আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কয়েকজন আইনপ্রণেতা। তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হলে দেশের বড় একটি অংশের ভোটাধিকার কার্যত ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ
মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস, বিল হুইজেঙ্গা ও সিডনি কামলেজার-ডোভ এ উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, পুরো একটি রাজনৈতিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকারের মৌলিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এই আইনপ্রণেতারা প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপকমিটির সঙ্গে যুক্ত। চিঠিতে তারা জাতীয় সংকটকালে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ভূমিকার প্রশংসা করলেও একটি বড় রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ
চিঠিতে সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলনের পর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ ও তাদের ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরা হয়। আইনপ্রণেতাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করতে পারে।
তারা বলেন, নির্বাচন এমন পরিবেশে হওয়া জরুরি, যেখানে জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপরও জোর দেন তারা।

মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিয়ে সতর্কতা
চিঠিতে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত রাখা কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে নতুন করে এমনভাবে চালু করা, যা আগে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, তা নির্বাচনের লক্ষ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আইনপ্রণেতারা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, সংগঠন করার স্বাধীনতা এবং সমষ্টিগত নয় বরং ব্যক্তিগত অপরাধের ভিত্তিতে বিচার হওয়ার নীতি মানবাধিকারের মৌলিক অংশ। পুরো একটি দলকে দোষারোপ না করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়াই সঠিক পথ বলে তারা মত দেন।
নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় সব দলের অংশগ্রহণের দাবি
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অন্যান্য আইনপ্রণেতাদের মধ্যে জুলি জনসন ও টম সুয়োজিও রয়েছেন। তারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এমন একটি নির্বাচনের যোগ্য, যেখানে সব রাজনৈতিক দল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে এবং জনগণ নিজেরাই নেতৃত্ব বেছে নিতে পারে।
প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই চিঠিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগের সরকারের পতনের পর এটি হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচন, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এখন তীক্ষ্ণ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















