধারণ করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ পাসওয়ার্ড ও কাগজপত্র এক জায়গায় রেখেছেন। এমনকি নিজের বাড়িতে আলাদা বসবাসযোগ্য অংশ তৈরি করেছেন, যাতে প্রয়োজনে সেখানে সেবাকর্মী থাকতে পারেন বা ভবিষ্যতে আয় নিশ্চিত করা যায়। তাঁর লক্ষ্য একটাই—একজন মাত্র সন্তানের জন্য ভবিষ্যৎকে সহজ করা।

পরিবারে দেখভালের বাস্তব চাপ
সাম্প্রতিক জরিপগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় অর্ধেক পারিবারিক সেবাদাতা নিয়মিতভাবে প্রবীণ বাবা-মা বা প্রতিবন্ধী প্রাপ্তবয়স্কদের দেখভাল করছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দায়িত্ব আরও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে এবং অনেকের ক্ষেত্রেই তা আর্থিক সংকট ডেকে আনছে। আয়ের ঘাটতি, সঞ্চয় ফুরিয়ে যাওয়া কিংবা চাকরি ছাড়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বহু মানুষকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে সংকট তৈরি হওয়ার পর আলোচনা শুরু হতো, এখন মানুষ আগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
খরচ ও সেবাকর্মীর সংকট
প্রবীণ সেবার খরচও বড় উদ্বেগের কারণ। ব্যক্তিগত নার্সিং সেন্টারে থাকার মাসিক ব্যয় অনেকের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে পেশাদার সেবাকর্মীর অভাব বাড়াচ্ছে পরিবারের ওপর চাপ। ফলে দায়িত্ব প্রায়শই পরিবারের একজন সদস্যের ওপরই পড়ে, যা ভাইবোনদের মধ্যে দূরত্ব, মানসিক চাপ ও অপরাধবোধের জন্ম দিচ্ছে।

একজনের কাঁধে সব দায়িত্বের গল্প
বস্টনের বাসিন্দা জোয়ান স্যাভিটের গল্প সেই বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি। শতবর্ষী মায়ের বাড়ি গুছানো, আর্থিক হিসাব সামলানো, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন দেখভাল—সবকিছু একাই করেছেন তিনি। দীর্ঘদিনের এই দায়িত্ব তাঁর স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝেছেন, নিজের সুস্থতা ও মানসিক স্থিতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষা
এমন অভিজ্ঞতাই অনেককে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। আইনি জটিলতা এড়াতে উইল করা, সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা, বাসস্থান ছোট করা বা সম্পত্তি সহজভাবে হস্তান্তরের পরিকল্পনা—এসব সিদ্ধান্ত এখন অনেকের অগ্রাধিকার। উদ্দেশ্য একটাই, ভবিষ্যতে সন্তানদের যেন একই চাপের মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















